ততেন্দো তাইবু ; রাষ্টীয় নির্যাতনে দেশ ছাড়া এক জিম্বাবুইয়ান কিংবদন্তি!

প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০

ততেন্দো তাইবু জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তি বলা যায়। এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান তার ক্যারিয়ারে অনেক সোনালী ম্যাচ উপহার দিয়েছেন জিম্বাবুয়েকে। আর বাংলাদেশের সাথে তো জিম্বাবুয়ের অসাধারণ সব মুহূর্তের সাক্ষীও ওই ততেন্দো তাইবু।

ততেন্দো তাইবুর কথা তাই বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের ভুলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে অকৃত্রিম বন্ধু জিম্বাবুয়ের ততেন্দো তাইবু বহুবার বাংলাদেশে এসেছেন। ২০০১ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ২২ গজে অভিষেক। মাত্র তিন বছর বাদে জাতীয় দলের অধিনায়ক। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের তাতেন্দা তাইবুই ছিলেন কনিষ্ঠতম ক্রিকেট অধিনায়ক। পরে সেই রেকর্ড চলে যায় আফগানিস্তানের রশিদ খানের দখলে।

২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হন তাইবু। ময়দানে ‘টিবলি’ নামে পরিচিত তাইবু ছিলেন ২২ গজের সবচেয়ে আলোচিত ও বর্ণময় চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের হয়ে ২৮টি টেস্ট, ১৫০টি ওয়ানডে এবং ১৭টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। কিন্তু এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় ২০১২ সালে। মাত্র ২৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানা তিনি। এর পেছনে ক্রিকেটীয় তথ্যের থেকেও বেশি আলোচিত একাধিক বিতর্ক। জিম্বাবুয়ে সরকারের নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে তাকে।
২০১৯ সালে লেখক জ্যাক গর্ডনের সঙ্গে ‘কিপার অফ ফেইথ’ নামের বই লেখেন তাতেন্দা তাইবু। বইয়ে হারারে শহরে জন্ম থেকে ক্রিকেট জীবন এবং জিম্বাবুয়ের রাজনীতিও অনেক মন্তব্য করেন। তাইবু জানান, মাত্র ২৯ বছর বয়সে ক্রিকেট ছেড়ে তিনি গির্জায় চাকরি নেন। এরপর ২০১৬ সালে ব্রিটেনের লিভারপুল শহরে গিয়ে হাইটাউন সেন্ট ম্যারি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সমস্যার শুরু হয়েছিল জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার দুই বছর পর।

ওই সময় জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তাইবু। যে কারণে চাপে পড়ে যায় বোর্ডে থাকা স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ঘনিষ্ঠরা। কারণ, তখন আইসিসি জিম্বাবুয়ে বোর্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল। উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় জিম্বাবুয়ে। সেই থেকে বছরের পর বছর একটানা দেশের ক্ষমতায় ছিলেন রবার্ট মুগাবে। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ৩০ বছর টানা প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার নারীপ্রীতির কথাও বারবার মিডিয়ায় এসেছে।

তাইবু তার বইয়ে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার কারণে তাকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সরকারের উপ-তথ্যমন্ত্রী। প্রথমে টাকার বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাইবু রাজি না হওয়ায় একটি খাম তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই খামের ভেতরে থাকা কাগজে লেখা ছিল, রাষ্ট্রের বিরোধিতা করলে কী হতে পারে। কঠিন ওই সময়ে তাইবুর স্ত্রীকে অপরহণের চেষ্টা করা হয়েছিল। বাড়ির বাইরে সরকারি গাড়ি তার পিছু ধাওয়া করত। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর সদ্যোজাত সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ব্রিটেনে চলে যান তাতেন্দা তাইবু।
এভাবে শেষ হয় এক বর্ণময় এ ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার। যিনি ক্রিকেটকে আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন। তাইবু একবার আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও খেলেছিলেন। এখন তিনি ভিন্ন দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছেন।