ত্রিপুরাদের বর্ষপঞ্জিকে ত্রিপুরাব্দ বলা হয়; খোকনেশ্বর ত্রিপুরা Twipra Jack Twipra Jack প্রকাশিত: ১১:০৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২১ খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির কুমারধন পাড়া,হাদুক পাড়া স্মার্ট ভিলেজ,সিন্দুকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ত্রিং উৎসব-১৪৩২ ত্রিপুরাব্দ পালিত হয়েছে।এ উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।এতে প্রতিপাদ্যের বিষয় ছিল,”চিনি জাতি ন য়াকারই,বেনি জাতি ন তা লাদি”। বুধবার(২২ডিসেম্বর) ১তালহিং(ত্রিপুরাদের নতুন বছরের ১ম দিন)দিনব্যাপি বর্ণিল আয়োজনে ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরা তাদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নতুন বছর(ত্রিপুরাব্দ)কে স্বাগত জানান তারা।এ উপলক্ষে সিন্দুকছড়ি ত্রিপুরা উদীয়মান ক্লাবের আয়োজনে এলাকার কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী লক্ষী নারায়ন মন্দির প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।এদিন নিজস্ব ঐতিহ্যনাহী পোশাকে ত্রিপুরা তরুণ তরুণীরা নিজেদেরকে নতুন সাজে সাজিয়েছেন।এতে সিন্দুকছড়ি ত্রিপুরা উদীয়মান ক্লাবের সভাপতি খন্জয় ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও বিশিষ্ট সমাজসেবক খোকনেশ্বর ত্রিপুরা। সভায় সিন্দুকছড়ি ত্রিপুরা উদীয়মান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কুমার ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাব এর কোষাধ্যক্ষ অমল বিকাশ ত্রিপুরা। আলেচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের সদস্য খোকনেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, ত্রিপুরাদের বর্ষপঞ্জিকে ত্রিপুরাব্দ বলা হয়। এই ত্রিপুরাব্দের সংক্ষিপ্ত রূপই ‘ত্রিং’। এটি খ্রীষ্টাব্দ হতে ৫৯০ বছরের কনিষ্ঠ, শকাব্দ হতে ৫১২ বছরের কনিষ্ঠ এবং বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন হতে ৩ বছরের জ্যেষ্ঠ। অর্থাৎ খ্রীষ্টাব্দ প্রচলন হওয়ার ৫৯০ বছর পর, শকাব্দ প্রচলন হওয়ার ৫১২ বছর পর এবং বঙ্গাব্দ প্রচলন হওয়ার ৩ বছর আগে ত্রিপুরা বর্ষপঞ্জি বা ত্রিপুরাব্দ বা ত্রিং প্রবর্তন করা হয়। তিনি বলেন,১৯৯০ সালে ত্রিপুরা সরকার ত্রিপুরা রাজ্যের রাজস্ব নথিগুলোতে ত্রিপুরাব্দ ব্যবহারের এক আদেশ জারি করে। ত্রিপুরার তৎকালীন গভর্নরের পক্ষে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯০ তারিখে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ত্রিপুরা সরকারের সচিব পি,কে,মাথুর। তিনি আরো বলেন,৫৯০ খ্রীষ্টাব্দ এবং ৫১২ শকাব্দে ত্রিং বা ত্রিপুরাব্দ কিংবা ত্রিপুরা বর্ষপঞ্জির প্রচলন করা হয়। ত্রিপুরার মহারাজাদের ইতিহাস শ্রী শ্রী রাজমালা অনুসারে ১১৮তম ত্রিপুরা মহারাজা হিমতি অথবা হামতরফা বা যুঝারুফা ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী রাজ্য বঙ্গের শাসককে পরাজিত করে কিছু অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে মহারাজ হামতরফা ত্রিপুরাব্দ প্রবর্তন করেন। ৫১২ বছরের জ্যেষ্ঠ এবং তৎকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত শকাব্দের অনুসরনে ত্রিপুরাব্দের মাস ও দিন গণনার রীতি গ্রহণ করা হয়। রাজমালায় এই রাজ্যের নাম বাংলা বলা হলেও ‘বাংলা’ নামটি সেই সময়ে প্রচলন শুরু হয়নি। এমনকি ‘বঙ্গ’ শব্দটিও তেমন প্রচলিত ছিল না। বরং গৌড় নামের একটি সক্রিয় রাজ্যের অস্তিত্ব আমরা এই সময়ে দেখতে পাই, যেটি বঙ্গ-বিহার এলাকার বিস্তর অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত ছিল। রাজমালায় উল্লেখিত বাংলার শাসকের নাম কোন ইতিহাসগ্রন্থে উল্লেখ না থাকলেও এটি ধারণা করা যায় যে, সেই দেশ বা রাজ্যটি ‘গৌড়’ হতে পারে এবং রাজ্যটি যদি গৌড় হয়, তবে সেই পরাজিত রাজা শশাংক ছাড়া আর কেউই নন। ইতিহাসে রাজা শশাংকের সম্ভাব্য রাজত্বকাল ৫৯০ থেকে ৬২৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত বলে ধারণা করা হয়। ত্রিপুরা মহারাজাদের আমলে সমসাময়িক বহু অঞ্চলের ভূপতিগণ ত্রিপুরাব্দকেই স্ট্যান্ডার্ড সন হিসেবে ব্যবহার করতেন। কুমিল্ল, সিলেট, নোয়াখালি, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন দলিল-দস্তাবেজগুলো যাচাই করলে এখনো ত্রিপুরাব্দের তারিখ ও সন পাওয়া যাবে। কিন্তু ১৯৪৯ সালে স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্য ভারত সরকারের অভ্যন্তরে অন্তর্ভূক্তির পর ত্রিপুরাব্দ ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনো ত্রিপুরা রাজ্যের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের বিভিন্ন প্রাচীন দলিল-দস্তাবেজে বিশেষ করে সিলেট, বাহ্মনবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলে ত্রিপুরা সনের উল্লেখ পাওয়া যায়। বক্তব্যের শেষে সিন্দুকছড়ির এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের গতি বাড়ানোর জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবেন এলাকাসীদের প্রতি আশ্বাস ব্যক্ত করেন তিনি।পরে কেক কেটে ১তালহিং ১৪৩২ ত্রিপুরাব্দ উদযাপন করেন হাজার হাজার নানান বয়সী ত্রিপুরা নর-নারীরা। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য-বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক তাপস কুমার ত্রিপুরা,খাগড়াছড়ি পৌর আওয়ালীগের সভাপতি শিশির চাকমা,সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেদাক মারমা,নাক্রাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতি রঞ্জন ত্রিপুরা,কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী লক্ষী নারায়ন মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিল মোহন ত্রিপুরা,ওয়ার্ড মেম্বার সবেনজয় ত্রিপুরা,কার্বারী অংক্যথোয়াই ত্রিপুরা প্রমুখ। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি সদরের গাছবান এলাকায়ও নানান আয়োজনে ত্রিপুরাব্দ পালিত হয়।এদিন গাছবান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে এ উৎসব উদযাপন করা হয়।এতে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সদর আঞ্চলিক শাখার সভাপতি বিপ্লব কান্তি ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাত্রিকস’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শেফালিকা ত্রিপুরা যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা,সাবেক সভাপতি সুরেশ মোহন ত্রিপুরা,খাগড়াছড়ি সদর আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক মিহির কান্তি ত্রিপুরা,অলিন্দ্র ত্রিপুরাসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: