পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস “৩রা মার্চ” Abrar Atik Abrar Atik প্রকাশিত: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২২ কুয়াকাটার গঙ্গামতী এলাকায় আগুন দিয়ে গাছ মেরে ফেলা হয়েছে। বন উজাড়, প্রাকৃতিক কারণে গাছের মৃত্যু ও জোয়ারের উচ্চতায় প্লাবনভূমি বেড়ে যাওয়ায় বিপদে আছে দক্ষিণ উপকূলের বন্য প্রাণী। আবাসস্থল ও খাদ্যসংকটে প্রায়ই এসব বনের প্রাণী লোকালয়ে এসে মারা পড়ছে। এমতাবস্থায় আজ ৩ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস। গত বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট উচ্চ জোয়ারের পানিতে সুন্দরবন ও দক্ষিণ উপকূলের বিভিন্ন বনাঞ্চলে প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরবনে তিনটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে লোকালয়সংলগ্ন বলেশ্বর নদ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি হরিণের পেটে বাচ্চাও ছিল। শুধু সুন্দরবন নয়, পাথরঘাটার হরিণঘাটা, রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপসহ উপকূলের সংরক্ষিত বন থেকে অনেক হরিণ জোয়ারের তোড়ে লোকালয়ে চলে এসেছিল। প্রকৃতির বৈরী আচরণ ও বন উজাড়ের ফলে অন্য বন্য প্রাণীও সংকটে পড়েছে। খাদ্যসংকট ও নিরাপত্তার অভাবে অভয়ারণ্য ছেড়ে প্রাণীগুলো প্রায়ই চলে আসছে লোকালয়ে। অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে বন্য প্রাণীর। অতি উচ্চতার জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় বনের ভেতরে প্রাণীদের আশ্রয়ের জন্য উঁচু ঢিবি তৈরি করার পাশাপাশি মিঠাপানি ও খাবারের সংস্থান বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ এম এ আজিজ বলেন, বনকে বনের মতো থাকতে দিতে হবে। এটা প্রথম ও শেষ কথা। মানুষের মতো বন্য প্রাণীরও কিছু মৌলিক চাহিদা ও প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আবাস ও খাবার। মানুষ আবাস হারালে যেমন উদ্বাস্তু হয়, বন্য প্রাণীরাও তেমনি। বন্য প্রাণীদের ব্যাপারে উদাসীনতার সুযোগ নেই। এগুলো রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। বিপন্ন টেংরাগিরি-হরিণঘাটা বনাঞ্চল সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি। নিশানবাড়িয়া ও সখিনা—দুটি বিট নিয়ে এ বনের আয়তন ১০ হাজার ৬৪৭ একর। টেংরাগিরিতে লবণাক্ত ও মিষ্টি মাটির মিশ্রণের কারণে প্রচুর জাম, ধুন্দুল, কেওড়া, সুন্দরী, করমচা, কেওয়া, তাল, বনকাঁঠাল, রেইনট্রি ও গরানগাছ আছে। বসত গড়েছে কাঠবিড়ালি, বানর, প্রায় ৪০ প্রজাতির সাপ, শজারু, শূকর, উদ, কচ্ছপ, শিয়াল, ডোরাকাটা বাঘ, বনমোরগ, মধু, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এখানে ইকোপার্কের বাসিন্দাদের মধ্যে আছে কুমির, হরিণসহ অন্য অনেক প্রজাতির বন্য প্রাণী। এ বনের ২১ কিলোমিটারজুড়ে প্রতিবছর ভাঙছে। অর্থাৎ, ভাঙনের কারণে ওই এলাকায় বছরে গড়ে ২৫০ মিটার বনের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সাগর। বরগুনার তালতলী উপজেলা থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত এ বন। বন বিভাগের খাতায় ‘টেংরাগিরি বনাঞ্চল’ হলেও স্থানীয়ভাবে এটি ‘ফাতরার বন’ নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে এ নামকরণ করা হয়। তখনকার হিসাব অনুযায়ী, বরগুনার বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে চোখজুড়ানো এ বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। ১৯২৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই তৎকালীন সরকার এটিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করেন।বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় দুই হাজার একর আয়তনের সৃজিত হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনে দেশের সবচেয়ে বড় প্রজাতির চিত্রল হরিণের বসতি। আছে শূকর, অজগরসহ অনেক প্রজাতির পাখি ও বন্য প্রাণী। কিন্তু এ দুটি বনাঞ্চলই একদিকে চোরাই কাঠ পাচারকারীদের হাতে উজাড় হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক কারণে গাছের মৃত্যু ও ভাঙনে আয়তন কমছে। এতে খাদ্যসংকট ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় অহরহ লোকালয়ে চলে আসছে বন্য প্রাণী এবং মারাও পড়ছে। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক লবণাক্ততা ও অধিক উচ্চতার জোয়ারে এসব বনভূমি প্লাবিত হওয়ায় আপদে আছে বনের প্রাণীগুলো। পাথরঘাটা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল হক বলেন, অধিক উচ্চতার জোয়ার হরিণঘাটা বনে প্রবেশ করে। বনের যেসব স্থানে হরিণ, শূকরসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী অবস্থান করে, ওই সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বন্য প্রাণীগুলোর স্বাভাবিক জীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। SHARES পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়: