“ফিরে দেখা ১২ জুন, ২০১৮” News Publisher News Publisher প্রকাশিত: ২:৫৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০ ফিরে দেখা—১২ জুন ২০১৮!!!! আমার জীবনের অনেকগুলো ভুল মিটিয়ে নেয়ার, অনেককে ভুল প্রমাণ করার, অনেক বাকা চাহনির উত্তর দেয়ার একটি দিন। ছোটবেলা থেকেই ক্লাস ১ থেকে ১০ অবধি নিরঙ্কুশ ভাবে বড় ব্যবধানে ক্লাসের ফার্স্ট বয় থাকা, ৫ম, ৭ম, ৮ম সব শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া, এস.এস.সি, এইচ.এস.সি সব পরীক্ষাতেই জিপিএ ফাইভ (সমাজের তখনকার চোখে অনেক ভালো ছাত্র) পাওয়া এই আমি পাকেচক্রে ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজ লাইফের শুরু থেকেই আমি জানতাম আমি ইন্জিনিয়ারিং পড়বো, মেডিকেল পড়বো না কারণ বায়োলজি আমার একদম ভালো লাগতো না। আর ম্যাথ খুব ভালো লাগতো, তাই ইন্জিনিয়ারিং পড়বো ঠিক করি। আমার এই সিদ্ধান্ত আমার বাবা-মা ও পরিবারের অন্যরা সম্ভবত কখনোই পছন্দ করেনি। যথারীতি ইন্জিনিয়ারিং কোচিং করি, মনে হতো বুয়েটে চান্স আমি পাবোই। মেডিকেলে ভর্তি ফরমই ওঠায় নাই!! কিন্তু বুয়েটে আমি ওয়েটিং লিস্টে (সম্ভবত ১১৩০ এর আশেপাশে) চলে যায়। চান্স পায় কুয়েট, এমআইএসটি, টেক্সটাইল (বুটেক্স), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইন্জিনিয়ারিং পড়ার প্যাশন থেকে কুয়েট/ এমআইএসটিতে মূলত ভর্তি হতে চেয়েছিলাম আমি। মানুষের ভুল পরামর্শে আর পাকে চক্রে ভর্তি হয়ে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাও বায়োকেমিস্ট্রি এর মতো বায়োলজিক্যাল সাবজেক্টে!!! লাইফে একের পর এক ভুলের শুরু। না বুঝে ভুল সাবজেক্ট নেয়া, বুয়েটে চান্স না পাওয়ার ব্যর্থতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। কলেজে আমাদের থেকে পিছিয়ে থাকা অনেক বন্ধুরাও অনেকেই যখন মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেলো, নিজে ইন্জিনিয়ারিং এ ভর্তি না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া, সুযোগ থাকার পরও নিজের জন্য সুবিধাজনক সাবজেক্ট বেছে না নেয়া, এসব নিয়ে তখন নিজেকে আমি ক্ষমা করতে পারতাম না কখনো। জীবনটা এলোমেলো লাগতো। সব সময় এসব চিন্তাই মাথার ভিতর ঘুরতো!! সব ভুলে ডিপার্টমেন্টে মনোযোগ দেয়া হতো হয়তো সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু আরও বড়ো ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম (অনেকটা চাপিয়ে দেয়া) ২য় বার মেডিকেলে ভর্তির কোচিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে। কারণ বায়োকেমিস্ট্রিকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারছিলাম না। ২-৩ মাস পর মেডিকেল কোচিং করা ফালতু সময় নষ্ট ছাড়া কিছু মনে হতো না আমার কাছে। যা আমার ভালো লাগতো তা বাদ দিয়ে বায়োলজিক্যাল সায়েন্স এর সাথে মানসিকভাবে কখনোই মানিয়ে নিতে পারতাম না। একেকটি ভুল সিদ্ধান্তে পিছিয়ে পড়ার শুরু। এক পর্যায়ে পড়ালেখার ইচ্ছা টায় চলে যায়। সবকিছুই খারাপ লাগতে শুরু করে। মেডিকেল দূরে থাক বেচে থাকার অনুপ্রেরণাতেই আমার ঘাটতি দেখা দেয়!!! অসহ্য লাগতে শুরু করে সবকিছু। তারপরও বেঁচে থাকতে হবে। সবকিছু বাদ দিয়ে দেয়। পরের ব্যাচের সাথে ডিপার্টমেন্টে কন্টিনিউ করি। ভালো লাগতোনা কখনোই। ইউনিভার্সিটি তে ড্রপ দিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানিয়ে নেয়া টাফ হয়ে যায়। মানসিকভাবে ছোট হয়ে গেছিলাম অনেক। তবে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করি। কিভাবে সব ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করা যায় তার একটি উপায় খুজছিলাম আমি। অনেক রাত হলে আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি!!! ভেবেছি আমার লাইফ ছোট কোন কিছুতে আটকে থাকতে পারে না। ভালো করার অদম্য একটি শক্তি আমার ভিতর জাগতে শুরু করে। হার মেনে নিলেতো হেরেই গেলাম। ঘুরে আমাকে দাড়াতেই হবে। আইবিএ, জি.আর.ই, বিসিএস সব ঘাটাঘাটি করে সিদ্ধান্ত নেয় বিসিএসই দিবো। কারণ অনেক কিছু প্রমাণের বাকী ছিলো। কাছের কিছু লোকের বাকা কথা আমাকে তাতিয়ে দিয়েছিলো ভীষণ। বায়োকেমিস্ট্রির ফিল্ডে নিজের কোন ভালো ভবিষ্যৎ আমি দেখছিলাম না। ডিপার্টমেন্ট হিসাবে বায়োকেমিস্ট্রি খুব ভালো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার জন্য মোটেও ভালো নয়। কারণ সাবজেক্টটিকে আমি কখনোই মন থেকে গ্রহণ করতে পারিনি। হয়তো আমার মতো অনেকে এখনো আছেন!!! ছোটখাটো কিছুতে আমার কখনোই মন ভরতো না। সবসময়ই মনে হতো বড়ো কিছু হওয়ার জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। বিসিএস এর শেষ দেখে নেয়ার একটি দুর্বিনীত ইচ্ছাশক্তি আমার ভিতর জন্মায়। কারণ ব্যর্থ হওয়ার বিলাসিতা করার আর কোন সুযোগ আমার ছিলো না। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ এই তিন বছর আমি কি পরিমাণ পড়াশোনা করেছি তা আমার খুব কাছের কয়েকজন বন্ধুই শুধু জানে!!! আর জানে হলে আমার চেয়ার টেবিল, আর আলাদা ২ রুমের ২ জন রুমমেট। এর চেয়ে বেশি কি করা সম্ভব ছিলো আমার জানা নেই। এইরকম দুর্বার মনোযোগ এসেছিলো সম্ভবত পিছনের এতো এতো ব্যর্থতার জন্য। সব সময় মনে হতো ভালো কিছু আসছে!!! পিছনে ফেরার যখন কোন অপশন নাই তখন কোন বাধাই মানুষকে আসলে দমিয়ে রাখতে পারে না!! আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবার আর তিনি বেশি পরীক্ষা নেননি। ৩৬ ঘুরে ৩৭ বিসিএসেই আমি কাঙ্খিত সাফল্যের দেখা পেয়ে যায়। এর বাইরে বিএসটিআইএ বায়োকেমিস্ট হিসাবে নিয়োগের জন্য মনোনীত হয়। মাত্র ১.৫ বছরের ব্যবধানে ৩ টি ভাইভা দিয়ে ২ টিতেই চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। একজন মানুষ কতদূর যাবে তা সম্পূর্ণই তার মানসিকতা ও ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করে। হল ছেড়ো না বন্ধু, জিততে তোমাকে হবেই!!! ব্যর্থতার শৃঙ্খল ভেঙে এগিয়ে চলাই জীবন। মো. নাছিম রেজা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বগুড়া। বিসিএস প্রশাসন। মেধা ক্রম-৩৮(৩৭ তম বিসিএস)। SHARES ক্যারিয়ার বিষয়: