ভারতে স্বর্ণ পারাপারের প্রধান রুট আমদানি-রপ্তানি ট্রাক

প্রকাশিত: ৬:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২১

শার্শা প্রতিনিধিঃ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে সহজে স্বর্ণ পাচারের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে আমদানি ও রপ্তানি ট্রাক। আর এর নৈপথ্যে রয়েছে দু-দেশের স্বর্ণ চোরাচালানের এক বিশাল শক্ত সিন্ডিকেট। বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে গড়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ গাড়ী বিভিন্ন আমাদানি পণ্য নিয়ে প্রবেশ করে এবং ৮০ থেকে ১০০ গাড়ী পন্য রপ্তানী হয়। চালক এবং হেল্পারদের মাধ্যমে দেদারছে চলে যাচ্ছে স্বর্ণ আর আসছে অস্ত্র,নিশিদ্ধ ঔষধ,ফেন্সিডিল,মদ,বিদেশী ডলার।

 

দেশের সর্ব বৃহৎ বেনাপোল স্থল বন্দর ও সীমান্তকে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানের প্রধান রুট হিসাবে ব্যবহার করছে এক নেটওয়াকিং সিন্ডিকেট চক্র। চলোমান করোনার দোহায় দিয়ে বিভিন্ন ভাবে পার হচ্ছে স্বর্ণের চালান। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বেনাপোল চেকপোষ্ট রপ্তানী ট্রাক ট্রার্মিনাল থেকে প্রতিদিন যে সব রপ্তানী ট্রাক পণ্য নিয়ে ভারতে যায় তার বেশির ভাগ চালক ভারতে প্রবেশের আগে বর্ডার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় দেওয়া হয়ে নতুন চালক আর এসব চালকরা আগে থেকেই বিভিন্ন কৌশলে নিজ দেহে স্বর্ণ সাজিয়ে রাখে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ ট্রাক বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়ে ভারতে আর এই পণ্য বাহি ট্রাক নিয়ে চালকরা বেনাপোল সীমান্তে পৌছালে এক শ্রেনীর সক্রিয় ট্রাক সিন্ডিকেটের লোকেরা তাদের নিকট হতে বিভিন্ন রকম সমস্যা ও ভয় ভীতি দেখিয়ে বদলি ড্রাইভারের মাধ্যেমে ভারতে প্রবেশ করে পন্য বাহি ট্রাক। আর প্রধান চালক থেকে যায় বর্ড়ারের কোন বোডিং বা হোটেলে বিনিময়ে বদলি চালককে দিতে হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এসব বদলি চালকদের মাধ্যেমে সহজে স্বর্ণ পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। বাড়তি আয়ের আশায় বদলি ট্রাক চালকরা ঝুঁকি নিতে দ্বিধা না করে অনায়াশে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় ভারতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও মোটা অংকের টাকার মাধ্যেমে রফাদফা হয়ে বেরিয়ে আসেন দেশে।

 

ট্রাক চালক আলামিন হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিনি এক দিন পর পর বদলি ট্রাক নিয়ে ভারতে যেতেন এবং ফেরার সময় ভারত থেকে প্রতিবার ঔষধ,মদ,ডলার নিয়ে এসেছেন বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা পেতেন। কাদের মাধ্যেমে এসব পণ্যর ডিল হতো জিজ্ঞাসা করলে বলেন বেনাপোল চেকপোষ্ট এবং ভারতের পেট্রাপোলে এই ধরনের কাজ করার জন্য শক্তিশালী সিন্ডিকেট বাহিনী আছে। আমার সাথে তাদের পরিচয় হলে তাদের মাধ্যমে মালামাল এনে দিতাম। চালক আলামিন আরও জানান বর্তমান তিনি ভারতে প্রবেশ করতে পারছেন না কারন কিছু দিন আগে ভারত থেকে ট্রাকের মাধ্যমে একটি পণ্যর চালান আনতে গিয়ে ভারতীয় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এসেছেন।

 

এদিকে পণ্যবাহি ট্রাকে প্রবেশের সময় কোন চেকিং ব্যবস্থা না থাকার কারনে হর হামেশা ভারতীয় বিভিন্ন নিশিদ্ধ ঔষধ,অস্ত্র,ফেন্সিডিল,মদ,ডলার নিয়ে আসছে ভারতীয় চালকরা। ট্রাকের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে বাংলাদেশে আসার সাথে সাথে সক্রিয় চোরাচালান বাহিনীর লোকেরা সাথে সাথে নিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বেনাপোল স্থল বন্দর পন্য নামিয়ে ভারতে ফেরত যাবার সময় ও এসব গোপন সংবাদ ব্যতিত এসব ট্রাক চেক না হওয়ার করনে স্বর্ণের বড় বড় চালান সহজে চলে যাচ্ছে ভারতে। ভারতীয় ট্রাক খালি করে বর্ড়ারে পৌছালে শুধু মাত্র বিজিবি সদস্যরা চোঁখ বুলিয়ে ছেড়ে দেন সব গাড়ি।

 

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী একজন ব্যবসায়ী জানান, আমদানি ও রপ্তানি টার্মিনালে বাংলাদেশি ট্রাক ভারতে প্রবেশের সময় এবং ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী দ্বারা চেকিং সিস্টেম চালু করলে সহজে চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও ভারতীয় খালী ট্রাক ফিরে যাবার সময় এবং বাংলাদেশি খালি ট্রাক ফিরে আসার সময় ভালোভাবে চেক করতে হবে। তাছাড়া দীর্ঘ দুই বছর যাবত বেনাপোল কাস্টমসের স্ক্যানিং ম্যাশিন অচল হয়ে পড়ে আছে সেটি চালু করলেও চোরাচালান রোধ হবে।

 

বেনাপোল সি এন্ড এফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বর্তমান করোনাকালীন সময় বাংলাদেশি কোনো বর্ডারম্যান ভারতে যায় না। ভারত থেকে হেলপার ও চালকরা পণ্যবোঝাই আমদানি পণ্য নিয়ে আসে। তবে অবৈধ যে কোন পণ্য যাতে না নিয়ে আসতে পারে সে জন্য বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বাংলাদেশ গেটে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক তল্লাশি করে বন্দরে প্রবেশ করালে সংশিষ্ট কেও কোন সুযোগ পাবে না।