য‌শোর খুলনা মহাসড়ক কে‌টে সমান!

প্রকাশিত: ২:০৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০

সালমান হাসান রাজিব

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ভারী যানবাহনের চাপে ফুলেফেঁপে ওঠা যশোর-খুলনা মহাসড়ক কেটে মসৃন করতে হয়েছে। সম্প্রতি ‘মিলিং মেশিন’ দিয়ে ঠেলে বেরিয়ে আসা সড়কের বিটুমিনের সারফেস বা উপরিতল কেটে ফেলা হয়। ঝুঁকি এড়িয়ে যানচলাচল নির্বিঘ্ন করতে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কটির এভাবে মেরামত করা হয়েছে। তবে এটি সাময়িক সমাধান। উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনরায় নির্মাণ করা হবে।
এমনটাই বলেছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অতিরিক্ত ভারবাহী যান চলাচলের কারণে মহাসড়কটি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমনকি এই সড়কটি দিয়ে লাগাতার যান চলাচল করে। এরকম বিরতিহীন যান চলাচলের ফলে মহাসড়কটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্টদের অনেকে ধারণা করছেন, তীব্র তাপের কারণে মহাসড়কটির বিটুমিনের কার্পেটিং নরম হয়ে পড়ছে। যার ফলে অতিরিক্ত ভারবাহী যান চলাচলের সময় মহাসড়কটির উপরিভাগ ফুলেফেঁপে উঁচু হয়ে উঠছে।

এমন পরিস্থিতিতে এর আসল কারণ খুঁজে পেতে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এজন্য তারা পরামর্শকও নিয়োগ করছে। বিভাগটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাউকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করবে।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, মহাসড়কের খুলনা অভিমুখে ডান পাশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মহাসড়কটি একদিকে ফোলাফাঁপা ও উঁচুর পরিমাণ বেশি। এর কারণ হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোর কার্যালয় সূত্র বলছে, নওয়াপাড়া থেকে যখন মালবোঝাই করে ট্রাক-কার্ভাড ভ্যান সড়কের বাম পাশ ধরে ফিরে আসে। আর মাত্রাতিরিক্ত ভারবাহী মালবোঝাই এসব যানবাহনের চাপে সড়কটির ওই পাশ তখন মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে নির্মাণ কাজ শেষের আগেই মহাসড়কের প্রায় আট কিলোমিটার সৃষ্টি হয়েছে উঁচু নিচু আঁকাবাঁকা ঢেউ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ সফিকুন নবী জানিয়েছেন, ভারী যানবাহনের চাপে মহাসড়কটির অনেক জায়গায় ফুলেফেঁপে উঠেছে। তবে এমনটি হওয়ার প্রকৃত কারণ এখনও খুঁজে পাননি তারা। আর সেটি খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

জানা গেছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। আর কাজ শেষ না হতেই এরই মধ্যে আট কিলোমিটার সড়ক ফুলে উঠেছে। এতে যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে।
সওজ সূত্র জানায়, যশোর খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার উন্নয়নে ৩২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যশোর খুলনা মহাসড়কটির যশোর শহরের পালবাড়ি মোড় থেকে শুরু করে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার রাজঘাট পর্যন্ত নতুন করে নির্মাণ চলছে। এর ২৭ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স ও তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোং। এর মধ্যে আট কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু-নিচু ঢেউ। রাস্তা ফুলেফেঁপে ওঠায় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

সড়কটি প্রশস্ততা ছিল ২৪ ফুট। এটি আরো ১০ ফুট বাড়িয়ে ৩৪ ফুট চওড়া ও দুই লেন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মহাসড়কে নতুন করে ভিত তৈরি করে সাড়ে চার ফুট থেকে পাঁচ ফুট গর্ত করে প্রথমে বালি ফিলিং, পরে বালি ও খোয়া এবং শেষে বালি ও পাথর মিশিয়ে ভরাট করার নিয়ম রয়েছে। এরপর বিটুমিন সারফেজ পাঁচ ইঞ্চি দিয়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভারবোঝাই যানবাহনের চাপে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃত কারণ খুঁজে পেতে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনরায় নির্মাণ করা হ‌বে।