শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা Admin Admin প্রকাশিত: ৬:২৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২৩ এম কামরুজ্জামান, শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ শয্যাসংকটে মেঝেতেই চিকিৎসা চলছে শ্যামনগর ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।মূল ভবনটি দুই বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন অন্য ভবনগুলোতে মাত্র ২৫টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ডাক্তারদের চলছে দিনরাত সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের ভবনের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ভবনটি পরিত্যক্তও ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনের। ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ভর্তি হওয়া রোগীদের অন্য ভবনের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আর ভর্তি হওয়া প্রয়োজন, এমন অধিকাংশ রোগীকে অন্য হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। উপরন্তু চিকিৎসকসংকটের কারণে এখানে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকায় এখানে অস্ত্রোপচার কার্যক্রমও প্রায়ই বন্ধ থাকে।দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মূল ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় ইওসির (জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম) ভবনের বারান্দায় শিশু ওয়ার্ডের কার্যক্রম চলছে। এই ওয়ার্ডে আটটি শয্যা আছে। প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত কক্ষটি বাদ রেখে অবশিষ্ট ছোট আয়তনের চার কেবিনকে পরিণত করা হয়েছে নারী ও পুরুষ রোগীদের ওয়ার্ডে। জোড়াতালি দিয়ে ১৭টি শয্যার ব্যবস্থা করা হলেও আরও দুই থেকে তিন গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসা নিতে হয় ওই ভবনের বারান্দা আর মেঝেতে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আবাসিক চিকিৎসক দিয়ে মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ১৬টি চিকিৎসকের পদ। এগুলো হচ্ছে কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞের ১০টি পদ ( সার্জারি, মেডিসিন, শিশু, অর্থপেডিক্স, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, ইএনটি, কার্ডিওলজি, অ্যানেসথেসিয়া), চারটি চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ, একজন ডেন্টাল সার্জন ও একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার (হোমিও) পদ। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকতা, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ পাঁচজন। এখানে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আর বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ জন রোগী দেখতে হয়। চিকিৎসকসংকটে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেক রোগী চিকিৎসকদের কাছে না গিয়েই বাড়ি বা অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন।২০ আগস্ট বেলা ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান একটি ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় কার্যত ১৫-১৬ জনের বেশী রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ডে পরিণত করা প্রতিটি কেবিনে তিন-চারজনের জায়গা করা গেলেও অধিকাংশ রোগী বারান্দা কিংবা সিঁড়ির দুই পাশসহ আশপাশের বারান্দায় শুয়ে–বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জায়গা না হওয়ায় অনেক রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলা সদর কিংবা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।উপজেলার নূরনগর ইউনিয়নের সোহাগ হোসেন জানান, কয়েক দিন ধরে জ্বরের কারণে নাতিকে দুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। জায়গা না হওয়ায় কেবিনের দরজার সামনে শয্যা পেতে তাঁর নাতিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।শ্যামনগর সদরের রেজা আহমেদ বলেন, রোগীর চাপে ছোট কক্ষগুলোতে পা ফেলার জায়গাও থাকে না। বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এক দিন পরই অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। স্বল্প পরিসরে জায়গার মধ্যে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তি পোহানোর কারণে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা শেষ না করেই বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট এক কর্মচারী জানান, এক্স-রে যন্ত্র দুই বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। সার্বক্ষণিক অবেদনবিদ না থাকায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত অস্ত্রোপচার হয় না। নার্সদের জন্য নির্ধারিত ডরমেটরির দুই কক্ষ নিয়ে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও কনফারেন্স, প্রশিক্ষণসহ টিকাদানের মতো অন্যান্য জরুরি কাজ চলছে অস্থায়ীভাবে নির্মিত টিনশেড ঘরে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের মূল ভবন না থাকায় ইন্ডোর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাছাড়া এরকম একটা ব্যস্ততম উপজেলাতে সাত জন মেডিকেল অফিসার নিয়ে ইমারজেন্সি সহ পুরা কার্যক্রম চালানো অধিকতর কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অতিসত্বর মূল ভবন এবং কয়েকজন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ অত্যাবশ্যকীয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানান, বিগত সময় যারা হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন ভবন নির্মাণের জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি। ২৪ সালের আগে মূল ভবন তৈরি কোনো সুযোগ নেই। তবে বহির্বিভাগের দোতলা ভবন চারতলা করে স্থান সংকটের সমাধানের চেষ্টা চলছে। SHARES সাতক্ষীরা বিষয়: