সিরাজগঞ্জে শিক্ষক সংকট, উত্তরণে করণীয় কি?

প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২০

প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট এখন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক সংকট নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তেমন কোনো কার্যকরী উদ্যোগ চোখে পড়ার মত নেই। উপযুক্ত পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর আজ বেহাল দশা। সিরাজগঞ্জ জেলার শিক্ষক সংকটের কারণে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছে অভিভাক, শিক্ষার্থীসহ সচেতন মানুষ।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি হওয়ার কারণে আমরা প্রায় দেখি ছাত্র-ছাত্রীরা হৈ-হুল্লোড় করে। তখন পাশের কক্ষ থেকে শিক্ষক এসে তাদেরকে পড়া মুখস্ত করতে দিয়ে আবার সেই কক্ষে চলে যান। শিক্ষক সংকটের কারণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার ফলে শিক্ষকরা শ্রেণি কক্ষে ঠিকমতো পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার এক সহকারী শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকলে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না। শিক্ষকরা নিজের ইচ্ছামতো চলেন। এছাড়া একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি দাপ্তরিক কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে পারেন না। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি ৩৫ ভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসএসি) এবং ৬৫ ভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রে পদোন্নতির কার্যক্রমে জটিলতা ও অবসরজনিত কারণে পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে নেই কোনো প্রধান ও সহকারি শিক্ষক। ফলে মারাত্মক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন রয়েছে তার মধ্যে ৬ টি ইউনিয়ন দূর্গম চরাঞ্চলে। চরাঞ্চলে প্রায় ১২০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। চর আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ টি পদ আছে, কিন্তু কর্মরত শিক্ষক আছেন মাত্র ৩ জন। শুধু এই চরআদিত্য স্কুলই না, বরং কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের প্রত্যেকটা স্কুলে ২ টি, ৩ টি এমনকি ৪ টি পর্যন্ত পদ ফাঁকা আছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় দূর্গম অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক না থাকার কারণে শিক্ষকদের নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে নানা রকম তদবির ও অপকৌশলে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন পছন্দের বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন। ফলে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে আরও কিছু পদ। বর্তমানে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে যে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে সেটি বিদ্যুৎ সংকট, ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে ঠিকমতো দূর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে পারছে না। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষার মান ও কার্যক্রম। তাই বিদ্যালয় গুলোর শূন্যপদ পূরনে মমতাময়ী মায়ের কাছে আকুল প্রার্থনা করছি, মা তুমি ৩৭ হাজার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দানে আমাদের ধন্য করেন এবং বেকার জীবন থেকে মুক্তি দিন।

মো: আবুল কালাম
প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেলে প্রত্যাশী
সিরাজগঞ্জ জেলা ।