ঢাকা, ৮ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৯শে জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

৩৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ মণিহার


প্রকাশিত: ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০২১

আজকাল বিনোদন ডেস্কঃ

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সিনেমা হল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ যশোরের ‘মণিহার সিনেমা’ আজ ৩৯ বছরে পা রাখল। আসন সংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ এই সিনেমা হলটিতে এক সময় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সিনেমা রিলিজ দেওয়া হতো। নতুন কোন ছবি রিলিজ হলে সে ছবির নায়ক নায়িকাসহ কলাকুশলীরা ‘মণিহার’ এ আসতেন। এমনকি তারা দর্শকদের পাশে বসে সিনেমা দেখতেন, অটোগ্রাফ দিতেন। সে সময় হলে প্রবেশে দর্শকদের দীর্ঘ লাইন পড়তো যা ছিলো চোখে পড়ার মতো। কালোবাজারে টিকিট পাওয়াও ছিলো দুষ্কর। দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে রীতিমতো বেগ পোহাতে হতো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহু পর্যটক আসতেন ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘মণিহার’ এ সিনেমা দেখতে। রূপালী জগতের এমন স্বর্ণালী যুগ এখন ধুলো পড়া ইতিহাস। ‘মণিহার’ এর সেই জৌলুস এখন আর নেই। নেই দর্শকদের বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস আর সেই ঠাঁসা ভিড়।

‘মণিহার সিনেমা’ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৮২ সালে সিনেমা হলের জন্য নান্দনিক এবং শ্রুতিমধুর একটি নাম আহবান করে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ সিরাজুল ইসলাম। পরবর্তীতে জমা পড়া কয়েকশ নামের মধ্যে ‘মণিহার’ নামটিই চুড়ান্ত করেন ‘মণিহার সিনেমা’ র প্রতিষ্ঠাতা মোঃ সিরাজুল ইসলাম। এর দেড় বছর পর ১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কে তৎকালীন যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় যাত্রা শুরু করে ‘মণিহার সিনেমা’। পরদিন ৯ ডিসেম্বর প্রথম শো-তে টিকিটের দাম ৫, ১০ এবং ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ‘মণিহার’। বর্তমানে এসব টিকিটের মূল্য ৬০, ৭০ এবং ৮০ (শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত) টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ‘মণিহার’ এর রূপালী পর্দায় প্রথম প্রদর্শিত হয় দেওয়ান নজরুল পরিচালিত জসিম, সোহেল রানা, সুচরিতা এবং রোজিনা অভিনীত ব্যবসা সফল ছবি ‘জনি’। ‘মণিহার সিনেমা’ র ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অঞ্জু ঘোষ অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবি দিয়ে। ১৯৮৯ সালে রিলিজ পাওয়া ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিটি টানা তিন মাস ‘মণিহার’ র পর্দায় চলে রেকর্ড গড়ে।

দেশসেরা স্থপতি কাজী মোঃ হানিফের করা নকশায় চার বিঘা জমির উপর নির্মিত আধুনিক সুযোগ সু্বিধা সম্বলিত চারতলা বিশিষ্ট ভবনে রাজকীয় স্থাপত্যশৈলী, অভ্যন্তরীণ নানা বৈচিত্র্যময়তা এবং নির্মাণ পরবর্তী সময়ে উপমহাদেশের স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের তত্ত্বাবধানে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ‘মণিহার সিনেমা’ কে দিয়েছে স্বাতন্ত্রতা। ‘মণিহার সিনেমা’ র আসন সংখ্যা এক হাজার চারশ তিরিশ। বর্তমানে মানসম্মত ছবির অভাব, করোনা পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি দর্শকের হল বিমুখতার কারনে বারবার লোকসানের মুখে পড়ছে ‘মণিহার’ কর্তৃপক্ষ। ‘মণিহার সিনেমা’ কে সংস্কার করে ‘মাল্টিপ্লেক্স’ এ রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন মণিহার’ র প্রতিষ্ঠাতা পুত্র এবং হলটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু।