“অনুভূতি” লেখিকা- সামছুন নাহার শেলী

প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২২

প্রকাশনায় বি এম বাবলুর রহমান
ঘড়ির কাটার টিক টিক শব্দ যখন মন ভারী করে,মনের আকাশের মেঘেগুলো তখন বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
জড়িয়ে ধরে হাজার আদরের নাম ভালোবাসা হতে পারে না,আজ হটাৎ সেই কথা টা মনে পড়ল,কারণ একটু আগেই রাইয়ান কে বলছি,
আচ্ছা বলো তো,দুপাশে এইভাবে চুল বেঁধে আমাকে কেমন লাগছে,অনেক অনেক বেশি উত্তর পেলাম,যে গুলো আমি আশা করিনি। আবার বললাম,আজ ভাবী আমার হাতে মেহেদির রংঙ্গে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে,দেখ দেখ কি সুন্দর লাগছে। এখন তো সময়ই হয় না এগুলো করার! অপরপাশ থেকে উত্তর গুলো ঝড়ের গতিতে এলো,যাও না ঘর সংসার ছেড়ে এইসব রংঢং করো,কে বেঁধে রেখেছে তোমায়! যদি চাকরি করে আয় রোজগার করে সংসার চালাতে হতো তবে এতো রংঢং আসতো না। সারাদিন সংসারের খুঁটিনাটি আর বাচ্চাদের নিয়েই হিমশিম খাও,এইজন্য এতো কথা,এত সাজ,এতো রং।আমার মত কাজ করে দেখ জীবন কত কঠিন সহ আরো অনেক কিছুই বলল,,,,

এক মনে কিছুক্ষণ চুপচাপ ভাবলাম, একটু দূরে দাড়িয়ে আকাশের দিকে চোখ পড়ল,মিটমিট করে তাঁরা জ্বলছে, মনে হলো এতো এতো তাঁরার মাঝে আমার প্রিয় মানুষ গুলোও দাদা- দাদি,নানা-নানী আর বাবাও আছে। একমনে তাঁহাদের সাথে কিছু ব্যাথার কথা বললাম,একটু চোখের পানি আর দীর্ঘশ্বাস তারপর চুপচাপ। এখন আর কোন রাগ অভিমান নেই কারণ নিজেকে নিজেই সামলাতে হবে এটা বাবার থেকেই জেনেছি। আসলে বেঁচে থাকাটা আজ সবাই জন্য নিজের জন্য একান্তই চোখের নোনাপানি। সে আমার ২৩ বছরের সাথী সঙ্গী আর বাকিদিন গুলো একসাথেই থাকার অদম্য চেষ্টা করছি,তার পর ও মাঝে মধ্যেই চোখ দুটো ভিজে শীতল ঝর্ণা আমাকে শান্ত করে। আমার ছোট্ট আর সোনার সংসারে আছে যার ছায়া আর মায়া আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন, আর আমি,,,,, সেটা নাইবা বললাম আজ

আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখেছিলাম,আর ভাবছি,সবার মনের মত চলতে চলতে কখন যে আমি নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে নিয়েছি আজকে সেটা ঠিক করে বলতেও পারব না।আজ মনে হচ্ছে আমার কোন ভালোলাগা থাকতে নেই,নিজের বলে কিছু থাকবে না আর স্বাধীনতা সেটা তো ভাবাই যায় না। আজ বহু দিন পর চাঁদ দেখার সুযোগ হলো,হয়তো এইজন্যই মনটা সব পুরানো ক্ষত টেনে বের করছে। বাবা আমার নাম রেখেছিলেন “বেলি”যার অর্থ আধুনিক। বাবাই আমার প্রথম বন্ধু আর খেলার সাথী। আমার ছোট্ট একটা বোন আছে “জুই”,কথা প্রসঙ্গে আমার বাবা একদিন বলছিলেন,আমরাই তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন।সেদিন কথাটার অর্থ বুঝতে পারিনি তবে এখন পরিষ্কার বুঝি। আজ আমিও বলি, আমার একটা ছেলে, নাম “বাবর” সে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।আমার মেয়ের নাম “রাইসা” সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আর এরাই আমার জীবন। আমাদের তিন জনের একমাত্র অভিভাবক “রাইয়ান”।

আমি কোন অনুভূতিতে আঘাত ছাড়াই বলতে চাই ,মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের চোখের পানির জন্য তার পিতাই দায়ী,কারণ যদি প্রথম থেকেই সকল মেয়েদের বোঝানো হয় বাস্তবতা কি জিনিস, তাহলে সংসার জীবনে এগুলো মেনেনিতে এতটা কষ্ট হয় না।আমি দেখেছি বাবা চা দিয়ে বসে থাকতো আমার সামনে,একবার চায়ের কাপে ফুদিয়ে ঠান্ডা করত আর একবার আমার ঠোঁটে ফুদিয়ে হাওয়া দিতো। আমার কখনো কেটে গেলে যতটা রক্ত পড়তো ততটাই চোখের পানি পড়তো বাবার। বাবা ব্যস্ত রক্ত বন্ধ করতে আর আমি তার চোখের পানি মুছতে ব্যাকুল। আমার মেয়ে রাইসার হাত পুড়ে গেছে তার বাবা দৌড়ে একবার বরফ,একবার পেস্ট,তার পর ঔষধ সাথে তুলা নিয়ে ছোটাছুটি করছে।আমি চাই সে আমার কাছে থেকেই বাস্তবতা শিখে নিবে তাই দূরে দাড়িয়ে দেখছি কি করে।মেয়েকে সামলে আমাকে সাত কথা শুনালো অথচ কয়েক দিন আগেই আমাকে বলেছে,ঠিক করে সংসার টাও করতে শেখোনি এতো বছরে!কারণ আমার হাত কেটেছিলো তাই।কি করে বোঝাবো আমিও কারো আদরের সন্তান !

বয়সের এই প্রন্তে এসে হিসাব টা মিলতে চাই না।আমার ৪১ বয়স জীবন আর ২৩ বছরের সংসার। সারা জীবনের অর্ধেকের বেশি সময়ই আমি রাইয়ান এর সাথে ,আজ আমি অনেক কিছুই সহজে মেনে নিতে পারি,কোন কারণ ছাড়াই হাসতে পারি,নির্দ্বিধায় বার বার সরি বলতে পারি।বাবা মার কাছে ১৯ বছর ছিলাম,কখনও এই জীবনের কথা মনে আসেনি। আজ হিসাব টা বরাবর তাই শুধু দুঃখ পাই না,ভালোবাসা আছে ভরপুর।
সবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একরকম হয় না।তাই এতো কিছুর পর ও আমি রাইয়ান কেই অনেক ভালোবাসি আর তার কাছেই নিজেকে গচ্ছিত রেখেছি। তার চেয়েও বেশি ভালো আজ পর্যন্ত কেউ বাসেনি,কেই তার সমকক্ষ নয়। কখনও মন খারাপ হলে আমি যদি সোফা বা ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ি,ঘুম থেকে উঠে দেখি সে আমার পাশে বিছানা করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।আমি জানি সে আমার পাশে থাকবে আর এই বিশ্বাস নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে সে আমার গায়ে চাদর ঠিক করে, প্রাই গভীর রাতেই সে আমার কপালের এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে কপালে চুম্মা দেয়। কখনও আমার মাথাই বালিশ থাকে না,আস্তে ধীরে আমার বালিশ ঠিক করে। ফ্লোরে পানি পড়ছে আমি পড়েযেতে পারি এইজন্য সে পরিষ্কার করে আর বলে,তুমি খেয়াল করোনা এইসব,যদি বাচ্ছারা পড়ে যায়,অথচ বাচ্ছারা বাসায় নেই। ছোট ছোট সচেতন মুলক কথা সব বউ খুশি হয়।আমি এই সমাজে মাথা উচু করে সন্মানের সহিত আজো বেঁচে আছি, কারণ তার সাথে জড়িত বাকি সদস্যরা আমাকে তার সমতুল্য শ্রদ্ধা,ভক্তি,ভালোবাসা জ্ঞাপন করে। হয়তো আমার চাওয়ার মত করে তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয় না তার পরও বলব এই গুলোও কোন অংশে কম নয়।বাকি দিন গুলো একসাথেই চলতে চাই।আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি ।