অভয়নগরে পাঁচশ বছর পুরানো মসজিদটি শুভরাড়া পীর খান জাহান (র.) মসজিদ

প্রকাশিত: ২:১৯ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০২১

শুভরাড়া পীর খান জাহান (র.) মসজিদ সাড়ে ৫শ বছরের স্মৃতি ধারণ করে যশোরের অভয়নগরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম মুসলিম ধর্ম প্রচারক খান জাহান আলীর (রহ.) স্মৃতিবিজড়িত এই মসজিদ দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসেন বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষ। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলীতে অনন্য এই স্থাপত্যশিল্প মুগ্ধ করে তাদের। যশোরের অভয়নগর উপজেলা সদরের নওয়াপাড়া থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শুভরাড়া গ্রাম। অসংখ্য গাছগাছালি ও বাঁশবাগানে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই গ্রামটি। এখানেই অবস্থিত এই মসজিদের গম্বুজ নজরে আসে বহু দূর থেকে। সড়ক ও নদীপথে নওয়াপাড়া থেকে শুভরাড়ায় যাওয়া যায় সহজেই। তবে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ফুলতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে সামান্য পূর্বপাশে গোডাউন খেয়াঘাট থেকে নদী পার হয়ে সহজেই যাওয়া যায়।
স্থানীয়রা জানান, পুরানো এই মসজিদটি এক সময় ভেঙে পড়েছিল যত্নের অভাবে। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মূল আদল ঠিক রেখে মসজিদটি সংস্কার করে। এখানে নিয়মিত ওয়াক্তের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, নামাজে অংশ নেন স্থানীয়রা।
ইতিহাস গবেষকদের মতে, বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম মুসলিম ধর্ম প্রচারক হযরত খান জাহান আলী (রহ.) ১৪১৮ খ্রিস্টাব্দে যশোরের বারবাজারে অবস্থান নেন ও ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদান রাখেন।
পরবর্তীতে তিনি যশোরের মুড়লি কসবা থেকে সৈন্য ও অনুসারীদের নিয়ে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্বদিকে অগ্রসর হন। এ সময় তিনি বেশ কিছু রাস্তা নির্মাণ, দিঘি খনন ও মসজিদ স্থাপন করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোহর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থটি যা ১৯১৪ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত তার প্রথম খণ্ড খাঞ্জালি মসজিদের কথা উল্লেখ রয়েছে।

ওই বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত খানজাহান আলী (রহ.) সম্ভবত নড়াইল অঞ্চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অন্য পথ ধরে এগিয়ে তিনি শুভরাড়া নামক গ্রামে এসে পৌঁছান। খ্রিস্টীয় ১৪৪৫ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে কোনো এক সময় খাঞ্জালি মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে ইতিহাস গবেষকেরা মনে করেন। এতে একটি মাত্র গম্বুজ এবং চার কোণে চারটি মিনার আছে।

মসজিদটির ভেতরের মাপ ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি বাই ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। উচ্চতা ২৫ ফুট। মসজিদটির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে তিনটি দরজা আছে। পূর্বদিকে সদর দরজা এবং এর খিলান ১১ ফুট লম্বা এবং ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি চওড়া। এই মসজিদ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে নানা রকম ইট।

‘বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ’ গ্রন্থে গবেষক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া শুভরাড়া মসজিদ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, মসজিদের গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তবে মসজিদের গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল দেখে মনে হয়, মসজিদটি খান-ই-জাহানের আমলে নির্মিত হয়েছিল। স্থানীয়দের মতে, খান জাহান বারবাজার থেকে মুড়লি কসবা হয়ে পয়োগ্রাম কসবা গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে পরে আসেন বাগেরহাটে। পয়োগ্রাম কসবা যাওয়ার পথে তিনি শুভরাড়া গ্রামে থেমে একটি ছোট মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা কার্যালয় জানায়, কারুকাজ ও নির্মাণশৈলী অবিকৃত রেখে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। ইউনেসকো স্বীকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নীতিমালা বা কোড অনুসরণ করেই মসজিদটি সংস্কার-সংরক্ষণ করা হয়েছে-মৌলিকত্বের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি বলে জানিয়েছে তারা।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, প্রায় ১০০ বছর আগে খাঞ্জালি মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়ে। এরপরও গোলপাতার ছাউনি দিয়ে মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকেন স্থানীয় লোকজন। পরে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।

ইতিহাস গবেষক ও সাংবাদিক সাজেদ রহমান জানান, মুসলিম ধর্ম প্রচারক খান জাহান আলী (রহ.) যশোরের মুড়লি কসবা থেকে বাগেরহাট যাওয়ার পথে পনেরশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এখানে মসজিদের পাশাপাশি তিনি একটি দীঘিও খনন করেন। এখানে তার তিন অনুসারীর কবরও রয়েছে। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলীতে অনন্য এই স্থাপত্যশিল্প মুগ্ধ করে অসংখ্য ভ্রমণপিপাসুদের।

যশোরের অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান জানান, শুভরাড়া মসজিদটি দেশের একটি অনন্য নিদর্শন। খান জাহান আলী (রহ.) এর স্মৃতিবিজড়িত এই মসজিদ দেখতে ছুটে আসেন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।
স্থানীয়দের মতে, খান জাহান বারবাজার থেকে মুড়লি কসবা হয়ে পয়োগ্রাম কসবা গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে পরে আসেন বাগেরহাটে। পয়োগ্রাম কসবা যাওয়ার পথে তিনি শুভরাড়া গ্রামে থেমে একটি ছোট মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা কার্যালয় জানায়, কারুকাজ ও নির্মাণশৈলী অবিকৃত রেখে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। ইউনেসকো স্বীকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নীতিমালা বা কোড অনুসরণ করেই মসজিদটি সংস্কার-সংরক্ষণ করা হয়েছে-মৌলিকত্বের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি বলে জানিয়েছে তারা।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, প্রায় ১০০ বছর আগে খাঞ্জালি মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়ে। এরপরও গোলপাতার ছাউনি দিয়ে মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকেন স্থানীয় লোকজন। পরে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।

ইতিহাস গবেষক ও সাংবাদিক সাজেদ রহমান জানান, মুসলিম ধর্ম প্রচারক খান জাহান আলী (রহ.) যশোরের মুড়লি কসবা থেকে বাগেরহাট যাওয়ার পথে পনেরশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এখানে মসজিদের পাশাপাশি তিনি একটি দীঘিও খনন করেন। এখানে তার তিন অনুসারীর কবরও রয়েছে। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলীতে অনন্য এই স্থাপত্যশিল্প মুগ্ধ করে অসংখ্য ভ্রমণপিপাসুদের।