ইসরাইলি কারাগারে কেমন কাটে ফিলিস্তিনি মায়েদের ঈদ?

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০২০

২০১৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজা উপত্যকার বাসিন্দা নাসরিন আবু কামাল (৪৬) বন্দী আছেন দখলদার ইসরাইলের কারাগারে। গেলো ৬ বছরে একবারও আত্মীয়-স্বজনদের দেখা পাননি এই নারী। এমনকি ঈদের দিনগুলোতেও নয়।

 

নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে কিভাবে তার ঈদগুলোও কাটে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে একটি উপায়ে পরিবারের সাথে, সন্তানদের সাথে ‘সংযোগ’ স্থাপন করতে পারেন তিনি। সেটি ফিলিস্তিনের একটি রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে।

রেডিওটি থেকে প্রতি বছর ঈদের দিন একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় নারী বন্দীদের নিয়ে। বিশেষ করে যেসব মায়েরা বন্দী আছেন ইসরাইলি কারাগারে তাদের পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা বার্তা বা ভয়েস মেসেজ প্রচার করেন তারা। ইসরাইলি কারা কর্তৃপক্ষ অবশ্য সেই অনুষ্ঠানটি শোনার সুযোগ করে দেয় বন্দীদের।

 

পরিবার, সন্তানদের সাথে দেখা করতে না পারা একজন মা যখন তার আপন কারো কণ্ঠে রেডিওতে তার উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তা শুনতে পান সেটি এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির জন্ম দেয় কারাগারে।

 

গত বছর ঈদের সময় ইসরাইলি কারাগারে বন্দী ছিলেন গাজার আরেক নারী হাইফা আবু-এসবেই। ৬ বছর ধরে বন্দী থাকা নাসরিন আবু কামাল ঈদের দিন রেডিও অনুষ্ঠানে প্রিয়জনের কণ্ঠ শুনে কেমন করেছিলেন সেটি তিনি তুলে ধরেছেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে।

হাইফা বলেন, ঈদের দিন বিকেলে নাসরিন যখন রেডিও অনুষ্ঠানে তার সবচেয়ে ছোট সন্তানের কণ্ঠ শুনতে পান তখন একই সাথে তাকে প্রচণ্ড আনন্দিত ও প্রচণ্ড দুঃখী মনে হয়েছে। অবুঝ শিশুর মতো আচরণ করেছেন তিনি। রেডিওতে প্রাণপ্রিয় সন্তানের সেই বার্তাটি প্রচারিত হওয়ার সময় তার চোখ ছিলো বন্ধ। মুহূর্তেই সেখানে ভর করে যন্ত্রণা আর পরিবারকে কাছে পাওয়ার আকুলতা।

তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হাইফা বলেন, কারাগারের ঈদে কোন আনন্দ কিংবা উৎসব থাকে না। তবে ফিলিস্তিনি বন্দীরা একে অন্যকে প্রাণবন্ত রাখার চেষ্টা করেন। অনেক বিধিনিষেধ থাকলেও বন্দীরা কারারক্ষীদের চোখ এড়িয়ে নিজেদের আত্মাকে প্রশান্তি দেয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ কারা কর্তৃপক্ষে কাছ থেকে পাওয়া সামান্য সামগ্রী দিয়ে ঈদ ক্যান্ডি বানান। কেউ অন্য বন্দী বা স্বজনদের উদ্দেশে ঈদ বার্তা লেখেন হৃদয়গ্রাহী বাক্য দিয়ে।

 

গত বছর ঈদের দিন তিনি সব নারী বন্দীদের চমকে দিয়েছিলেন হাইফা। সবাই ঘুম থেকে উঠে দেখেছে মাথার কাছে মিষ্টি রাখা। সামান্য সামগ্রী পেয়ে দুই দিন সময় নিয়ে অল্প কিছু মিষ্টি বানিয়েছিলেন তিনি।

হাইফা আরো বলেন, আমাকে হাশারোন জেল থেকে দামন জেলে নেয়ার সময় লুকিয়ে ক্যান্ডি বানানোর সামগ্রী সাথে নিয়েছিলাম। এছাড়া ২০ জনের জন্য মিষ্টি তৈরি করেছি। কারাগারে কোনো ওভেন ব্যবহারের সুযোগ ছিলো না তাই একটি গরম প্লেট আর একটি ছোট পাত্র ব্যবহার করেছি।

সাবেক কারাবন্দীরা বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানটি ঈদের দিন এক আবেগ-ঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে কারাগারে। প্রিয়জনের কণ্ঠ শুনে কেউ প্রশান্তি অনুভব করেন, কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউবা ফেটে পড়েন ক্ষোভে।

তবে দিন দিন কারাগারে কড়াকড়ি আরো বাড়ছে। আল-দামন কারাগারে গত বছর থেকে ঈদের নামাজ পড়তে দেয়া হয় না বন্দীদের। তবে কারা চত্বরে সবাইকে জড়ো করে যখন গণনা করা হয়, তখন বন্দীরা শুভেচ্ছা বিনিময় করে নেন নিজেদের মাঝে। বর্তমানে ইসরাইলের আল-দামন কারাগারে বন্দী আছেন ৩৮ জন ফিলিস্তিনি নারী। যাদের মধ্যে তিন ভাগের একভাগ সন্তানের মা।

সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর