করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা শুরু ভারতেই নয় বরং পুরো বিশ্বেই পড়েছে..

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২১

গত ১৪ এপ্রিল ছিল ভারতের জন্য একটি বিশেষ দিন। হিন্দু এবং শিখ সদায় নববর্ষ উদযাপন কম্প্ররেছে। অপরদিকে সেদিন প্রথম রমজানের রোজা রেখেছিল মুসলিমরা। সবাই নিজ নিজ পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়েই উৎসব পালন করেছে।

এদিকে, মন্দিরের শহর হিসেবে খ্যাত হরিদ্দারে এ বছর কুম্ভ মেলায় প্রচুর লোকসমাগম ঘটেছে। অন্তত ১০ থেকে ২০ লাখ মানুষ কুম্ভ মেলায় গঙ্গা স্নান করেছে। আর এরপর থেকেই দেশটিতে একদিনে দুই লাখের বেশি নতুন সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে।

টানা এক সপ্তাহ দুই লাখের বেশি সংক্রমণের পর দেশটিতে এখন সংক্রমণ তিন লাখের বেশিতে গিয়ে ঠেকেছে। গত কয়েকদিনে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারত। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে করোনার লাগাম টানা যাচ্ছে না। সংক্রমণ ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় শুক্রবার সকালে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মানুষ। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ। একই সময়ের মধ্যে মারা গেছে ২ হাজার ২৬৩ জন। গত কয়েকদিনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা শুরু ভারতেই নয় বরং পুরো বিশ্বেই পড়েছে। দেশটিতে করোনার যে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে তা আগের ধরনগুলোর চেয়ে মারাত্মক। এটি প্রথম ভারতে শনাক্ত হয়েছে বলে একে ভারতীয় ধরন হিসেবেই নামকরণ করা হয়ে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে এই নতুন স্ট্রেইনের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনার এই ধরনের শক্তি অনেক বেশি, শারীরিক অবস্থার অবনতিও খুব দ্রুত হচ্ছে এই স্ট্রেইনে আক্রান্তদের। ঠিক সময়ে লাগাম দিতে না পারলে এবার সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্কবাণী দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন এই ধরন কীভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে- এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ করা। প্রয়োজন নিয়মিত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে ভারতের মতো দেশে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ভারতে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের ওপর এই জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে।

korona1

এ বিষয়ে গড়িমসির কোনো জায়গা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ স্ট্রেইন ঠিক সময়ে ধরা না পড়ার কারণেই হয়তো অগোচরে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে এই ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’। ভাইরাস যত ছড়ায় সেটির মিউটেশনের হারও তত বৃদ্ধি পায়। নতুন এই স্ট্রেইনটি শিশুদেরকেও সংক্রমিত করছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে বিশেষ কোনো তথ্য নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। যে কারণে আপাতত ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব কনসার্ন’-এর বদলে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর তালিকাতেই রাখা হয়েছে এটিকে।

ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশেই ডাবল মিউট্যান্ট শনাক্ত হয়েছে। একের পর এক করোনার নতুন ধরন সামনে আসায় বিপাকে পড়েছেন বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীরাও।

নিজ দেশের করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে ভারত এখন অন্যসব দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভারত কেবল ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বিদেশে সরবরাহ করতে পেরেছে।

এর আগের তিন মাসে দেশটি বিভিন্ন দেশে ৬ কোটি ৪ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। দেশটির বেসরকারি সংস্থা সিরাম ইন্সটিটিউট সেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কোভ্যাক্স কর্মসূচির সঙ্গে সংস্থাটির যে প্রতিশ্রুতি ছিল তারা তা রাখতে পারছে না।

আগামী তিন মাসের মধ্যে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা। বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ভ্যাকসিন রফতানির কোনও নিশ্চয়তা নেই এবং এই মুহূর্তে আমরাও মনে করছি, এমন সংক্রমণের সময়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে আমাদের রফতানির দিকে তাকানো উচিত হবে না।

এদিকে, ভারতের এমন পরিস্থিতির কারণে হতাশ হয়ে পড়েছে আফ্রিকার দেশগুলো। কারণ তারা এতদিন আশায় ছিল যে ভারত থেকে হয়তো তারা ভ্যাকসিন নিতে পারবে। কিন্তু এখন সেখানেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ভারত নিজেরাই বড় পরিসরে ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে অথচ দেশটির ১০ ভাগেরও কম মানুষ এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে। দেশটির এক্ষেত্রে আরও ভালো পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল এবং আরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার প্রয়োজন ছিল।