করোনার মধ্যেই পঙ্গপাল ঠেকানোর লড়াই ভারতের News Publisher News Publisher প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০২০ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকায় আক্রমণ চালিয়েছে বিশাল এক ঝাঁক পঙ্গপাল। ছোট আকারের এই পোকার বিশাল ও আগ্রাসী বাহিনী ব্যাপকভাবে ফসল ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এই পঙ্গপাল বাহিনী পশ্চিম ভারতের ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি মরু এলাকায় ২৪টিরও বেশি জেলায় আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের আক্রমণের সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট। পঙ্গপাল মোকাবিলায় গত ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে পাকিস্তান। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে পোকাটির এমন তাণ্ডব আর দেখা যায়নি। এবার আক্রমণ চালানো পঙ্গপাল রেকর্ড সংখ্যক বলে মনে করছে ইসলামাবাদ। এই মরু পঙ্গপাল বাহিনী ফসল ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে ফেলছে। ফলশ্রুতিতে খাদ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে।পাকিস্তানের প্রায় ৩৮ শতাংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে বেলুচিস্তান, সিন্ধ ও পাঞ্জাব প্রদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) একটি প্রতিবেদন বলছে, ওই এলাকাই এই প্রজাতির পঙ্গপালের ‘বংশবৃদ্ধির মূল ক্ষেত্র।’ দুই পারমাণবিক শক্তিধর বৈরি দেশের মধ্যে সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরেই শীতল। বিশেষ করে কাশ্মিরের রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিতে মোদি সরকারের ব্যাপক ধরপাকড় ও অব্যাহত নিপীড়নে দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি দৃশ্যমান হয়। তারপরও এই অভিবাসী পঙ্গপালের হামলা মোকাবেলায় দুই দেশ একযোগে কাজ করছে। গত এপ্রিলের পর থেকে এ পর্যন্ত স্কাইপি-র মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত নয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে আফগানিস্তান ও ইরানের উদ্ভিদ সুরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারাও যোগ দেন। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে দুই পক্ষ সীমান্তে সামনাসামনি বৈঠক করেছে। ২০১৭-১৮ সালে পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে তারা সীমান্তে পাঁচটি বৈঠক করেছে। ভারতের পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টার কে এল গুর্জার। বিবিসি-কে তিনি বলেন, ‘আমরা সীমান্তের ওপার থেকে পঙ্গপালের বড় ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে লড়াই করছি। প্রায় তিন দশকের মধ্যে এতো বড় আক্রমণ আর হয়নি। এই পঙ্গপালের ঝাঁক খুবই বিশাল। নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই এবার তারা বংশবিস্তার করেছে এবং সীমান্ত পার হয়ে চলে এসেছে।’ পঙ্গপালের ঝাঁকটা পাকিস্তান থেকে ভারতে ঢুকেছে ৩০ এপ্রিল নাগাদ। এখন তারা রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের পাঁচটি জেলায় ফসল ধ্বংস করছে। এক বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকে ৪০ মিলিয়ন (৪ কোটি) পর্যন্ত পতঙ্গ। এরা উড়ে খুব দ্রুত। কর্মকর্তারা বলছেন, কখনও কখনও তারা দিনে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। কে এল গুর্জার বিবিসি-কে বলেন, ‘আমাদের ভাগ্য ভালো মাঠে এই মুহূর্তে কোনও শস্য নেই। কিন্তু পঙ্গপালের ঝাঁক সবুজ পাতা, ডালপালা, ফল, ফুল, বীজ ও গাছ খেয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ কর্মকর্তারা বলছেন, ছোট্ট একটা পঙ্গপালের ঝাঁক গড়ে যে পরিমাণ খাবার একদিনে খেয়ে শেষ করতে পারে, তা প্রায় আড়াই হাজার মানুষের একদিনের খাবারের সমান। এই কোভিড ১৯ মহামারির মধ্যে পঙ্গপাল মোকাবিলায় কাজ করছে এমন প্রায় শ’খানেক কর্মীর জন্য এটা নতুন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মরুভূমির প্রচণ্ড গরমে গাড়িতে লাগানো স্প্রে-যন্ত্র, কীটনাশক এবং ড্রোন ব্যবহার করে এই পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হচ্ছে। থাকতে হচ্ছে গ্রামে। সেখানে তাদের খাবার জোগাচ্ছেন স্থানীয়রা। ফেস মাস্ক ও চলনসই সুরক্ষা পোশাক পরে রাতের বেলা তাদের মাঠে নামতে হচ্ছে পঙ্গপাল শিকারে। ভারতের রাজস্থান রাজ্যে কর্মরত উদ্ভিদ রক্ষা কর্মকর্তা ওম প্রকাশ বলেন, ‘পাকিস্তানের মরু এলাকায় জন্মানোর পর এই পঙ্গপালের ঝাঁক ঢুকেছে ভারতে। এটা খুবই ভয়াবহ মাত্রার আক্রমণ।’ গত কয়েক বছরে ভারতকে বেশ কয়েক দফায় পঙ্গপালের মোকাবিলা করতে হয়েছে। ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে দেশটিতে পঙ্গপালের আক্রমণে শস্যের মড়ক ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতির ২৫টি রেকর্ড রয়েছে। বেশ কয়েকবার পরপর পঙ্গপালের ঝাঁক হামলা চালানোর পর ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা করাচিতে পঙ্গপাল সতর্কীকরণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। ভারতে পৃথক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে। নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এই মরু পঙ্গপাল খাদ্য সরবরাহ নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। এর ফলে দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। ৯০টি দেশে প্রায় সাড়ে চার কোটি বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে পঙ্গপালের হামলাপ্রবণ এলাকা বা সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্ণিত করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও। দ্বিতীয় এক দফা পঙ্গপাল হামলা হয়েছে পূর্ব আফ্রিকাতেও। আফ্রিকার দ্বিতীয় ঘনবসতির দেশ ইথিওপিয়া, সেইসঙ্গে অঞ্চলটির অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র কেনিয়া এবং রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল সোমালিয়া বড় ধরনের পঙ্গপাল হামলার কবলে পড়েছে। জাতিসংঘ ধারণা করছে, দ্বিতীয় দফা পঙ্গপালের ঝাঁক ফেরত এলে তাদের আকার হবে প্রথম ঝাঁকের চেয়ে ২০ গুণ বড়। জুন মাস নাগাদ সেটা ঘটলে সেই ঝাঁক আকারে ৪০০ গুণ বড় হবে। বিশ্ব ব্যাংক হামলায় ফসলের ক্ষতি সামলে ওঠার জন্য পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে অনুদান এবং স্বল্প সুদে ঋণ বাবদ ৫০ কোটি ডলারের অনুমোদন দিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ২০১৮-১৯ এর ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের পর বর্তমান পঙ্গপালের ঝাঁকের উপদ্রব শুরু হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ের পর আরব উপদ্বীপে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এর ফলশ্রুতিতে নজিরবিহীন এক জন্মচক্র থেকে অন্তত তিন প্রজন্ম পঙ্গপাল জন্ম নেয়। এরপর থেকে পঙ্গপালের ঝাঁক ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ এশিয়া আর পূর্ব আফ্রিকায়। ভারতের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা সাসটেনেবল এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল সোসাইটির কর্মকর্তা অংশু শর্মা। বিবিসি-কে তিনি বলেন, ‘আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে এখন যেসব রাজ্যে পঙ্গপাল হানা দিয়েছে সেগুলো কোভিড মহামারি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া এসব রাজ্যে এখন প্রচণ্ড দাবদাহও শুরু হয়েছে।’ পঙ্গপালের ঝাঁক ধ্বংস করা হয় কীভাবে বিশ্রামরত পঙ্গপালের ঝাঁকের ওপর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কীটনাশক স্প্রে করে এটি ধ্বংস করা হয়। হেঁটে, যানবাহনের সাহায্যে ও বিমান থেকে কীটনাশক স্প্রে করে পঙ্গপাল ধ্বংস করতে হয়। সূত্র: বিবিসি। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: