করোনায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সাত নির্দেশনা স্থগিত করেছে হাইকোর্ট, বহাল তিন News Publisher News Publisher প্রকাশিত: ৯:১৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০ সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণাসহ হাইকোর্টের দেওয়া সাত নির্দেশনা স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা হাসপাতালগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কিনা, আইসিইউ বেডের জন্য অতিরিক্ত ফি না নেয়া, অক্সিজেন সিলিন্ডার দাম নির্ধারণ বিষয়ক তিনটি নির্দেশনা বহাল রেখেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিত আবেদনের শুনানিতে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী এই আদেশ দেন। আপিলে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আপিলে বহাল নির্দেশনা ও অভিমত সমূহ: ১. চিকিৎসা বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জারি করা নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুনের আগে আদালতে দাখিল করতে হবে। ২. আইসিইউতে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক যেন মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান বা দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপিলে স্থগিত নির্দেশনা ও অভিমত সমূহ: ১. আদালতের নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করতে হবে। ২. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২৪ মে জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ওই তারিখের পর ৫০ শয্যার বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৬ জুন পর্যন্ত কতজন কোভিড-১৯ এবং নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। সঙ্গে ৫০ শয্যার বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের একটি তালিকা দিতে হবে। ৩. বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কিনা, সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অত্র আদালতে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ৪. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিশেষত ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যাতে কোভিড ও নন-কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেয়া হয় সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৫. কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়। ৬. স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো হাসপাতালে আইসিইউতে কতজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সে জন্য পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নম্বরগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষত টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ৭. দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক পরিস্থিতি অর্থাৎ বর্তমানে দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি একটি ‘দুর্যোগ’ বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নেয়া কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-২০১২-এর ধারা-১৪ অনুসারে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের কার্যক্রমকে সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। কমিটি কার্যকর হলে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে উপরোক্ত আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক রিকুইজিশন করা যেতে পারে বলে অভিমত দেন আদালত। এর আগে সকালে হাসপাতালে অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, আইসিইউ বণ্টন, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ, অক্সিজেন সরবরাহসহ হাসপাতালে আসা সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০ দফা নির্দেশনা ও অভিমত দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরও আগে করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের আলোকে দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সাধারণ রোগীদের (নন-কোভিড-১৯) ফিরিয়ে না দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবীর করা রির্টের শুনানি শেষে সোমবার (১৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল বেঞ্চ ১০ দফা আদেশ দেন। – মেডিভয়েস SHARES স্বাস্থ্য বিষয়: