করোনা মৃত্যু দেশ ও দায়বদ্ধতা

প্রকাশিত: ৯:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০

সম্প্রতি করোনা মহামারীতে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ মৃত্যুর পর বা অসুস্থ থাকাকালীন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন মানুষের রিঅ্যাক্ট এবং কমেন্টস প্রায় অামাদের সবারই দৃষ্টিগোচরে এসেছে। কেউ তাদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করছেন অাবার কেউ প্রকাশ করছেন উল্লাস! কেউ অতীতকে টেনে অানছেন অাবার কেউ দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। হ্যা এটা স্বাভাবিক যে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকবে, তাই বলে সবার সম্মুখে কারো অসুস্থতা বা মৃত্যুর খবর নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়াটা কেমন যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি নিজেদের জীবন বিপন্ন করে যেসকল ডাক্তাররা মানবতার সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করছেন তাদের মৃত্যুর খবরেও চলছে এরকম বুনো উল্লাস! এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ডিজিটালাইজেশনের যুগে অামরা অাধুনিক হবো ঠিক অাছে কিন্তু বর্বরতাও সমানভাবে বৃদ্ধি পাবে অামাদের মাঝে। এমন পরিস্থিতির জন্য দায়বদ্ধতা কার? কাদের? অাপনি কাকে দায়ী করবেন অাপনার বিকৃতভাষ্য বা বিকৃতরূপের জন্য!
অামি মনে করি এই দায় অামাদের সকলেরই। অামরা ছোটবেলায় বিদ্যা অর্জন করেছিলাম যে ‘ অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহে, দুজনেই সমান অপরাধী “। শুধু মুখস্ত করেছিলাম বাক্যগুলো। কিন্তু এর যথার্থতা বুঝতে পারিনি বা সে পরিবেশ পরিবার মা বাবা শিক্ষক শিক্ষিকা কারো কাছ থেকেই পুরোপুরি পাইনি বলে অামার মূল ভিত্তিটাই হয়ে গেছে দুর্বল। ফলে অন্যায়কারী বা অন্যায়সহ্যকারী উভয় ভূমিকাতেই অামরা সমানভাবে পারদর্শী হয়ে গেছি। একশ্রেণী যখন সুযোগ পাই অন্যায় করি, যখন সুযোগ পাই না অন্যায় করি না। অাবার অন্যশ্রেনী নিজে অন্যায় করে না কিন্তু ঠিকই চেয়ে চেয়ে দেখে, প্রতিবাদ ত দূরের কথা নিজের স্বার্থে অাঘাত হানবে না এরকম নিশ্চিত হতে পারলে অন্যায়কারীর সাপোর্টার পর্যন্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা অন্যায় না করলেও সহ্য করে এবং পরোক্ষভাবে এই বিষয়টিকে সাপোর্ট দিয়ে সমাজে ব্যপ্তি ঘটাতে সাহায্য করছে।
অাগাছা কে যেমন সার দেয়া লাগে না, না কাটলে এমনিতেই বাড়তে থাকে, বাড়তে বাড়তে ফুল-ফল গাছও ঢেকে ফেলে, ঠিক একইভাবে অন্যায়কেও সাপোর্ট দেয়া লাগে না, অন্যায় বসে বসে সহ্য করলে অন্যায়কারী তার ব্যাপ্তি বাড়াতেই থাকেন। ফলাফল সবাই জানেন।
যাইহোক মূলকথা হলো অামাদের নৈতিক অধপতন শুরু থেকেই হচ্ছে।তাই নিজেদেরকে মধ্যম অায়ের দেশ বা ডিজিটাল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অভিপ্রায়ের সাথে সাথে নৈতিকতায় অামরা কোন পর্যায়ে অাছি এবং নৈতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কি কি করতে হবে তারও যথাযথ উদ্যোগ এবং কার্যকরণ করা জরুরী। এবং এই কাজ সমাজে প্রতিটি স্তরকে মূল্যায়ন করেই করতে হবে। পক্ষাবলম্বন বা দলাদলিতে ব্যস্ত থাকলে অামরা তা করতে পারব না। দলমতে বা অাদর্শে ভিন্নতা থাকবে ঠিক অাছে কিন্তু সেই ভিন্নতাকে অামরা ভিন্ন ভিন্ন মত চিন্তাধারা হিসেবে গ্রহণ করে দেশের উন্যয়নে বা সমাজের উন্যয়নে কাজে লাগাব, একজনের পিছনে অারেকজন লেগে থেকে এই ভিন্নতাগুলোকে সম্পদ থেকে বিষে পরিণত করব না। নিজে অন্যায় করবো না, অন্যায়কে সহ্যও করব না, সম্মিলিত ভাবে করবো এর প্রতিবাদ। এবং সবচেয়ে বেশী জরুরী হলো মন থেকে লোভ কে ছুঁড়ে ফলেতে হবে।
এগুলো না করতে পারলে সমাজের অারো অধপতন অবশ্যম্ভাবী। এবং সেক্ষেত্রে যারা দেশ ও দশের জন্য কাজ করছেন বলে মনে করছেন তারা অবশ্যই বিরোধীমনাদের কাছে মৃত্যু পরবর্তী অসম্মাননার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।

ডাঃ আখতার হোসেন চঞ্চল