“গ্রাম্য করোনার হাল চাল”

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২০

কিছুদিন পূর্বেও বীর দর্পে ঘুরে বেড়ানো লুৎফর সাহেব করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে ঢাকা ঘুরে গেল।বাড়ি যেতেইঅসুস্থ,ধরা পরল করোনা। হ্যা,গোপালগঞ্জের একটি স্বনামধন্য ইউনিয়নের কথা বলছি,নাম তার বাটিকামারী ।প্রচুর এলিট পারসন,বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গের প্রিয় ইউনিয়ন এটি। তারপরও নেই সেই গ্রামে সচেতনতা, থাকবেই বা কিভাবে যেখানে বুদ্ধিজীবীদের হাট বসে!

লুৎফর সাহেবের করোনা সনাক্ত হবার পূর্বে সামাজিক মানুষ হিসেবে বেশ দায়িত্ব পালন করেছেন।যেমনঃ ইদের দিন প্রিয়জন দের সাথে কোলাকুলি, হ্যান্ডশেক সহ আরো কত কি?

করোনা ভাইরাস থেকেও ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়ল লুৎফর সাহেবের করোনা হয়েছে।ইদের পরদিন সকাল বেলা ছড়িয়ে পরল লুৎফর সাহেব দীনেশ বাবুর সাথে কোলাকুলি করেছিল।দীনেশ বাবুকে সবাই চিনে, অত্যন্ত সাহসী ও প্রাণবন্ত মানুষ ,তারপরও ভেবাচেকা খেয়ে গেল,কারন সামাজিক ব্যাপার বলে কথা।দীনেশ বাবু ব্যাপারটি হাসি ঠাট্টায় উড়িয়ে দিলেও গ্রামবাসীর সন্দেহের তীর তার দিকেই রয়ে গেল।

অন্যদিকে সকাল থেকেই বণিক বাড়ি পরীক্ষিত বাবুর থেকে করুণ সুর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, কান্নার সুরে ধ্বনিত হচ্ছে যে সে লুৎফর সাহেবের সাথে বেশ অন্তররঙ্গ ভাবেই কোলাকুলিতে মসগুল হয়েছিল। তার কান্নার পিছনে আরেকটি কারন হল সকাল থেকেই শুনা যাচ্ছে লুৎফর সাহেব মারা গেছে,তাই ভাবছে হয়তো তাকেও ডাকছে।
লুৎফর সাহেবের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে কারন কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না জীবিত নাকি মৃত! কারন কেউ ভয়ে তার বাড়িতে যাচ্ছে না।

লুৎফর সাহেবের এমন খারাপ সংবাদ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই প্রিয়জনেরা শেষ বারের মত কান্নাকাটি করছে,ঠিক এমন সময় খবর এল লুৎফর সাহেব মরে নাই,আগের চেয়েও সুস্থ।

হাসি আসল পরীক্ষিত বাবুর তাহলে লুৎফর আমাকে ওপাশ থেকে ডাকে নাই এপাশ থেকেই ডেকে ডেকে বলছে আর কোলাকুলি কর না, পরীক্ষিত দা।

আবার সকালেই পাশ্ববর্তী ইউনিয়নে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হয়েছে প্রচন্ড মারামারি।যেখানে ওসি সহ ৪৫ জন আহতের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর বলেছিলেন- “নগর পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়”

আজ তিনি বেঁচে থাকলে বলতেন – “একজনের করোনা হলে, তাহার সাথে কোলাকুলি করিলে আপনার কি এড়ায়?

লুৎফর সাহেব আরো কতজনকে এ উপহার দিয়েছেন তা ভেবে কোন কূল- কিনারা পাওয়া যাচ্ছে না।হয়তো লুৎফর সাহেবের সাথে কোলাকুলি বা হ্যান্ডশেকের কথা মনে পরতেই গৃহকোণে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে কেউ। এখনও সময় আছে বাকীদের সতর্ক হবার। নাহলে এ মাশুল সবাইকেই মোটা অংকে দিতে হবে।

 

প্রলয় পাল
সিনিয়র শিক্ষক,
বিসি এস কনফিডেন্স