চাঁচড়া শিব মন্দিরঃ যশোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক।

প্রকাশিত: ৪:৩২ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২০

কথিত আছে রাজা মনোহর রায় একবার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, রাজ্যকে খড়ার হাত থেকে বাঁচাতে হলে একটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তো যেই ভাবা সেই কাজ প্রতিষ্টা হলো মন্দির। তবে লোকমুখে  রাজা মনোহর রায় তার রাজ্যকে খড়ার হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছিলেন কিনা এটা জানা যায় না। তবে সেটা না জানলেও মন্দিরটি যে যশোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হয়ে গিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তো আমরা এতক্ষণ ধরে যে মন্দিরটির কথা শুনছিলাম ওইটাই চাঁচড়ার শিব মন্দির। অনন্যসুন্দর এই মন্দিরটি আজ থেকে প্রায় ৩২৪ বছর এর পুরানো অর্থাৎ ১৬৯৬ সালে এটি তৈরি করা হয়। রাজা মনোহর রায় আসলে জমিদার ছিলেন। অনেকে রাজা প্রতাপাদিত্য রায় এর সাথে ওনাকে গুলিয়ে ফেলেন যেটি আসলে ভুল ধারণা।

মন্দিরটির গঠনশৈলী সাধারণত  প্রাচীন বাংলার চারচালা কুঁড়েঘরের আদলে একটি আটচালা স্থাপনা। আয়তাকার  ‘চৌচালা’ ছাদের ওপরে আরেকটি ছোট ‘চৌচালা’ ছাদ। সামনের দিকে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার। পুরো মন্দির পোড়ামাটির ফলকে অলংকৃত। টেরাকোটার ব্যবহারের কারণে বাইরের দিক দারুণ নান্দনিক। এটি নির্মাণে চুন, সুরকি ও  পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়। মন্দিরের সামনের দুইপাশের দেয়ালে টেরাকোটার ফলক ব্যবহারের কারণে বাইরের দিকে দারুণ নান্দনিক দেখায়। এখানে ছাঁচ টেরাকোটা ব্যবহৃত হয়েছে। টেরাকোটায় ৮ ধরনের নকশা দেখা যায়। তার মধ্যে ২টি নকশা খুবই সূক্ষ্ম। কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়, সংস্কারের সময় মন্দিরের দেয়ালে বর্তমানে থাকা টেরাকোটার ফলকগুলো আদি টেরাকোটার আদলেই লাগানো হয়েছে। মন্দির এর সামনের দীঘিটিও তার আপন সৌন্দর্য নিয়ে বহমান। যদিও বর্তমানে দীঘিটির অবস্থা বেগতিক।তবে প্রসাশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে খুব দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে আশা করি।

মন্দিরটির প্রত্নতাত্ত্বিক ভ্যালু অসাধারণ তাতে কোন সন্দেহ নেই তবে আফসোসের বিষয় হলো ২০০৮ সালে এটি সরকারের নজরে আসার আগেই এই মন্দিরটির  বহু মূল্যবান নিদর্শন লুট হয়ে যায়। তবে দেরীতে হলেও ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর কোড মেনে এটিকে সংস্কার করা হয়।

যারা আগে দেখেছেন তাদের ধন্যবাদ। আরা যারা দেখেন নি তাদের জন্য আমন্ত্রণ রইল দেখার  তবে অবশ্যই লকডাউনের পর।

আপাতত ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।

ধন্যবাদ।

তথ্যসূত্রঃ ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোহর-খুলনার ইতিহাস বইয়ে (১৯১৪ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত) এবং Wikipedia