টিকিট বিক্রি করে পথে বসার উপক্রম শত শত ট্রাভেল এজেন্সির

প্রকাশিত: ২:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০

ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না পাওয়ার পরও অবৈধভাবে বাংলাদেশী যাত্রীদের কাছে বিভিন্ন রুটের টিকিট বিক্রি করে যাচ্ছেন বিদেশী বিমান সংস্থা টার্কিস ও এমিরেটস এয়ারলাইন্স। দেশীয় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সুত্রে জানাগেছে ইতিমধ্যে শত শত কোটি টাকার বেশি সেল হয়ে গেছে টিকিট। যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করলেও তাদেরকে নিদৃস্ট গন্তেব্যে কখন পাঠাবে এই বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।

সিভিল এভিয়েশনের দোহায় দিয়ে তারা যাত্রীদের নানাভাবে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এদিকে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও পড়েছেন বেকায়দায়। তারা টিকিট বিক্রি করে একদিকে যাত্রীদের রোসানলে আছেন, অপর দিকে টিকিট বিক্রি করলেও এয়ারলাইন্স কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে টিকিটের পেমেন্ট পাচ্ছেন না। নিজদের টাকায় আয়াটার কাছ থেকে টিকিট ক্রয় করে তারা এখন এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে পেমেন্ট পাচ্ছেন না। এয়ারলাইন্সগুলোও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর পেমেন্ট না দিয়ে পুরো টাকা আয়াটার কাছ থেকে নিয়ে বসে আছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ট্রাভেল এজেন্সির একজন স্বত্বাধিকারী এভিয়েশন নিউজকে বলেন, তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের কাছে ৫ কোটি টাকার বেশি টিকিটের টাকা পাওনা রয়েছেন। এয়ারলাইন্স এই টাকা দিচ্ছে না। যাত্রীও নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, আয়াটার কাছ থেকে নগদ টাকায় টিকিট কিনে এনে এখন তার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ৪ মাস ধরে তার টাকা পড়ে আছে এমিরেটস এর কাছে।

অপর একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বলেন, তিনিও টার্কিস এয়ারলাইন্সের কাছে ৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছেন টিকিটের। এয়ারলাইন্স কতৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে, সিভিল এভিয়েশন থেকে ফ্লাইট পাওয়ার সাথে সাথে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। এখন ওই টাভেল এজেন্সির মালিকের প্রশ্ন যদি সিভিল এভিয়েশন তাদের পারমিশন না দেয় তাহলে কি তাদের এই টাকা হাওয়া হয়ে যাবে? তার আরো প্রশ্ন ফ্লাইট পরিচালনার পারমিশন না থাকার পরও এসব এয়ারলাইন্স কিভাবে টিকিট বিক্রি করেছে তার তদন্ত হওয়া দরকার।

তাদের উচিত হবে এখন যাত্রীদের টাকা ফেরত দেয়া। সেটা না করে তারা যাত্রীদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করছেন। এই ব্যাপারে সিভিল এভিয়েশন কতৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।

সারাদেশে এরকম শত শত ট্রাভেল এজেন্সি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি করে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। এই অবস্থায় তারা না পারছেন যাত্রীদের গন্তব্যে পাঠাতে না পারছেন এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে টিকিটের টাকা ফেরত পেতে। এদিকে এয়ারলাইন্সগুলো সুত্রে জানাগেছে তারা নানাভাবে চেষ্টা করছেন ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি নিতে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট চালু করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দিয়েছে বিদেশি চার এয়ারলাইন্স। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এমিরেটস, এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই এবং তুরস্কের তার্কিশ এয়ারলাইন্স।

বেবিচক সূত্র জানায়, চিঠিতে তারা বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে স্ব স্ব দেশে ফ্লাইট চালাতে দেয়ার অনুমতি চেয়েছে। চার এয়ারলাইন্সের মধ্যে তার্কিশ এয়ারলাইন্স ১ জুলাই থেকে এবং বাকিরা অনুমতি পেলেই ফ্লাইট চালু করবে বলে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এয়ার অ্যারাবিয়া ঢাকা থেকে সরাসরি শারজাহ; ফ্লাই দুবাই ও এমিরেটস দুবাইয়ে এবং তার্কিশ এয়ারওয়েজ তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে ফ্লাইট পরিচালনা করে। তুরস্ক ছাড়া অন্য রুটগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও ফ্লাইট পরিচালনা করে।
চার এয়ারলাইন্সের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। তিনি বলেন, তারা আমাদের কাছে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। তবে আমরা স্ব স্ব দেশের সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা তাদের বলেছি, যদি তাদের ফ্লাইট আমাদের দেশে আসে এবং তাহলে আমাদের দেশের এয়ারলাইন্সকেও সেদেশে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। আশা করছি তারা এই অনুমতি দেবে।

সেক্ষেত্রে কবে নাগাদ বাকি এয়ারলাইন্সগুলো অনুমতি পেতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মাত্রই (১৬ জুন থেকে) কাতার এয়ারওয়েজকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছি। এক সপ্তাহ এ ফ্লাইট চলাচল পর্যবেক্ষণ করবো। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে।

 

এ বিষয়ে তার্কিশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার এজাজ কাদরি বলেন, গত ১২ জুন থেকে তুরস্কে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে দেশটির সিভিল এভিয়েশন। এছাড়া ঢাকায় অবস্থিত তার্কিশ দূতাবাসও সেদেশে ভ্রমণের বিষয়টি উৎসাহিত করছে। তাই আমরা ১ জুলাই থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছি। যদি সব পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে তাহলে অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে তার্কিশ এয়ারলাইন্স।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২১ মার্চ থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় বেবিচক। দীর্ঘ ৬৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১ জুন থেকে অভ্যন্তরীণ আকাশপথে চলছে যাত্রীবাহী বিমান। আর আজ ১৬ জুন ঢাকা থেকে লন্ডন রুটে এবং কাতার রুটে ফ্লাইট চলাচল করার অনুমতি দিয়েছে বেবিচক। এর মধ্যে একটি ফ্লাইট আজ ভোরেই কাতারে গেছে। যদিও কাতারে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই যাত্রীরা শুধু ট্রানজিট হিসেবে দোহা বিমানবন্দর ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে যেতে পারবেন।

এদিকে অভ্যন্তরীণ আকাশপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর ও সৈয়দপুর রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও এখনো দেয়া হয়নি কক্সবাজার, বরিশাল, রাজশাহী বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এই তিনটি বিমানবন্দর স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী এখনো প্রস্তুত হয়নি। তারা লোকাল সাপোর্ট নিশ্চিত করতে পারলেই সেখানে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে।