তালায় আফসানা হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামি গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২২


বি এম বাবলুর রহমান (তালা-সাতক্ষীরা)

তালার চাঞ্চল্যকর আফসানা হত্যা মামলার এজাহার নামীয় এক নং আসামি মোছাঃ রোকেয়া খাতুনকে গ্রেফতার করেছে তালা থানা পুলিশ।

বুধবার (১৯ জানুয়ারী) তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খাঁন এক প্রেসব্রিফিংয়ে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামের আফসানা হত্যা মামলার এজাহার নামীয় এক নং আসামি মোছাঃ রোকেয়া খাতুন কে গ্রেফতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সুত্র মতে জানা যায়:- তালা থানাধীন তেতুলিয়া ইউনিয়ন লাউতারা গ্রামের একটি পুকুরে গত ইংরেজি ৩০/০৪/২১ তারিখে দুপুর অনুমান ০১.০০ টার সময় ভিকটিম আফসানা খাতুন (০৫) পিতা আব্দুল কাদির মোড়ল সাং লাউতাড়া ( ৪ নং ওয়ার্ড) থানা তালা জেলা সাতক্ষীরা এর মৃত লাশ পানিতে ভাসা অবস্থায় একই গ্রামের প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে।
ভিকটিমের পিতার চাচা লতিফ মোড়ল এর এর লিখিত অভিযোগ প্রাপ্ত হয়ে তালা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নম্বরঃ ০৬ তারিখ ০১/০৫/২১ খ্রিঃ রুজু হয়। ভিকটিম আফসানা খাতুন এর লাশ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত সহ ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। একই তারিখ ময়নাতদন্ত শেষে আফসানা খাতুন লাশ তার পিতার অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ভিকটিমের পিতা আব্দুল কাদির মোড়ল এর প্রথম স্ত্রী নার্গিস খাতুন এর সাথে দাম্পত্য কলহ ও বনিবনা না হওয়ায় ২০২০ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এ সময় তাদের দাম্পত্য জীবনে তাদের ঔরসে একটি কন্যা সন্তান নাম আফসানা খাতুন জন্ম নেয়।বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটার পর কাদের মোল্লা ও তার পরিবার একমাত্র কন্যা সন্তানটিকে মানুষ করার জন্য কাদের মোল্লার পরিবার তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ মোতাবেক গত ২৬/১০/২০ খ্রিষ্টাব্দ আব্দুল কাদির মোড়ল দ্বিতীয় স্ত্রী মোছাঃ রোকেয়া খাতুন ( ২৩)পিতাঃ মোঃ আলতাফ বিশ্বাস মাতাঃ জরিনা বেগম গ্রামঃ জেয়ালা থানাঃ তালা জেলাঃ সাতক্ষীরা এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা্ঃ রোকেয়া খাতুন বিয়ের পর হতে এইসব কন্যা ভিকটিম আফসানাকে দেখতে পারত না এবং যখন তখন মারপিট করত।
এই নিয়ে প্রায়ই রকেয়া খাতুন তার স্বামী এবং শ্বাশুড়ীর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হত। এক পর্যায়ে রোকেয়া খাতুন(২৩) প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে এবং উক্ত শিশুকন্যা আফসানা খাতুন কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন অর্থাৎ যে তারিখে ভিকটিম আফসানা খাতুন এর লাশ পাওয়া যায় অর্থাৎ ৩০/০৪/২১ খ্রিষ্টাব্দ দুপুর অনুমান ১২.৩০ টার সময় স্বামীর বসত বাড়ির পার্শ্ববর্তী এক শরিকের পুকুরে গোসল করার নাম করে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়। গভীর পানিতে উক্ত শিশুকে নিয়ে পুকুরের পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং বাড়িতে চলে এসে নির্বিঘ্নে সংসারের কাজকর্ম করতে থাকে।
অতঃপর ঘটনাটিকে পুকুরে ডুবে শিশু আফসানা খাতুন এর মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রচারণা চালানো হয়। এই ঘটনার ১০/১২ দিন পর মোছাঃ রোকেয়া খাতুন তার স্বামীর মনের অবস্থা বুঝে এই কন্যা শিশু হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করে। ইতিমধ্যে ভিকটিমের পিতা তার দ্বিতীয় স্ত্রীর এই জঘন্য হত্যাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারে নাই। আসামি যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেই চিন্তা করে তিনি থানায় না এসে প্রথমে আদালতে একটি সি আর মামলা দায়ের করেন। সি আর মামলাটি তদন্ত করছিলেন এসআই প্রীতিশ রায়। অপমৃত্যু মামলা এবং সি আর মামলাটির তদন্তে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিমের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা এবং মোছাঃ রাবেয়া খাতুনের স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শোনেন এবং নিশ্চিত হন। ইতিমধ্যে এই ঘটনাটি পিবিআই সাতক্ষীরাও তদন্ত করেছেন।

সর্বশেষ মোঃ আব্দুল কাদির মোড়ল(৩২) পিতা মৃত আবুল কাশেম মোড়ল গ্রামঃ রাউতাড়া (৪ নম্বর ওয়ার্ড) থানাঃ তালা জেলাঃ সাতক্ষীরা গত ১৮/০১/২২ খ্রিষ্টাব্দ তালা থানায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুসাম্মাৎ রোকেয়া খাতুন(২৩) পিতাঃ মোঃ আলতাফ বিশ্বাস মাতা জরিনা বেগম গ্রাম জেয়ালা নলতা থানাঃ তালা জেলাঃ সাতক্ষীরা এর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বরঃ ১২ তারিখ ১৮/০১/২০২২ খ্রিস্টাব্দ ধারা ৩০২ পেনাল কোড।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খাঁন জানান মামলায় এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি মোছাঃ রোকেয়া খাতুন(২৩) কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পৃথ্বীশ রয় গতকাল গভীর রাতে গ্রেপ্তার করেছেন এবং আজ বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আসামি রোকেয়ার স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড এর ব্যবস্থা করেন। আসামির স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিজ্ঞ বিচারক জনাব মোঃ রাকিবুল ইসলাম বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালত-৩ সাতক্ষীরা। মামলাটির তদন্ত চলছে।