তালার কার্তিক চন্দ্র দাসের মৃত্যু আত্নহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা চলছে গুুঞ্জন

প্রকাশিত: ৭:০৫ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২২

বি এম বাবলুর রহমান, তালা-সাতক্ষীরা
তালা জাতপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র দাস আত্নহত্যা না কি তাকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

কার্তিক চন্দ্র দাস সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার জাতপুর গ্রামের মৃত নটবর দাশের ছেলে সে একজন পশু চিকিৎসক ও ব্যাবসায়ী ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ,কার্তিক চন্দ্র দাস গত ১৪ মে প্রতিদিনের ন্যায় সকাল ৯ টার পর বের হয়ে যায়। ঐ দিন সকাল ১১টার সময় তিনি বাইসাইকেল করে যশোর জেলার চিনেডোলা বাজারে জনৈক স্বপন ওরফে তপন দাশের বাড়িতে পৌঁছান ৯০ কিলোমিটারের রাস্তা এত তাড়াতাড়ি বাইসাইকেল করে কিভাবে পৌঁছালো তা বোধগম্য নয়। তার পর থেকে তিনি হারিয়ে গেছেন মর্মে ১৪ মে তালা থানায় ০৪৭ নং এর একটি জিডির কথা উল্লেখ করে কার্তিকের ভাইপো আশিষ কুমার সরকার চাচা হারিয়ে গেছে তার সন্ধান চেয়ে ১৬ মে অনলাইন ও ১৭ মে প্রিন্ট মিডিয়ায় সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করান। তালা থানায় ০৪৭ নং জিডি কার্তিক চন্দ্র হারানো জিডি তার কোন অস্তিত্ব নেই বলে তালা থানা সুত্রে জানা গেছে। ১৭ মে রাতে বা কোন এক সময় তিনি যান অর্থাৎ (১৮ মে) বুধবার সকালে কেশবপুর উপজেলার লালপুর গ্রামের মাঠ থেকে কচা গাছের সাথে গলায় গামছা পেঁচানো কার্তিক চন্দ্র দাস এর লাশ উদ্ধার করেন কেশবপুর থানার পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় কেশবপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। কেশবপুর থানায় কার্তিক চন্দ্র দাস এর নাবালক ছেলে পল্লব দাশ কে দিয়ে পরিবার অপমৃত্যু মামলা প্রসঙ্গে একটি লিখিত অভিযোগ করে সূ কৌশলে লাশ ময়না তদন্ত শেষে গ্রহন করে পর দিন পারিবারিক ভাবে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। অপমৃত্যু প্রসঙ্গ পত্রে উল্লেখ করেন হারিয়ে যাওয়া কার্তিক চন্দ্র দাস এর নিখোঁজের বিষয়ে ১৭ মে তালা থানায় একটি হারানো জিডি করা হয়েছে যার নং ৭২২ কিন্তু এই জিডিও কার্তিক চন্দ্র দাস এর হারানো জিডি না।
একই বিষয় নিয়ে দুটো ভুয়া জিডির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ৭২২ ও ০৪৭ নং জিডি কার্তিক চন্দ্র দাস এর হারানো জিডি তার তথ্য তালা থানায় পাওয়া যায় নি। লাশ মৃত্যুর ঘটনা স্থান থেকে দেড় দুই কিলোমিটারের মধ্যে কার্তিকের এক বোনের বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। অন্ধকার ঘনঘটায় বেরিয়ে এসেছে পৈতৃক সম্পত্তি বন্টন নিয়ে দ্বীর্ঘদিন বাড়িতে যেন আগুন ধরে গেছে কার্তিক চাই সঠিক বন্টন তাই বুঝি তার এই পরিণতি তিনি যে এভাবে চলে যাবেন তা কেউ মেনে নিতে পারছে না। হারানো বিজ্ঞপ্তি ও পরিবারের সদস্যদের বলা মতে তিনি সব সময় লুঙ্গি পরতেন বিশেষ কোন দিন হয়তো প্যান্ট পরতেন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় লুঙ্গি পরা কার্তিক চন্দ্র দাস এর মৃতদেহে কখনো না পরা অপছন্দের ট্রাউজার পরা ছিলো ট্রাউজার আসলো কোথা থেকে তার পরনে। সকলের প্রশ্ন আত্নহত্যা না কি অপহরণের পর গুম ও পরিকল্পিত হত্যা। আইনের ভাষা অনুযায়ী সর্বশেষ ঘটনা স্থলের আওতাধীন এলাকায় সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতে হয় এখানে আইনে ব‍্যাখ‍্যায় ব্যারিস্টার ইমরুল হায়দার( ঢাকা সুপ্রিমকোর্ট) জানান ঘটনা স্থল অথ‍্যাৎ প্লেজ অফ অকারেন্স যে থানার আওতাধীন সেই থানায় সংস্লিষ্ট বিষয়ে অবগত করাই আইনের পরিভাষা অন্যথায় আইনের পরিপন্থী হবে।কিন্তু এখানে তার উল্টো, ঘটনা স্থল যশোর জেলা কতোয়ালি থানা জিডি করা হয়েছে সাতক্ষীরা জেলার তালা থানায়।

অনুসন্ধানে সার্বিক বিষয়ে পরিলক্ষিত হয়েছে কার্তিক চন্দ্র দাস হারিয়ে গেছে বলে দৌড় ঝাঁপ করে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা একাধিক মনগড়া জিডির ভুয়া তথ্য দিয়ে আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাশ গ্রহণ করা। এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে ভালো মানুষ কে পাগল সাজিয়ে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের কারণেই তাকে এই ভাবে মেরে ফেলেছে। পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল রহস্য উন্মোচন হবে বলে মনে করেন এলাকার মানুষ। কার্তিক চন্দ্র খুব ধীরে সাইকেল চালাতেন তিনি যে এক ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার রাস্তা যেতে পারবেন তা বাস্তবতার আলোকে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে হারানো সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় পর ১৭ মে ৭৩১ নং এর একটি জিডি তালা থানায় দেখা গেছে।

কার্তিক চন্দ্র দাস বর্তমানে তিন ভাই রড় ভাই কালীপদ ইতিমধ্যে মারা গিছেন কার্তিক ছিলো মেজ ও ছোটভাই গনেশ চন্দ্র দাস ওরফে আব্দুল গনি ( নবমুসলিম) সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অবসর গ্রহণ করেছেন এবং তিনি তার পরিবারের সাথে সকল সম্পর্ক বিদ্যমান রেখেছে, তিনি এখন সম্পতির ভাগবাটোয়ারা দায়িত্বে আছেন। তিনি এখন তার পিতার বসত ভিটায় থাকেন যা সরেজমিনে দেখা গেছে। গোপনীয়তা রক্ষা করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রা অনুসন্ধান করলে আত্নহত্যা না কি হত্যা তার আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে স্থানীয়রা জানান। কেশবপুর যশোর এলাকায় তাদের আত্নীয় স্বজন বাড়িতে গুম করে রেখে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারনা করছেন এলাকাবাসী।
কালিপদ দাশের দুই ছেলে আশিষ চন্দ্র দাশ ও দেবাশিষ চন্দ্র দাশ স্থানীয় এক এনজিও সংস্থার বড় পদে চাকুরী করেন। উক্ত এনজিও প্রভাবশালী হওয়ায় এবং এই পরিবার উক্ত এনজিওর ছত্রছায়ায় এলাকায় নানা অপকর্মের ও ত্রাসের কর্মকান্ড কায়েম করায় তাদের বিরুদ্ধে প্রাকাশ্যে কেউ কথা বলতে চাচ্ছে না। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক ব‍্যক্তি জানান, আমরা স্থানীয় এই এনজিও থেকে লোন নিয়েছি কার্তিকের মারার বিষয়ে সত‍্য কথা বললে আমাদের লোন বন্ধ করে দিবে এরা। স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান ভালো একটা মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে আমরা সত‍্য কথা বলতে পারছি না। বললে এলাকায় থাকতে পারবো না। আমাদের এলাকায় বসবাস করতে হয়। তারা খুব প্রভাবশালী কথা বললে আমাদের এলাকা ছাড়া করে দিবে।
কালিপদ দাশের পুত্র দেবাশিষ দাশের কাছে একাধিক ভুয়া জিডির বর্ণনা প্রসঙ্গে এবং তড়িঘড়ি করে হারানো সংবাদ প্রকাশ এটা কি পরিকল্পিত হত্যা কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা হত‍্যা করেছি যাহা পারেন তাই করেন পারলে আমরা ঠেকাবো। আশিষ চন্দ্র দাশ জিডি সংক্লান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মিথ‍্যা তথ‍্য প্রকাশ একাধিক ভূয়া জিডির নাম্বার দিয়ে তড়িঘড়ি করে লাশ সমাধিতোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোন তথ‍্য দিতে পারেননি। তিনিশুধু বললেন বড় ভুল করেছি ।
যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার জনৈক তপন ওরফে স্বপন কুমার জানান, কার্তিক চন্দ্র দাস ১৪ ই মে অনুমানিক সকাল ১০/১১ টার দিকে ভ‍্যান যোগে সাইকেল নিয়ে আমাদের এইখানে আসেন। এসে আমাকে বলেন আমি তোমাদের মামা সম্পর্কের হই। বাড়ি থেকে জমি জমা সব লিখে নেবে,আমাকে পার করো। না হয় ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমার জমিজমা লিখে নিবে না দিলে মেরে ফেলবে। তাদের নামে জমি লিখে দেওয়ার জন‍্য জোর করছে এবং মেরে ফেলার কথা বলছে।আমি তিনদিন খাইনি আমাকে খেতে দেও আমাকে বাঁচাও।আমাকে পার করো। তিনি আরো বলেন আমার বাসা থেকে বের হয় পাড়ায় বেড়ানোর কথা বলে কোথায় চলে গেছে সেটা আমি জানিনা। তালা থানার জাতপুর গ্রামে আত্মীয় থাকায় তাদেরকে মোবাইল ফোনে অবগত করি। পরবর্তীতে,তার জামায় ও অন‍্য একজন লোক এসে কার্তিক দাশের সাইকেল ও ঔষাধ বিশিষ্ট ব‍্যাগ দেখে গেছে।
কার্তিক চন্দ্রের নাবালক পুত্র পল্লব দাশ জানান, আমার বাবার সবসময় লুঙ্গি পরা থাকতো। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শার্ট আর লুঙ্গি পরে বের ছিলো। তিনি কখনও ট‍্যাওজার পরতেন না বাবার মৃত্যুদেহে ট্রাউজার কেন ছিল বুঝতে পারছি না।সকালে বের হওয়ার পর থেকেই ফোন বন্ধ ছিলো। যোগাযোগ করতে না পেরে থানায় জিডি করি। আমরা সবাই একই সাথে এক পরিবারে বসবাস করি। জাতপুর বাজারের জমি নিয়ে ঝামেলা চলছিলো সেটা পারিবারিক বিষয় বাবার এই অস্বাভিব মৃত‍্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। কেশবপুর বিদ্যান্দকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন মুঠোফোনে জানান তিনি ঝুলানো লাশের খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। কেশবপুর থানার পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যান।

এ বিষয়ে কেশবপুর থানার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন জানান, কার্তিক চন্দের লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ‍্যে একটি অপমৃত‍্যু মামলা রেকর্ড হয়েছে।ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তির পর পরবর্তী ব‍্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।