পশ্চিম সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় জেলেদের অবাধ বিচরণ, ‘কর্তৃপক্ষ নিরব’

প্রকাশিত: ১০:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২২


এম কামরুজ্জামান, শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের গহীন বন টহল ফাঁড়ির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় নিষিদ্ধ (অভয়ারন্য) এলাকায় চলছে বনজীবিদের অবাধ বিচরন। মাছ কাঁকড়া আহরন সহ চলছে মূল্যবান কাঠ কাটা সহ মায়াবি হরিন নিধন।অতি গোপনে হঠাৎ করে তদন্ত করলে ঘটনার সত্যতা মিলবে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন গহীন সুন্দরবনের দোবেকী, পুষ্পকাটি, নোটাবেকী, মান্দারবাড়ীয়া ও হলদেবুনিয়া বন টহল ফাঁড়ির অধিনে বেশ কিছু খাল রয়েছে যাহা অভয়ারন্য এলাকা। উক্ত এলাকার মাছ, কাঁকড়া সহ বিভিন্ন প্রানীর প্রজনন এলাকা হিসেবে সরকারী ভাবে ঘোষনা করা হয়েছে। উক্ত এলাকায় মাছ, কাঁকড়া আহরন তো দুরের কথা কোন নৌকা প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪টি ষ্টেশন যথা বুড়িগোয়ালিনী কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক। এ সমস্ত ষ্টেশন থেকে মাছ কাঁকড়া আহরনের যে সমস্ত পারমিট, (পাশ) দেওয়া হয়।
উক্ত পারমিটে সিল মারা থাকে। অভয়ারন্য এলাকায় গাছকাটা, মাছধরা, নিষিদ্ধ ও অজামিন যোগ্য অপরাধ। ১৩০ গ্রাম এর নিচে মহিলা কাঁকড়া ও ২০০ গ্রাম এর নিচে পুরুষ কাঁকড়া ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। কম্পারমেন্ট নং- ৪৯, ৫১এ, ৫১ বি, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫ প্রবেশ নিষিদ্ধ, আটল দিয়ে কাঁকড়া ধরা নিষেধ, এছাড়া ২৫ ফুটের কম চওড়া খালে মাছ ও কাঁকড়া ধরা যাবেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছক কয়েকজন জেলে জানান, বন্দো বাদায় ঢুকতে গেলে প্রতি নৌকায় গোন প্রতি (১৫ দিনে) ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয় ফরেষ্টারদের।এছাড়া স্মাট পেট্রোল টিমের সামনে পড়লে তাদেরকেও টাকা দিতে হয়। তথ্যে আরো জানা য়ায় শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালী এলাকার আবু ছালের ২২ খানা, ডুমুরিয়া গ্রামের অয়ন কোম্পানি ১৪-১৫ খানা, বুড়িগোয়ালিনী বাজারে কথিত শরিফ ডাক্তারের ৬০ খানা, কৌখালী বুলবুলির ১০-১২ খানা, নুরুজ্জামানের ৮-১০ খানা, ভেটখালির রহিমের ৮০-৯০ খানা, দাতিনাখালী ইসমাইল সানার ৪০-৪৫ খানা, বুড়িগোয়ালিনী জালাল মোল্যার ৩০ খানা, সহিদুল মোল্যার ৩৫ খানা, ০৯ নং সোরা সহিদুল মেম্বারের ২৫ খানা, কয়রা থানার কামরুল কোম্পানি ১৫-২০ খানা, কোবাতক্ষ এলাকার লুৎফার মোল্ল্যার ২০-২৫ খানা, চাদনিমুখার ওয়াসকুরুনী ও শহীদ এর ১০ খানা নৌকা সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ-কাঁকড়া আহরন ও মায়াবী হরিণ সহ মূল্যবান কাঠ নির্ধন অব্যহত রেখেছে। এই সমস্ত কোম্পানী গুলো সুন্দবনের ভিতরে নিষিদ্ধ এলাকার বন টহল ফাড়ির সাথে উঃকোচের মাধ্যমে যোগাযোগ করে নিষিদ্ধ এলাকায় নৌকাগুলো আবস্থান করছে। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর কয়েকটি পত্রিকায় ‘‘রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায়, সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় জেলেদের অবাধ বিচরন’’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায়, সংবাদটি বিভাগীয় বনকর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহাম্মদ মহসিন হোসেন এর নজরে আসে।তিনি গত ১৩ ডিসেম্বর গোপনে সুন্দরবনের অভয়ারন্যে অভিযানে এসে ৫৩ নং কম্পারমেন্টের আওতায় তালতুলি খাল থেকে নৌকাসহ ৪ জেলে সহ ৪০ কেজি কাঁকড়া আটক করেন। আটককৃত কাঁকড়া নদীতে অবমুক্ত করেন এবং বনমামলা দায়ের পূর্বক ৪ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। অথচ তৎকালিন পুষ্পকাটির বন টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তার বিরোধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, অভয়ারন্যে নৌকা ঢুকতে যে উৎকোচ নেওয়া হয় উক্ত টাকার ভাগ রেঞ্চ অফিসেও পেয়ে থাকেন।এ বিষয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্চ কর্মকর্তা এম কে ইকবাল হোছাইন চৌধুরীর মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে ও খুলনা রেঞ্জে ২টি স্মাট পেট্রোল টিম সার্বক্ষনিক অভিযান দিচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবনের অভয়ারন্যে টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই বা আমার অফিসে কোনো টাকা নেওয়া হয় না, খুলনা বিভাগীয় অফিসের যে কোন কর্মকর্তা কর্তৃক গোপনীয় ভাবে সুন্দরবনের অভয়ারন্যে অভিযান দেয়ার দাবী জানিয়েছেন শ্যামনগরের সুধীমহল।