যশোরের বারান্দিপাড়ায় অবৈধভাবে বালি বিক্রয়ে মেতেছে একটি অসাধু চক্র

প্রকাশিত: ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২৩, ২০২১

বারান্দিপাড়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় ভৈরব নদের পাড় থেকে অবৈধভাবে বালি নিয়ে বিক্রয় করছে একটি অসাধু চক্র। যশোর শহরের বারান্দিপাড়ার মালোপাড়ায় ওই অসাধু চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা কেউ। এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

মালোপাড়ার নদীর পাড় এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, এক পাশে বসে চারজন তাস খেলছেন। পাশের টোঙ ঘরে লুডু পাতানো রয়েছে। এখানে নদীর কোলঘেষে খননের বালি প্রায় আট ফুট উচ্চতায় স্তুপাকারে সাজানো রয়েছে। একের পর এক ট্রলিতে ভরে এসব বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে উপস্থিতদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বালি কিনতে কার সাথে কথা বলতে হবে। বাচ্চু নামে একজন দায়িত্বে আছেন পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি শুধু বালি কত গাড়ি যাচ্ছে তার খবর রাখছেন। ভালো বলতে পারবেন শেখহাটির ফারুক। মোবাইলে ফারুকের সাথে এই প্রতিবেদককে কথা বলিয়ে দেন বাচ্চু।

ফারুক জানান, এ বিষয়ে মোবাইলে নয়, সরাসরি কথা বলতে হবে। তিনি প্রতিবেদককে শেখহাটি তমালতলা মন্দিরের সামনে যেতে বলেন। এরমধ্যে তিনটি ট্রলি বালিতে ভর্তি হয়ে গেলে সেগুলো একসাথে ছেড়ে যায় । পিছু নেয় সাংবাদিক টিম। শেখহাটির ব্রিজ পার হয়ে তামালতলায় নিয়ে ওই বালি ফেলা হয় একটি পুকুরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে পুকুরে বালি ফেলা হচ্ছে তা ওই এলাকার বিএনপি নেতা কামরুল হাসান শিমুলের। এখান থেকে মোবাইলে ফোন দেয়া হয় ফারুককে। তিনি জানান, বালি নিতে হলে কথা বলতে হবে শেখহাটির ইমরানের সাথে, অন্যথায় কাজ হবেনা। তিনি নিজেও ইমরানের কাছ থেকে বালি কিনে একটি পুকুর ভরাট করাচ্ছেন বলে জানান।

ফারুকের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে কল করলে ইমরান ফোন ধরেন না। ঘটনার আধা ঘণ্টা পর তিনি নিজেই এই প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, সবাই ১২টাকা সেপ্টি দরে বালি বিক্রি করলেও তিনি করছেন আট টাকা দরে। যিনি বালি কিনবেন পরিবহন খরচ তাকেই বহন করতে হবে। এরসাথে শর্ত হচ্ছে, ট্রলিতে ছাড়া এখান থেকে বালি নেয়া যাবে না। প্রতি ট্রলিতে ৮০ সেপ্টি করে বালি টানা হয়। এ কাজের ঠিকাদার পলাশ ও তিনি। প্রয়োজনে যোগাযোগ করার আহবান জানান ইমরান।

এদিকে মালোপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিন অর্ধশত ট্রলি ভর্তি বালু এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। ট্রলি যাওয়া-আসার কারণে ইতিমধ্যে এলাকার রাস্তা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
তারা জানান, এলাকার ইমরান, বাবু ও ধর্মতলার পলাশ বালির এই অবৈধ কারবার চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান বলেন, ‘নদীর মাটি কিংবা বালি বিক্রি করার কোনো নিয়ম নেই। যারা এ কাজ করছেন তারা গোপনে ও অবৈধভাবে করছেন। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।’
পলাশ ও ইমরান কীভাবে বালি বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীলগঞ্জ, শেখহাটি অঞ্চলে খননের কাজে ঢাকার প্রতিষ্ঠান ডলি কন্সট্রাকশন নিয়োগ পেয়েছিল। কিন্তু, তারা ব্যর্থ হওয়ায় তা বাতিল হয়ে যায়। এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। পলাশ তাদের কেউ নন। এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান।