বিজয় দিবস : মিনহাজ উদ্দীন আত্তার 

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০

 

সোবহে সাদিকের সূর্য পূর্ব আসমানে ক্রমশঃ রাঙা হয়ে উঠছে। স্নিগ্ধ সমিরনে ভোরের আগমনী বার্তা নিয়ে দিক দিগন্তে ছুটে বেড়াচ্ছে। পাখিরা শাখে শাখে কল-কাকলী জুড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। আকাশ বাতাস তাদের গানে মুখরিত। নদীও আজ কলকলতানে বয়ে চলছে। ঢেউয়ে ঢেউয়ে বারি লেগে মনমাতানো আওয়াজে মন-প্রাণ ভরে দিয়েছে। শিশিরভেজা দূর্বাগুলোতে কে যেন চোখের অলক্ষ্যে মুক্তোর দানা ছড়িয়ে দিয়েছে। পুষ্পডালে গোলাপ, নার্গিস, হাসনাহেনারা ঘোমটা খুলে স্নিগ্ধ হাসি হাসছে। তাদের সৌরভে মাঠ-ঘাট উদ্ভাসিত। বনফুলেরাও মুখ থুবড়ে নেই। তারাও আজ হাসি ছড়াচ্ছে। আজকের প্রভাত এত মধুময় হয়ে দেখা দিল কেন? আনন্দের দুয়ার খুলে যেন বেরিয়ে এসেছে সব আনন্দ। প্রতিটি নারী-পুরুষ আর যুবক-যুবতীর মনে আনন্দের উর্মিলা ঢেউ খেলে যাচ্ছে। এর সঠিক কারণ সবারই জানা।

 

আজ ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। বিজয়ের আনন্দে পুরো জাতি আজ উদ্ভাসিত। এ দিন মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় দেশের স্বাধীনতা। মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে এ বিজয়। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। স্বাধীনতার ইসলামী স্বরূপ হচ্ছে- মানুষ মানুষের গোলামী করবে না। মানুষ একমাত্র তার সৃষ্টিকর্তার গোলামী করবে।

 

আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু। দিতে হয়েছে লাখ লাখ প্রাণের তাজা রক্ত। আল্লাহপাক পরাধীনতা পছন্দ করেন না। স্বাধীন ভূখন্ড যেখানে নেই সেখানে কিছুই নেই। তাই ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব অতি ব্যাপক। সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোন জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা স্বাধীনতা চায় না; পরাধীন থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সে কতই না চেষ্টা করে থাকে। আর এই স্বাধীনতার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। পরবর্তী সময়ে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন। ইসলামের ইতিহাস পাঠে জানা যায় পৃথিবীতে এই পর্যন্ত যত নবী ও রাসূলের আগমন হয়েছে, তারা সবাই সমাজ, দেশ ও জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাতা জন্য কাজ করেছেন। আর এ স্বাধীনতা অত্যাচারী শাসকের দাসত্ব থেকে জাতিকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে হোক বা ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হোক, এক কথায় বলা যায়, সব ধরনের দাসত্ব ও পরাধীনতা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবীদের কাজ। ইসলাম স্বাধীনতাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি দেশপ্রেম ও দেশাত্ববোধকেও গুরুত্ব দিয়েছে এবং একে ঈমানের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। স্বদেশপ্রেম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হৃদয়ে যেমন ছিল, তেমনি তার সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যেও বিদ্যমান ছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনার পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে তাঁর মুখ ফিরালেন জন্মভূমি মক্কার দিকে, যেখানে তিনি নবুওয়ত লাভ করেছেন এবং তাঁর পূর্ব পুরুষরা বসবাস করে আসছেন। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ হিসেবে তাদের নিজের পরিচয়, সম্মান ও মর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে দুনিয়ার ইতিহাসে নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন।

 

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য দাসকে নিজ খরচে মুক্ত করেছেন। তেমন সারা বিশ্বকে দিয়েছেন স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ। আল্লাহ পাকের কাছে কামনা করি, আমাদের যেন কোন দাসত্বের জীবনে জড়িয়ে পড়তে না হয়। নিজ দেশের প্রতি, দেশের সদস্যদের প্রতি আমাদের অনেক ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক: সাংবাদিক, ও মানবাধিকার কর্মী