যশোরের ভুল চিকিৎসায় রোগী হত্যাকারী চিকিৎসক ডা. পরিতোষ রোগী দেখছেন দেশ ক্লিনিকে

প্রকাশিত: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২১

যশোর শহরের আলোচিত বন্ধন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার পরিতোষ কুন্ডু জামিনে থেকে ফের রোগী দেখে যাচ্ছেন। তিনি ভুল চিকিৎসায় রোগী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। কিন্তু এরপরেও তিনি রোগী দেখে চলেছেন অনুমোদনহীন ‘দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’। এখনও কৌশলে আটক এড়িয়ে সর্বরোগের বিশারদ সেজে তিনি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ফি নিচ্ছেন। সাজা থেকে বাঁচতে নিহতের স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের ম্যানেজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ‘বন্ধন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ বন্ধ করে দেয়াসহ ডাক্তার পরিতোষের শাস্তি দাবি করেছেন।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাতে যশোর শহরের গাজীরঘাট রোডের দোকানি ইসমাইল হোসেন হিরু তার স্ত্রী ময়না বেগমকে (২৬) সিজার করাতে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্য আসেন। এসময় কম টাকায় সিজার করিয়ে দেবে বলে হাসপাতাল চত্বর থেকে ফুঁসলিয়ে ডাক্তার পরিতোষ কুমারের কয়েক দালাল তাদের নিয়ে যায় বন্ধন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। জানানো হয় ১০ হাজার টাকার মধ্যে সিজারসহ রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।
এরপর ডা. পরিতোষ কুমার কুন্ড রোগী দেখে জানান, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই মুহূর্তে তাকে সিজার করতে হবে। রাত সাড়ে ৯টায় ময়না খাতুনকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০ টায় ডাক্তার অপারেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে জানান রোগী ও সন্তান সুস্থ আছে। কিন্তু রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে রোগীর হঠাৎ খিঁচুনি উঠে মৃত্যু হয়। বিষয়টি প্রচার হলে প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে উঠে আসে চিকিৎসা প্রটোকল না মেনে সিজার করায় তার মৃত্যু হয়েছে। কোতোয়ালি থানা পুলিশ ডাক্তার পরিতোষ কুমার কুন্ডু ও ম্যানেজার আকরামুজ্জামানকে আটক করে। এঘটনায় মৃত ময়না বেগমের স্বামী ইসমাইল হোসেন ৩ জনের নাম উল্লেখ ও ২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। আসামি করা হয় খুলনা ডুমুরিয়ার নরিয়া গ্রামের অশ্বিন কুমার কুন্ডুর ছেলে ডা. পরিতোষ কুমার কুন্ডু, শার্শার শিকারপুরের আমজাদ হোসেনের ছেলে নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার জাহিদের ভাড়াটিয়া বন্ধনের ম্যানেজার আকরামুজ্জামান ও পুলিশ লাইন টালি খোলার শাহ আলম জনির স্ত্রী নার্স সুরাইয়া খাতুন। এদের মধ্যে ডাক্তার পরিতোষ ও ম্যানেজার আকরামুজ্জামানকে আদালতে চালান দেন তদন্ত কর্মকর্তা ।

মামলায় আদালত থেকে জামিন লাভ করে দুই আসামি বাদী ইসমাইল ও তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দেয়া শুরু করে মামলা তুলে নিতে। তাদের বাড়ি লোকজন পাঠিয়ে হুমকি দেয়। এরপর তদন্ত কার্যক্রম শেষে গত সপ্তাহে মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। প্রতারক চিকিৎসক পরিতোষ কুমার কুন্ডু, ম্যানেজার আকরামুজ্জামান ও কুইন্স হাসপাতালের নার্স সুরাইরা খাতুনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হায়াৎ মাহমুদ খান জানান, ময়না খাতুনকে সিজার করার সময় কোনো এ্যানেসথেসিয়া (অজ্ঞান) ডাক্তার ছিলেননা। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার পরিতোষ কুমার কুন্ডু নিজেই রোগীকে অজ্ঞান করে সিজার করেছিলেন। কোনো ডিগ্রিধারি নার্স নিয়োগ না থাকায় অপারেশনের পর রোগীকে সঠিক মনিটর করা হয়নি। ডাক্তার ডিগ্রি ব্যবহার করছেন মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনী অবস্। অথচ এই তিনটি বিভাগের চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। চার্জশিট দেয়ার পরও ডাক্তার পরিতোষ এখনো রোগী দেখছেন। যশোর জেনারেল হাসপাতাল এলাকার বিতর্কিত প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি রোগী দেখছেন। এব্যাপারে নিহত ময়নার স্বজনরা জানিয়েছেন, মা হারা দু’সন্তান মানবেতর জীবনযাপন করছে। আর হত্যায় জড়িত ডাক্তার প্রকাশ্যে বেড়াচ্ছেন। তারা এ ঘটনার কঠোর সাজা চান।