যশোরে বিষাক্ত ‘মদপানে’ ছয়ৃজনের মৃত্যু!

প্রকাশিত: ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২০
যশোরের ঝিকরগাছায় গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এরা বিষাক্ত বা ভেজাল মদপানে মারা গেছেন। অবশ্য পুলিশের দাবি, ভেজাল বা বিষাক্ত মদপানে কারও মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে, উপজেলা হাসপাতালে অ্যালকোহলজনিত কারণে চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। তার মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর শিকার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আবুল গাজীর ছেলে হাবিল গাজী (৬০), বর্নি গ্রামের সুরত আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৪০), হাজিরালী গ্রামের মৃত গহর আলীর ছেলে আসমত আলী (৫০), পুরন্দরপুর গ্রামের মৃত ফকির ধোপার ছেলে হামিদুর রহমান (৫৫), রাজাপুর গ্রামের আলফাজের ছেলে নুর ইসলাম খোকা (৫৫) এবং ঋষিপাড়ার মৃত রসিক লালের ছেলে নারায়ণ (৫৫)।
গুরুতর অসুস্থ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সকালে পুরন্দরপুর গ্রামের জলিল সর্দারের ছেলে মিন্টুর কাছ থেকে মদ কিনে খোকা, নারায়ণ ও হামিদুরের সঙ্গে তিনিও পান করেছিলেন। কিন্তু তিনি পরিমাণে কম পান করেন। তিনি চলে আসার পরও খোকা, নারায়ণ ও হামিদুর মদের আস্তানায় ছিলেন। বাড়িতে ফেরার পর তিনি নিজে এবং ওই তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের যশোরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোকা, হামিদুর ও নারায়ণ ওই দিনই মারা যান।
সোমবার গভীর রাতে খোকা, হামিদুরকে দাফন ও নারায়ণকে সৎকার করা হয়। এর একদিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হাবিল গাজী, ফারুক হোসেন ও আসমত আলী মারা যান। মৃত ব্যক্তিদের সবাইকে হাসপাতাল থেকে ‘হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে’ বলে ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে দাবি করছেন মদের আখড়ায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ওই ব্যক্তি।
তবে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করে ঝিকরগাছার পুরন্দরপুর এলাকার নাফিজ নামে ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির ভর্তির রেকর্ড পাওয়া যায়। তিনি পয়জনিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে হাসপাতাল রেজিস্টারে উল্লেখ আছে।
মদপানে অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাতে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক, ইনসপেক্টর (তদন্ত) মেজবাউর রহমান, সেকেন্ড অফিসার এসআই দেবব্রত দাসসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা মৃতদের বাড়ি বাড়ি যান। মৃতরা সবাই হৃদরোগে মারা গেছেন বলে তাদের পরিবার-সদস্যরা দাবি করেন। ওই সময় তারা হাসপাতালের ছাড়পত্রও দেখান।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ঝিকরগাছা থানার ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই মাত্র মৃতদের বাড়ি থেকে ঘুরে এলাম। তারা সবাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে আত্মীয়-স্বজনরা বলছে। সেই মর্মে তারা মেডিকেল ছাড়পত্রও দেখিয়েছে। ডাক্তার যদি হৃদরোগে মৃত্যুর ছাড়পত্র দেন, তাহলে আমি কীভাবে বলি তারা বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মারা গেছে?’
তবে মৃতদের মধ্যে হাবিল মদের কারবারি ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন ওসি। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে তাকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু  হাবিলের ছেলে আমাকে বলেছে, বাবা মদ বা বিষাক্ত কিছু খায়নি। অসুস্থতার কারণে মারা গেছে।
এদিকে রাত সোয়া ১১টার দিকে যোগাযোগ করা হলে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘ওই ছয়জনের মধ্যে কেউ হাসপাতালে মারা যায়নি। তবে বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া চারজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
তিনি আরও বলেন, কিছুক্ষণ আগে ২৫ থেকে ২৮ বছর বয়সী একজন ভর্তি হতে হয়েছেন। এই যুবক সন্ধ্যায় একবার বমি নিয়ে এসেছিল ভর্তি হতে। কিন্তু তখন কিছুটা ভালো বোধ করায় বাড়ি ফিরে যায়। পরে অবস্থা খারাপ হওয়া গুরুতর অসুস্থ এ যুবককে যশোরে রেফার করা হবে।
ডাক্তার জিয়াউল ইসলাম বলেন, ভর্তি হওয়া ওই চারজনই মদপানের কথা স্বীকার করেছে। হাসপাতালের রেজিস্টারেও সেভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।’