যেকোনো সময় বিদ্যালয়ের ভবন ধসে পড়তে পারে শিক্ষার্থীদের উপর

প্রকাশিত: ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২২

নিজস্ব প্রতিনিধি ||

যশোরের কেশবপুরের পাজিয়া ইউনিয়নের গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মানের ২৮ বছর পার হতে না হতেই ব্যবহারের অনুপযোগী এবং ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয়ের গ্রেড ভিম থেকে শুরু করে, দেয়াল, এবং পিলারে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন ও ফাটল। তবুও এ ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রম। এ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। তবে কাগজ কলমে আবেদনের বিষয়টি এখনো জানেন না বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

সরজমিনে গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবনে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত ছোট শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম। ভবনের বারান্দার অংশে ছয়টি পিলারে দেখা দিয়েছে ফাটল। ইতিমধ্যেই দুটি পিলারে সিমেন্ট খসে বের হয়ে গিয়েছে মরিচা ধরা রড। এদিকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ভেতর ছাদে এবং গ্রেড ভিমে দেখা দিয়েছে ফাটল। কখনো চলটা ধরে খসে খসে পড়ছে ছাদের অংশ। দেয়াল খসে বালি পড়ায় দেয়ালে স্টিকার সহ বিভিন্ন কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রায় একফুট মতো ডেবে গিয়েছে বিদ্যালয়ের শৌচাগার। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে সিলিং ফ্যানের হুক খসে সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান সহ আরও দুই শিক্ষার্থী আহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতিও দিন দিন কমে আসছে। ভুমিকম্প বা যেকোনো সময়ে এ ভবন ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ নন্দি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবনটি ১৯৯৩-৯৪ সালে নির্মাণ করা। বর্তমানে এ ভবনে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবনটিতে গত চার – পাঁচ বছর ধরে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সময়ে এ ভবনে ছোটা শোনামনিদের পাঠদান করা খুবই ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় এ ভবন ধসে পড়তে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষে ক্লাস নেওয়ার সময় এক সহকারী শিক্ষকের মাথায় ছাদ থেকে সিলিং ফ্যানের হুক খসে পড়ে শিক্ষকসহ দুই ছাত্র আহত হয়। এরপর বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে শিক্ষা অফিসার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে আবেদনের বিষয়টি কাগজ কলমে এখনো পর্যন্ত আমার জানা নেই।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে আমার মাথায় সিলিং ফ্যান ছাদ থেকে খসে পড়েছে। এ ভবনে ছোট শিশুরা খুবই ঝুকিপূর্ণভাবে পড়াশোনা করছে। যত দ্রুত সম্ভব নতুন ভবন ব্যবস্থা করা উচিৎ। অন্যথায় যেকোনো সময় এর থেকে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র সাকিবুল হাসান বলেন, ‘ক্লাস চলাকালে আমি স্যারের কাছে খাতা দেখাতে গিয়েছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে সিলিং ফ্যান খসে স্যারের মাথায় পড়ে। স্যারের মাথা কেটে যায়, সাথে আমারও মাথা কেটে যায়। আমরা এখানে ক্লাস করি। আমাদের ভয় করে এ ভাঙা স্কুলে ক্লাস করতে। আমরা নতুন স্কুল চাই।’

গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, ‘১৯৯৩-৯৪ সালে এ বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর ২৮ বছর পার হতে না হতেই এভাবে ভবনে ফাটল ভাঙ্গন ধরবে এটি আশ্চর্যজনক। তৎকালিন সময়ে যে সকল ঠিকাদার বা যারা দায়িত্বে ছিলো তাদের দূর্নিতী এবং অবহেলার ফলস্বরূপ আজকের এই ঝুকিপূর্ণ অবস্থা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল কমিটি আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিদ্যালয়টি নতুন ভবনের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে শিক্ষা অফিসার আমাদের আশস্ত করেছেন। আমরা দ্রুত নতুন ভবনের দাবি করছি।’

এদিকে ফ্যান খসে দূর্ঘটনার পর পরই ওই বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটলের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার।

এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার সরদার বলেন, গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাঙাচোরা ভবনের পরিবর্তে নতুন ভবন নির্মান করার একটি প্রস্তাব আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা নতুন ভবন তৈরির তালিকা পাবো এবং নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারবো।

ভাঙ্গাচোরা ভবনের বিষয়ে দ্রুত কোন ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাই ঝুকিপূর্ণ ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।