লালপুরে নিয়মবহির্ভুতভাবে বিদ্যালয়ের গাছ কর্তনের অভিযোগ।

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২১

নিজস্ব প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে নিয়মবহির্ভুতভাবে উচ্চ বিদ্যালয়ের গাছ কর্তনের অভিযোগ উঠেছে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর নান্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নান্দরায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। এ অভিযোগের অনুলিপি লালপুর উপজেলা পরিষদ, জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা বনকর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রদান করা হয়। তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, নান্দরায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমির উপর নান্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান ও বিদ্যালয় চত্বরের বড় বড় গাছ অনৈতিকভাবে কেটে ফেলার লক্ষ্যে বুধবার দুপুরে এক জরুরী সভার আয়োজন করে। সেখানে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জোর গলায় বলেন, গাছ কেটেই ভবন নির্মাণ করা হবে এবং আমার সিদ্ধান্তই বড় সিদ্ধান্ত। এর পরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান শ্রমিক লাগিয়ে ছোট বড় ৮টি মেহগনি গাছ কাটতে শুরু করেন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। অভিযোগে তিনি আরো বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও আমার উর্দ্ধতন কোনো কর্মকতাকেই এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। এমনকি আমাকেও তারা বিষয়টি জানায়নি। আমি নান্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেনের নিয়মবহির্ভুত কর্মকান্ডের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায়।
গাছ কাটার বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে নান্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান বলেন, অন্য প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটার হুকুম দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। আমি এখানে চাকুরী করতে এসেছি। আমি কেন গাছ কাটার হুকুম দেব। তবে যারাই কাটুক সেটা নিয়মবহির্ভুতভাবে কেটেছে। আমি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার সাদ আহম্মেদ শিবলী বলেন, আমাকে একজন সহকারী প্রকৌশলী মোবাইল ফোনে বললেন নান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হবে। আপনি একটু নান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে আসতে বলেন। আমি বললাম আমার প্রধান শিক্ষক ওখানে গিয়ে কি করবে। এটা তো বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি না থাকলে হবে না। যেহেতু বর্তমানে কার্যনির্বাহী কমিটি স্থগিত আছে। সেহেতু প্রধান শিক্ষক তো আর বিদ্যালয়ের জমি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দান করতে পারবে না। আর আমাদেরও তো খুব শীঘ্রই ভবনের বরাদ্দ হবে। আমরা কোথায় ভবন করবো। উনি বললেন প্রধান শিক্ষক শুধু আসলেই হবে। আসতে বলেন। আমি তখন প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে গাছ কাটার বিষয়ে জানতে পেরে প্রধান শিক্ষককে বললে তিনি গাছ কাটার বিষয় জানেন না বলে জানান। আমি প্রধান শিক্ষককে তাৎক্ষনিক বলে বসি, আপনার প্রতিষ্ঠানে গাছ কাটা হয়েছে। এর দায়ভার আপনার উপরেই পড়ে। তিনি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে কারা গাছ কেটেছে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গাছ কাটার হুকুম দেওয়া প্রশ্নই আসে না। বিষয়টা নিতান্তই শিক্ষা অফিস আর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির। তারা সব কিছু ঠিকঠাক করলে ইঞ্জিনিয়ার অফিস কাজ করবে নয়তো করবে না। আর আপনারা যেহেতু সাংবাদিক সেহেতু এ বিষয়ে আপনাদের ভালোভাবেই জানার কথা।
লিখিত অভিযোগের কথা স্বীকার করে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, আমি এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অন্য প্রতিষ্ঠান কখনোই নষ্ট করতে পারে না। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।