শ্যামনগরে দুইটি ইট ভাটা’র বিষাক্ত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী সহ এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২

এম কামরুজ্জামান, শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

সাতক্ষীরা’র শ্যামনগরে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে দুই টি ইটভাটা। সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে অধিকাংশ ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হয় কাঠ ও ক্যামিকেল জাতীয় দ্রব্য। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান,সরকারি নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি কোন ইট ভাটা গড়ে তোলা যাবে না। অথচ উপজেলার নুরনগরে ইউনিয়নের রামজীবনপুর ও রতনপুর ইউনিয়নের নাটুয়ারবেড় গ্রামের একই সিমানায় দুইটি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। উক্ত ইট ভাটা দুইটি হচ্ছে আশা ব্রিকস যার পরিচালক আরব আলি ও মোস্তফা ব্রিকস এর পরিচালক গোলাম মোস্তফা। উক্ত ইট ভাটা হওয়ার পর থেকেই স্থানীয়রা বিরোধীতা করে আসছিল। অদৃশ্য কারনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইট ভাটা বন্ধ না করায় নুরনগরের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম দোলনা জনস্বার্থে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু অধ্যবতি ইট ভাটা বন্ধ না হওয়ায় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম দোলনা গত ২৩ আগস্ট ঢাকার পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগ দায়ের করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার ম্যানেজার জানান, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ইটভাটায় বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। সেই মাটির জোগান আসে কৃষি জমি থেকে। এজন্য প্রতিটি ইটভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরি ভাগের মাটি নেওয়ার। এক দিকে কৃষি জমি ধংস হচ্ছে অন্য দিকে আইনের মার প্যাচে একই স্থানে দুইটি ভাটা গড়ে উঠেছে। এদিকে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-তে বলা হয়েছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, হাট-বাজার এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, এবং বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি ও কৃষি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই রামজীনপুর ও নাটুয়ারবেড় এর দুইটি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ফসলি জমিতে। ইট ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ ছাড়াও স্থানীয়রা নানা ধরনের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষেতের পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠায় আগের তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। সরকার ফসলি জমির ওপর ইট ভাটা স্থাপন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কয়েক বছরের মধ্যে এসব জমির উৎপাদন শূন্যে নেমে আসবে। স্থানীয়রা আরও বলছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে শ্বসতন্ত্রের রোগব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে অসুস্থতা বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে কোন মানুষের ক্ষতি হয় এমন স্থানে ইট ভাটা গড়ে তোলা নিষেধ থাকলেও রামজীবনপুর দাখিল মাদ্রাসার পাশেই দুইটি ইট ভাটা কিভাবে গড়ে ওঠে এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রামজীবনপুর এলাকায় ইট ভাটায় আমরা সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে দেখব। যদি তারা আইন অমান্য করে থাকেন তাহলে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।