সরকারের অর্থে যশোরে ৩ হাজার কৃষকের বাড়িতে সবজি বাগান

প্রকাশিত: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০

সালমান হাসান রাজিব

বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষের জন্য প্রণোদনা সহায়তা পাচ্ছে যশোর অঞ্চলের কৃষক। উদ্দেশ্য বাড়িতে ফলানো সবজি দিয়ে কৃষক পরিবারের বছরভর পুষ্টির চাহিদা পূরণ। আর এই সবজির বাগান করার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে সার, বীজ ও নগদ অর্থ বিতরণ চলছে। জেলার ৯১টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৯১২ কৃষক তাদের বাড়িতে সবজির এই বাগান গড়ে তুলবে। যেখান থেকে এসব কৃষক পরিবারের প্রত্যেকের প্রতিদিন অন্তত পক্ষে এককেজি করে সবজির সংস্থান হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কালিকাপুর মডেল অনুসরণ করে কৃষক পরিবারের সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে যশোরের আট উপজেলার ৯১টি ইউনিয়নে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব ইউনিয়নের ২ হাজার ৯১২ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক সবজির বাগান করার এই সরকারি প্রণোদনা সুবিধা পাচ্ছে। প্রত্যেক ইউনিয়নের ৩২ জন কৃষককে এর আওতায় আনা হয়েছে। প্রতিটি বাগানের জন্যে সার বীজ ও অন্য খরচাদি দেওয়া চলছে। বাড়ির আঙিনায় সবজির বাগান করার জন্য যশোরের জন্য বরাদ্দ প্রণোদনার পরিমাণ প্রায় ৭৭ লক্ষ টাকা। সূত্রমতে, কালিকাপুর মডেল অনুসরণ করে এক শতক জমিতে সবজির বাগান করতে হবে। আর সেখান থেকে বছর জুড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে এক কেজি করে কোন না কোন সবজি পাওয়া সম্ভব হবে। জানা গেছে, এই লক্ষ্যে দেশের ৪ হাজার ৪৩১টি ইউনিয়নে কালিকাপুর মডেল অনুসরন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের বাড়িতে ৩২টি সবজি বাগান করার জন্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৯২০ টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের জন্যে অর্থ বরাদ্দও হয়েছে। প্রতিটি বাগান হবে এক শতকের। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সবজি মডেল উদ্ভাবন হয়েছে। যার মধ্যে কালিকাপুর সবজি উৎপাদন মডেল অন্যতম। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুরে অবস্থিত ফার্মিং সিস্টেম গবেষণা এলাকায় গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে এই সবজি উৎপাদন মডেল উদ্ভাবন হয়। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই গবেষণা চলে। এই মডেলের সবজি বিন্যাস অনুসরণ করে চাষাবাদ চার সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের সারা বছরের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য বসতবাড়ির রোদযুক্ত উঁচু স্থানে ৫ মিটার লম্বা ও ৫ মিটার চওড়া জমি নির্বাচন করে পাঁচটি বেড তৈরি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি বেডের প্রস্থ হবে ৮০ সেন্টিমিটার এবং দুই বেডের মাঝখানে নালা থাকবে ২৫ সেন্টি মিটার মিটার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, বৈশ্বিক ও জাতীয় করোনা সংকট মোকবিলায় যেকোন মূল্যে কৃষি উৎপাদনের ধারা সচল রাখতে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি সদ্ব্যবহারেরও তাগিদ দিয়েছেন। সেজন্য তাই জেলার প্রতিটি উপজেলায় চলতি বছরে কৃষকদের বাড়িতে রোপণের জন্য বিনামূল্যে লক্ষাধিক সবজি চারা বিতরণ চলছে। কৃষি অফিসারদের স্ব-উদ্যোগে এইসব চারা বিতরণ হয়েছে। এছাড়া নিজ বাড়ির আঙিনায় কালিকাপুর মডেল অনুসরণ করে সবজির চাষাবাদের জন্য প্রণোদনা কার্যক্রম শুরুও হয়েছে। বীজ ও সারের পাশাপাশি অনান্য খরচ নির্বাহের জন্য নগদ অর্থও দেওয়া চলছে। মোবাইল ব্যাকিংয়ের পাশাপাশি কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রণোদনার টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।