সান্তাহারে শ্মশানের রাস্তা কেটে কারখানার ড্রেন নির্মাণের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৯:২১ পূর্বাহ্ণ, মে ৫, ২০২৩

মোঃ আহসান হাবিব শিমুল (আদমদীঘি, বগুড়া)

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে এক এগ্রোফুড কারখানার মালিক হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান ঘাটের রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। ওই ড্রেন দিয়ে তাঁর কারখানার পচা, দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন করছেন। ছাই জাতীয় বর্জ্যে দ্রুত ভরাট হয়ে গেছে শ্মশানের সামনে দিয়ে প্রবাহিত স্বচ্ছ পানির ইরামতি খাল। বর্তমানে পানি অভাবে শ্মশানটি পরিত্যক্তপ্রায়। সান্তাহার পৌর শ্মশান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রতন মুখার্জী বলেন, এখন শুধু সুইপার ও শ্মশানের পাশের গ্রামের অতি দরিদ্র হিন্দু পরিবার সীমাহীন কষ্ট করে তাদের মৃতদেহের সৎকার করতে যায় কালে-ভাদ্রে। রাস্তা না থাকায় দরিদ্ররা কাঁধে করে মৃতদেহ পোড়ানোর খড়ি ও সৎকার সামগ্রী বহন করেন। তিনি বলেন, শ্মশান সংলগ্ন খালের উপড় থাকা রেলব্রিজের উত্তর দিকে অল্প পরিমাণে জমে থাকে পচা ও দুর্গন্ধ যুক্ত দূষিত পানি। সেই পানি কলসে করে বহন করে মৃতদেহ ধোয়ানো ও সৎকার কাজে থাকা স্বজনরা গোসল করতে বাধ্য হয়। তিনি আরো বলেন লাশের সৎকারে প্রচুর পরিমাণে স্বচ্ছ পানির প্রয়োজন হয়। সেই পানি এবং রাস্তার অভাবে সান্তাহার শহর ও আশপাশের গ্রামের সচ্ছল হিন্দু পরিবার ওই শ্মশানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে যায় নওগাঁর শ্মশানে। বুসরা এগ্রোফুড ও বুসরা অটোমেটিক রাইস মিল কারখানার ড্রেনের কারনে শ্মশানে চলাচল বন্ধ হওয়া ছাড়াও কাঁচা ড্রেনের কারনে পাশের জমির ধান ও সরিষা আবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলে জানান শ্মশান পার্শ্ববর্তী কোমলদোগাছি গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষি।

জানা গেছে, সান্তহার পৌরসভা শহর ও সংলগ্ন পাঁচ গ্রামে কয়েক হাজার হিন্দু মানুষ বসবাস করেন। যুগ যুগ ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মৃতদেহ স্বচ্ছ পানিতে টইটম্বুর ইরামতি খাল পাড়ে উন্মুক্ত ভাবে দাহসহ সৎকার কাজ চলে আসছিল। প্রায় ২০ বছর পূর্বে পৌরসভা ও শ্মশান কমিটি শ্মশানে চুল্লিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে। পরে ওই শ্মশান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে হাফেজ মোঃ বেলাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী একে একে তিনটি এগ্রোফুড কারখানা নির্মাণ করেন। সেই কারখানায় সৃষ্ট পচা, দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি এবং বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটের মিটারগেজ রেলসড়কের ঢালের গোড়া কেটে ইরামতি খাল পর্যন্ত কাঁচা ড্রেন নির্মাণ করে। শ্মশান পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ দাবী করেন নির্মিত ড্রেনের স্থান (বড় আখিড়া রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে) দিয়েই ছিল তাদের শ্মশানে মৃতদেহ ও মৃতদেহ পোড়ানোর খড়িসহ সৎকারের সামগ্রী বহনের ভ্যান চলাচলের রাস্তা। কারখানা মালিক প্রভাবশালী হবার কারনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এবিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে কারখানা মালিক হাফেজ মোঃ বেলাল হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, ড্রেন করেছি রেলওয়ের জায়গা দিয়ে। ড্রেন কাটার কারনে শ্মশানে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে এই কথাটা শ্মশান কমিটি বা হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ আমাকে জানায়নি। আমি কারো ক্ষতি চাই না। তারা আমার সাথে দেখা করে সমস্যার কথা বিস্তারিত ভাবে জানালে আমি তাদের সমস্যা সমাধান করে দেব।