২০২১-২২ অর্থবছরের ‘আত্মনির্ভরশীলতা’র বাজেটে ৯ অগ্রাধিকার lorem ipsum lorem ipsum প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০২১ ৩ জুন করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করছে সরকার। বাজেটে আসলেই সব সময় বিভিন্ন পক্ষের দাবি-দাওয়া উঠে আসে- কেমন বাজেট চাই? এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই নিজেদের বাজেট ভাবনা তুলে ধরেছেন। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ‘মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবিলা’র বাজেট চেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরও চাওয়া- ‘জীবন ও জীবিকা’ বাঁচানোর ‘আত্মনির্ভরশীল’ বাজেট। আসন্ন বাজেট ‘মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবিলা’ হোক চেয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ২৪ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে দলটি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাতকে গুরুত্ব দিয়ে এই তিনখাতে জিডিপির পাঁচ শতাংশ করে মোট ১৫ শতাংশ বরাদ্দ চেয়েছে তারা। এছাড়াও ‘সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতি’ প্রতিষ্ঠা, শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি ‘অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন, কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জিডিপির ৬-৭ শতাংশ বরাদ্দ প্রদান, ‘দিন আনে দিনে খান’ শ্রেণির মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের প্রণোদনা প্রদান এবং ‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজে’র আওতায় আনার প্রস্তাবনা দেয় বিএনপি। বিএনপির এ প্রস্তাবনার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বাজেট ভাবনার মাঝেও সরকারের সফলতা বা অর্জনের কোনো একটি বাক্যও খুঁজে পেলাম না বিএনপি নেতাদের থেকে। বিএনপি যত ইতিবাচক ভাবনাই ভাবুক, তারা তাদের সেই সংকীর্ণতার বৃত্ত থেকে আজও বের হতে পারেনি।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে যে যে ক্ষেত্রে যথাযথ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা, সেটাই দিচ্ছে। বিএনপি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেটা গদবাধা। কিছু একটা বলতে হবে তাই বলেছে। তারা এটা নিয়ে গভীর চিন্তাও করেনি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা স্টাডি করেনি। এদিকে বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দল, ট্রেড বডি বা সিভিল সোসাইটি থেকে যেকোনো প্রস্তাবনা সরকার ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করে। জাতির জনক বলেছেন, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলেন, সংখ্যাই যদি সে একজনও হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব। জাতির জনকের আদর্শের দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এই নীতি ধারণ করে। জনগণের সরকার হিসেবে বাজেটসহ সকল কাজে জনগণের চিন্তা-চেতনা একোমোডেট করে অধিকতর গণমুখী করার মানসিকতা সরকার লালন করে বলেই দেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলছে।’ জানা গেছে, ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে এবার মানুষের জীবন ও জীবিকাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তাদের বাজেটে সক্ষমতার প্রমাণও রেখেছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের উত্তরণে আত্মনির্ভরশীলতার বিষয়টিও স্পষ্ট করেছে। তারা বলছেন, নিম্নআয়ের মানুষ এই করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এটি আশাব্যাঞ্জক। জিডিপির গ্রোথের চেয়ে জীবন ও জীবিকার সংস্থানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এটিই সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। অনানুষ্ঠিক প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে বা অস্বীকৃত চাকরিজীবীদের (ইনফরমাল ওয়ার্কার) কর্মসংস্থানের ইঙ্গিত আছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সব জায়গায় বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন রাষ্ট্র পাবলিক সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয়। সেটা আমাদের বাজেটেও হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, পৃথিবীর অনেক দেশে করোনার কারণে বড় ধরনের বাজেট ঘাটতি রয়েছে। আমাদের এখানে সেটা একেবারেই নগণ্য। জিডিপির পাঁচ শতাংশের মতো। এটা খুব স্বাভাবিক। মুদ্রাস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে পাঁচ শতাংশেরও কম। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৭। তারা বলছেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার বেঁচে থাকা, নিরাপদ থাকা এবং অর্থনীতি সচল রাখা। সেটাই এবারের বাজেটে দেখা হয়েছে। গতবারের বাজেট এবং এবারের বাজেট প্রায় একই। এটা আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ। এনবিআরের মাধ্যমে কর আদায় আগে ছিল ৬০ শতাংশ, এবারে ৫৮.০১ শতাংশ। এনবিআর বহির্ভূত ১৯.০৪ শতাংশ। বৈদেশিক সহায়তা শুধুমাত্র ০.০৭ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণও অনেক কম। মাত্র ১৩ শতাংশ। এতে প্রমাণ হয় আমাদের জাতীয় সক্ষমতা বেড়েছে। আমরা আত্মনির্ভরশীল। বাজেটের ৯ অগ্রাধিকার ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯টি। এগুলো হচ্ছে- বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা; কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়ন; কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেয়া; অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সেচ ও বীজ প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা; ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ; সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ; গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ (মুজিববর্ষের প্রধান কার্যক্রম) কার্যক্রম বাস্তবায়ন; নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখা এবং শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন। করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অগ্রাধিকার দেয়া খাতগুলোর মধ্যে আছে- স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন ও খাদ্য-নিরাপত্তা জোরদার কর্মসূচি। SHARES অর্থনীতি বিষয়: