৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে চিকিৎসক নিয়োগের ঘোষণা

প্রকাশিত: ১:০৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২১

করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশে নতুন করে চার হাজার চিকিৎসক ও চার হাজার নার্স নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এর প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আজ শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী।

জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগের লক্ষ্যে ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের থেকে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মেডিভয়েসকে বলেন, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন এখন গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জেলা ও উপজেলাগুলোতে হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। চিকিৎসার জন্য তারা ছুটছেন ঢাকার দিকে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালগুলো দিশাহারা হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে রোগী সামলাতে চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন। দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই করোনা রোগীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। আইসিইউ তো দূরের কথা, কোথাও কোথাও সাধারণ শয্যা পাওয়াও দুরুহ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট দেখা দিচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রশাসনের উচিত ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া।’

চলমান ৪২তম বিসিএস থেকেও এ চিকিৎসক নেওয়া যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে ৩৯তম থেকে নিলে সুবিধা হলো, ওদের লিখিত ও মৌখিকসহ সব কিছু সম্পন্ন আছে। ওই সময় শুধু তাদের নিয়োগ দিতে পারেনি। না দিয়ে আরেকটা বিসিএসের আয়োজন করলো। এ ছাড়া ৩৯ এর চিকিৎসকদের বয়স সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা আর কোনো বিসিএসে অংশ নিতে পারবেন না। এ কারণে আমার বক্তব্য হলো, যেহেতু সরকার ওখান থেকে কয়েক হাজার চিকিৎসককে বাছাই করে রেখেছে, সেহেতু এখান থেকে সম্ভব হলে দেওয়া হোক। কারণ আমাদের তো জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে হারে করোনা বাড়ছে, আমাদের তো অনেক চিকিৎসক দরকার। সুতরাং সরকার চাইলে সংকট উত্তরণে ৩৯ থেকে নিয়োগ দিতেই পারে। আর যারা ৪২তম বিসিএসে অংশ নিয়েছে, তাদের তো অনেক সময় লাগবে। কারণ সবার মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়নি। আমার কথা হলো, ওদেরকে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু তাদের নিয়োগের পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ৩৯ থেকে নেওয়া যেতে পারে। দেশে বর্তমানে ৪০ হাজার চিকিৎসক বেকার। এর বিপরীতে অনেক পদও খালি। আমি চাই, সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে যাক। সরকার যেন তাদেরকেও নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। তারা তুখোর মেধাবী। তারা স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যেহেতু জরুরি ভিত্তিতে নেওয়ার প্রশ্ন আসছে, তাই ৩৯তম থেকে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নাই।’

একই মত দিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য ও শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ এমনটি করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যা বলবে তাই হবে। তবে এ মুহূর্তে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হলো—তারা জানালেন, সেখানে মাত্র তিনজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ে তারা জরুরি বিভাগ সামলাবেন নাকি, করোনা রোগী দেখবেন? তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুততম সময়েই অনেক চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। এ চাহিদা মেটাতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা করতে চাইলে ৩৯তম বিসিএস থেকে এসব চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।’

এমনটি হলে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ৪২তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ চিকিৎসকরা। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৪২তম থেকেও নেওয়া যেতে পারে। করোনার মধ্যে যদি সম্ভব হয়, তাহলে দ্রুততম সময়ে মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে তাদেরকেও নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই বিসিএস থেকে নিয়োগ দিতে চাইলে পুলিশ ভ্যারিফিকেশন বাদ দিলেও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কমপক্ষে আরও দুই-আড়াই মাস সময় লাগবে। এতে ক্রমবর্ধনশীল করোনাভাইরাসে দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এসব বিবেচনায় ৩৯তম থেকেই নিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এটাই তাদের কিসমত।’