৪২তম বিসিএস থেকে করোনা মোকাবিলার জন্য চিকিৎসকদের নিয়োগের দাবি…

প্রকাশিত: ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২১

শীতকালে করোনা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পূর্বানুমান থেকে সংক্রমণ সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে দুই হাজার সহকারী সার্জন (চিকিৎসক) নিয়োগের উদ্যোগ নেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরই অংশ হিসেবে ওই বছরে নভেম্বরে ৪২তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ৩১ হাজার চিকিৎসক। প্রায় এক মাস পর ২৯ মার্চ প্রকাশিত ফলাফলে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ২২ জন।

এদিকে গত মার্চ থেকে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সম্প্রতি দেশে অতিসংক্রমণশীল ভারতীয় ডেল্টা ভারিয়েন্ট ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় জেলা ও উপজেলাগুলোতে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল শনিবার (১০ জুলাই) নতুন করে আরও চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগের ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় ব্যাপক সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করতে চাইলে ৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ঘোষিত চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে একই বিসিএস থেকে বারবার নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাকে ‘বৈষম্যপূর্ণ’ বলে আখ্যা দেন তরুণ চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত ৪২তম বিশেষ বিসিএস থেকে নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবি জানান তারা।

এজন্য প্রয়োজনে অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দিয়ে ভাইভা সম্পন্ন করা ডা. জামিউর রহমান আকাশ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনায়াসে ৪২তম বিসিএসের ভাইভা নেওয়া যায়। পিএসসি চাইলে অনলাইনেও নিতে পারে। অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে বিদেশে অনেক কোর্সের সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। সব কিছুই এখন অনলাইনে করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির জন্য অনলাইন চলে এসেছে। যদি অনলাইনে ভাইভার আয়োজন করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় জেলা প্রশাসক বা সিভিল সার্জন অফিসে ভাইভা দিতে পারেন। এটা খুবই সহজসাধ্য বিষয়। এমনকি কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রিলির ফলাফলের ভিত্তিতে ছয় হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিতে পারেন।’

৩৯তম বিসিএস থেকে নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগের চিন্তাকে অযৌক্তিক ও বৈষম্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে একটি বিসিএস হয়েছে। সেখান থেকে প্রথমে সাড়ে চার হাজার, পরে আবার দুই হাজার মিলিয়ে সাড়ে ছয় হাজার নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে যাদের ডাকা হয়নি, তাদের অনেকে ৪২তম বিসিএসেও চান্স পেয়ে গেছেন। এতো আগে নেওয়া বিসিএস থেকে নিয়োগের চিন্তা করা জুনিয়র চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার নামান্তর। কারণ তারাও সরকারি চাকরি করতে প্রবল আগ্রহী। তারা জীবনের প্রতিষ্ঠা প্রত্যাশা করে। সুতরাং তাদেরকে সুযোগটা দিতে হবে। আর করোনার কারণেই ৪২তম বিশেষ বিসিএসের আয়োজন করা হয়েছে। প্রিলিমিনারি নেওয়া হয়েছে। ভাইভাও তাড়াতাড়ি নেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে ৬০ ভাগ ভাইভা শেষ, ৪০ ভাগের বাকি। পিএসসি চাইলে অনলাইনে এটা এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়ে নেওয়া সম্ভব। আমাদের জোর দাবি থাকবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পিএসসি এভাবে উদ্যোগী হোক। এ ছাড়া তাঁরা চাইলে প্রিলির ফলাফলের ভিত্তিতেই নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারে।’

ডা. আকাশ বলেন, ‘৩৯ এর চিকিৎসকরা ৪২তম বিসিএসও দিতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে তারা দ্বিগুণ সুবিধা ভোগ করেছে। কিন্তু আমরা ৩৯ এ অংশ নিতে পারিনি। সে হিসাবে ৪২তম বিসিএসটা আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য একটি সুযোগ।’

তিনি বলেন, ‘ওই বিসিএসে যারা নন-ক্যাডার ছিলেন, তারা তো ক্যাডারের মর্যাদাও পেয়েছে। তড়িঘড়ি করে ৩৯ থেকে যাদেরকে নিয়োগ দিবেন তাদের কেউ কেউ আবার ৪২তম বিসিএসেও চান্স পেয়ে যাবেন। তাদের সিটগুলো নষ্ট হবে। কারণ পিএসসির বিদ্যমান যাচাই প্রক্রিয়ায় এটা বোঝার সুযোগ নাই যে, কোনো শিক্ষার্থী আগের বিসিএসে চান্স পেয়েছে কিনা। যখন ৪২ এর ফল হবে, তখন সেখান থেকে ২ হাজার নেওয়া হলে দেখা যাবে, ওই তালিকার ৫০০ চিকিৎসক ৩৯তম নিয়োগ পেয়ে আছেন। এসব সিট তো সরকারের জন্য নষ্ট হলো। সুতরাং ৪২তম বিসিএস থেকে নিলে এ ধরনের কোনো সমস্যা হবে না, কিংবা কোনো প্রার্থীর পেছনে সরকারের দ্বিগুণ খরচের আশঙ্কাও থাকবে না।’

জানতে চাইলে ৪২তম বিসিএসে প্রিলিতে উত্তীর্ণ ডা. তাশফিকুর রহমান পিয়াল মেডিভয়েসকে বলেন, অনেক বিচার-বিশ্লেষণের পর ৩৯তম বিসিএস থেকে আর নিয়োগ দেওয়া হবে না চিন্তা করে ৪২তম বিসিএসের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তৎকালীন সচিব মো. আব্দুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বেশ বলিষ্ঠ কিছু বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ৩৯ এর যারা অধিকতর মেধাবী তাদেরকে এরই মধ্যে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন যারা শেষের দিকে আছেন, তাদের থেকে আর নিতে চাই না। এবার আমরা নতুন ও অধিকতর মেধাবীদের সুযোগ দেবো। সুতরাং ৩৯তম বিসিএস থেকেই যদি আবার নিয়োগ দেওয়া হবে, তাহলে করোনা মহামারীতে তাড়াহুড়া করে কেন ৪২তম বিসিএসের আয়োজন করা হলো?’

‘অনেকেই বলছেন, এটা যুদ্ধকালীন সময়—বিষয়টি যদি এমনই হয়ে থাকে, তাহলে যোদ্ধা (চিকিৎসক) বাছাই করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণের দরকার কী? এজন্য দুই-আড়াই মাস সময় কেন অপচয় করা হবে? পিএসসি চাইলে ভাইভা এড়াতেও পারে। কারণ প্রকৃত মেধা তো প্রিলিতেই যাচাই হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এই মহামারীতে সংক্ষিপ্ত কোনো প্রক্রিয়া বের করা যেতেই পারে। কর্তৃপক্ষ চাইলে এটা অনলাইনে ১/২ দিনেও তো সম্ভব’, যোগ করেন এ চিকিৎসক।