ভাঙন পাড়েই হলো ঈদের নামাজ

প্রকাশিত: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২০

জোয়ার-ভাটার স্রোতে চলে জীবন। জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত করতে হয় সংগ্রাম। সুপার সাইক্লোন আম্পানের পরের দিন শুরু হয় আতংকের। ঈদের দিনও তার ব্যতিক্রম নয়। সকাল হতেই হাজারো মানুষ দল বেঁধে চলে এসেছে বাঁধ রক্ষার কাজে। মাঝে ঝুড়ি কোদাল রেখেই হাঁটু পানিতে পড়ে নিতে হলো ঈদের নামাজ।

কারো মুখে নেই হাসি, নেই আনন্দ ভাগাভাগি করার চিত্র। সবার মুখে ফুটে উঠেছে হতাশার এক করুন দৃশ্য। প্রকৃতির এমন ভয়াবহ আচরণের কাছে অসহায় এসব মানুষ। তবে ঈদের নামাজে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে কান্না মেখে সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইলেন মুক্তি।

সোমবার (২৫ মে) বেলা সাড়ে দশটায় কয়ড়া উপজেলার ২নং কয়রা নদী ভাঙন পাড়ে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজে ইমামতি করেন কয়রা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন।

হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সুপার সাইক্লোন আম্পানের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়ড়া উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বাতাস আর পানির তোপে উপকূলবর্তী এ উপজেলার ১৪টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে ২নং কয়রার এই স্থানটিতে। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁধ ধ্বংস হয়েছে এখানে। ফলে নিয়মিত জোয়ার ভাটার পানি উঠানামা করছে। বন্যার হাত থেকে এলাকা বাঁচাতে রাতদিন লড়ছেন গ্রামবাসী।

ঝড় ও বন্যার কারণে কয়রা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ছোটোবড়ো ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। অভ্যন্তরীণ প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ার ভাটার পানিতে আটকা পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

ঈদের নামাজ শুরুর আগে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কয়ড়ার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের আর ঈদের আনন্দ নেই। বাঁধ রক্ষা করতে না পারলে আমাদের মরতে হবে তাছাড়া কোনো উপায় নেই।’

এ সময় তিনি মজবুত বাঁধ নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ বাঁধার কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান।