মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণ করবে জাপানি কোম্পানি

অবশেষে ভাঙা হচ্ছে কমলাপুর স্টেশন

প্রকাশিত: ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২১

শেষ পর্যন্ত ভাঙতেই হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলস্টেশন। নকশা অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ছিল ২০ কিলোমিটার। পরে এর দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার বাড়ানো হয়। এ কারণে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঐহিত্যবাহী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, কমলাপুর রেলস্টেশনটি ভেঙে আরও আধুনিক ও মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নকশাও চূড়ান্ত হয়েছে। অনেকের মতে, কমলাপুর স্টেশনটি ভেঙে ফেলা হলে ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটি স্মৃতি হয়ে থাকবে। এটার সাথে বহু মানুষের আবেগ জড়িত।

মেট্রোরেল সূত্র জানায়, দুই ভাগে চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। এর মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি প্রায় ৫০ শতাংশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর অংশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বসানো হয়েছে রেল লাইন। আগারগাঁও অংশেও কাজ এগিয়ে চলেছে। তবে মতিঝিল অংশে সেই আগের মতোই কাজ চলছে ঢিমেতালে। এদিকে জাপানে মেট্রোরেলের কোচ নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। চলতি মাসেই মেট্রোরেলের প্রথম পাঁচটি ট্রেন নির্মাণ শেষ হবে। মেট্রোরেলের কর্মকর্তারা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি জানুয়ারিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সামনেই জাপানে হবে নতুন ট্রেনের ট্রায়াল রান।

জানা গেছে, বর্তমান কমলাপুর রেলস্টেশন ভেঙে মেট্রোরেলের স্টেশন কিছুটা উত্তর দিকে এগিয়ে নিয়ে নতুন আইকনিক স্টেশন নির্মাণ করা হবেএর আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে বর্তমান স্টেশনসংলগ্ন জায়গায় মেট্রোরেল স্টেশন আর কমলাপুর স্টেশন আরেকটু উত্তর দিকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, নতুন স্টেশনটি হবে বর্তমান স্টেশনের অবিকল রূপে। এতে অত্যাধুনিক সুবিধা যেমন যুক্ত হবে তেমনি কাঠামো রাখা হবে বর্তমান স্টেশনের মতো। প্রাথশিক নকশা চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, পূর্ণাঙ্গ নকশা এখনও বাকি আছে। কমলাপুর রেলস্টেশন কবে ভাঙা শুরু হবে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, সব কিছু ফাইনাল হওয়ার পর বলা যাবে। তিনি বলেন, নকশা চূড়ান্ত হলে এমনভাবে কাজ চলবে যাতে সবকিছু দ্রুত করা যায়। রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, জাপানি কোম্পানি একদিকে কমলাপুর রেলস্টেশন ভাঙবে, আরেকটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করবে। তাতে ভাঙতে ভাঙতেই নতুন স্টেশন তৈরী হয়ে যাবে।

রেলওয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এক সময় ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ছিলো তৎকালীণ পূর্ব বাংলার এবং পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন। বাংলা বিভক্তীকরণের পর ঢাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরে রূপান্তরিত হয়। তাই ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে প্রতিস্থাপন করে তুলনামূলক নতুন ও অধিক বড় রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় সদ্য প্রতিষ্ঠিত বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের আমেরিকান শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কমলাপুর স্টেশন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কমলাপুর স্টেশনের নকশা করেন মার্কিন স্থপতি রবার্ট বাউগি। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে কমলাপুর স্টেশন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৮ সালে শেষ হয়। ১৯৬৮ সালের ২৭ এপ্রিল স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১লা মে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যায় এবং এর পরের দিন স্টেশনটিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে মাল্ডিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজিমা করপোরেশনের নেতৃত্বে একটি সাব ওয়ার্কিং গ্রুপ। এর আগে ডিএমটিসিএলের বর্ধিত মেট্রোরেল লাইনের নকশায় আপত্তি জানিয়েছিল কাজিমা করপোরেশনও। পরে মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত নকশা ও মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবের প্রস্তাবিত নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে নতুন একটি নকশা প্রস্তাব করেছে কাজিমা করপোরেশন। তারা প্রস্তাবে বলেছে, বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশন বিল্ডিংটি উত্তরপাশে সরিয়ে দিতে হবে। স্টেশন বিল্ডিং সরিয়ে দেওয়ার ফলে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে, মেট্রো ট্রেনের লাইন বদলের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সেখানে গড়ে তোলারও প্রস্তাব দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে কবে নাগাদ কমলাপুর স্টেশন ভাঙা হবে এবং তখন কীভাবে ট্রেন ও যাত্রী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি কোনো কর্তৃপক্ষ। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, খুব শিগগিরি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।