ঝিকরগাছার ভাইরাল কবির বিন সামাদের বিরুদ্ধে ভাটা হতে ইট ছিনতাইয়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২১

চৌগাছা প্রতিনিধিঃ
ফেইসবুক ভিত্তিক পেজ ‘ঠিকানা টিভি’র পরিচালক ও কৌতুকাভিনেতা কবির বিন সামাদের বিরুদ্ধে দুই গাড়ি ইট ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত কবির বিন সামাদ যশোরের ঝিকরগাছার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের নবগ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের পুত্র।

জানা যায়, বুধবার (২৮ জুলাই) সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে যশোরের চৌগাছার কমলাপুরে এইচ.এম ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায় কবির বিন সামাদ দলবল নিয়ে উপস্থিত হয়। সেসময় তিনি ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন নিজেদেরকে সাংবাদিক ও ডিবির সদস্য পরিচয় দিয়ে দুই গাড়ি ইট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ইটভাটার ম্যানেজার সবুজ হোসেন জরুরি পরিষেবা নং ‘৯৯৯’- এ কল করলে চৌগাছা থানা পুলিশের সদস্যরা অবৈধ ভাবে নেওয়া দুই ট্রাক ইট উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এঘটনায় ইটভাটার মালিকের ভাগ্নে ও ম্যানেজার সবুজ হোসেন বলেন, “সকাল ১০ টার দিকে কবির বিন সামাদ ও তার সঙ্গীয় লোকজন এসে আমাদের কাছে সাংবাদিক ও ডিবির লোক পরিচয় দেয়। কারো কোনো কথা না শুনে তারা জোর করে দুই গাড়ি ইট ছিনতাই করে চলে যেতে থাকে। এমন সময় আমি ৯৯৯-এ কল করি। তারা আমাকে চৌগাছা থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়, আমি ঘটনা খুলে বলার পর পুলিশ সদস্যরা এসে দুই গাড়ি ইট থানায় নিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরই কবির বিন সামাদকে থানায় নিয়ে আসা হয়।”

“আমি কবির বিন সামাদকে চিনতাম না। তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলেন। পরে জানতে পারলাম এই টাউট ফেইসবুকে কৌতুক আর ইসলামিক বক্তব্য দিয়ে ভিডিয়ো ছাড়ে”, যোগ করেন সবুজ হোসেন।

এব্যাপারে ইটভাটার মালিক মোঃ গোলাম রসুল বলেন, “ঘটনার সময় আমি যশোরে ছিলাম। ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমার ভাটা থেকে ইট ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে আমি দ্রুত চলে আসি। আমার সামনেই সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া কবির বিন সামাদ ও সাইফুল নামের এক ব্যক্তিকে থানায় ডাকা হয়। পরে ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলার পর তারা চলে যায়।”

“আমার এই ইট ভাটার মালিকানা নিয়ে মাহবুর নামের এক ব্যক্তির বিরোধ রয়েছে। সেই ভুয়া ডিবি আর সাংবাদিকদের ভাড়া করে পাঠিয়ে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।”

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কি-না জানতে চাইলে গোলাম রসুল বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তারা দিনেদুপুরে গাড়ি এনে প্রভাব খাটিয়ে আমার ভাটা থেকে ইট ছিনতাই করেছে। এটা আইনত অপরাধ। আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।”

এবিষয়ে অভিযুক্ত কবির বিন সামাদের মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এব্যাপারে চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে ওই ইটভাটা নিয়ে দুই মালিকপক্ষের মধ্যে কিছুটা বিরোধ রয়েছে জেনেছি । অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে এঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত কবির বিন সামাদের বিরুদ্ধে উঠছে নানান অভিযোগ।
অনেকে তার বিরুদ্ধে জামাত-শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তুলেছেন।

সূত্র জানায়, কবির বিন সামাদের পিতা মৃত আব্দুস সামাদ ছিলেন একজন ইউপি সদস্য। ইউপি সদস্য থাকাকালীন তার পিতা গম চুরির অপরাধে জনতার হাতে মার খেয়েছিলেন। তিনি সক্রিয়ভাবে জামায়াত ইসলামের রাজনীতি করতেন।

কবির বিন সামাদ যুদ্ধাপরাধী হিশেবে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি চেয়ে গান গেয়ে ও কবিতা আবৃত্তি করে ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিলেন ।

দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পুত্র মাসুদ সাঈদীর সাথে কবির বিন সামাদের গভীর সখ্যতার প্রমাণ রয়েছে। তার ব্যবহৃত ফেইসবুক আইডিতে বিতর্কিত বক্তা আমীর হামজা সহ বেশ কিছু বক্তার সাথে ঘনিষ্টতার প্রমাণ মেলে।

এছাড়াও জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের সাথেই কবির বিন সামাদের রয়েছে বেশ গভীর সখ্যতা।

আরো জানা যায়, কবির বিন সামাদ ইউটিউবে ও ফেইসবুকে সরকারবিরোধী কন্টেন্ট তৈরী করে একশ্রেণীর মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তার কন্টেন্ট গুলোতে সমালোচনার নামে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার প্রমাণ মেলে।

জানা যায়, একসময় কবির বিন সামাদ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ইসলামি সঙ্গীত পরিবেশন করতো। তবে সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিলে নিজেই বক্তা হিশেবে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে তাকে । প্রধান বক্তা হিশেবেও বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ করেছেন তিনি।

অনেকে অভিযোগ করেছেন, সাধারণ মানুষের ভিতরে সরকারের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াতে কার্যকরি ভূমিকা রেখেছেন তিনি।