অবশ্যই আবু ত্ব-হাকে ফিরিয়ে দিতে হবে : সংসদে হারুন

প্রকাশিত: ৭:০৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২১

আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেছেন, ‘আজকে আমরা অপহরণ-গুম-খুনের কথা বলছি। এই কিছুদিন আগে একজন আলেম নিখোঁজ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খোঁজ নিচ্ছি। আজকে যদি তাকে ফিরিয়ে দিতে না পারেন এটা রাষ্ট্রের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে। আমি বলবো, আদনানকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পরিবারের আহাজারি আপনাকে শুনতে হবে।’ এছাড়া খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বাজেট অত্যন্ত বৈদেশিকনির্ভর এবং ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ঘাটতির বাজেট। এ বাজেট বাস্তবায়ন এবং দক্ষতা এই করোনাকালে মোটেই সম্ভব নয়। মহাজোট সরকারের এটি ১৩তম বাজেট। এর আগে ১২টি বাজেট সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোর দিকে দৃষ্টি দিতে গেলে সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাকাতে হবে। আমি নিঃসন্দেহে বলবো, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে। সেখানে মাঝে মাঝে একটু খুলছে। আবার চোখ বন্ধ করছে। চোখ খুলেই দেখে দরবেশ বাবা চারদিকে ঘিরে আছে। তখন চোখ বন্ধ করে রাখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সাংঘাতিকভাবে মানুষের দ্বারা আক্রান্ত। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ঋণগ্রহিতারা ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। তারা ঋণখেলাপি হচ্ছে না। তারা দেদারছে আনন্দ-ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে কারণে সব ব্যাংক বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি এবং বঙ্গবন্ধু চিকিৎসক পরিষদের ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ দুর্যোগকবলিত দেশে পরিণত হয়েছে। আইলা আক্রান্ত উপকূলীয় মানুষ যে রকম বিপর্যস্ত, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানও তেমন বিপর্যস্ত।’

সংসদে সরকারি দলের এমপিরা বাস্তব আলোচনা করেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো দলিল নেই। মাননীয় স্পিকার এক্সাম্পল দেখাতে পারবো। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলা হচ্ছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা কি আর সেই জায়গায় আছি? বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ মুসলমান, ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আমাদের ধর্ম কোরআন। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কোরআনে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো স্থান নেই। সুতরাং আমি মনে করি সংবিধানে একটি বড় অসঙ্গতি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন। কোন খুন হওয়া ব্যক্তি ইমরান কারাগারে। আর তাকে যে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে। কয় দিন আগে পল্লবীতে দেখলাম একজন খুন হলো- তারপর খুনের আসামি ক্রসফায়ার হয়ে গেল। তাহলে বিচার কিভাবে হবে? মাননীয় স্পিকার আজকে আমরা মনে করেছিলাম- মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এটি বন্ধ হবে। সেদিন পুলিশপ্রধান, সেনাপ্রধান জাতির কাছে আশ্বস্ত করেছিল আর আমরা এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখতে চাই না। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এখান থেকে আমরা কখন ফিরে আসব?’

‘বাইরে যখন চলাফেরা করি তখন খুব লজ্জা লাগে’ দাবি করে এমপি হারুন বলেন, ‘আমাদের মুখে কাপড় দিতে হয়। অনেক ব্যক্তি আমাদেরকে উপহাস করে। তার বলেন- আপনারা সরকারি দলের মন্ত্রীদের ভাড়া করেছেন না-কি, কিছু কিছু মন্ত্রী বিএনপিকে নিয়ে সকাল-বিকাল কথা বলছে। মনে হচ্ছে- তারা আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতা। তারা বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তি।’

এ সময় তিনি হেসে হেসে বলেন, ‘আমাকে সময় দেবেন স্পিকার। কারণ বিরোধী দলনেতা তো আমি।’ এ সময় সংসদে উপস্থিত থাকা মশিউর রহমান রাঙ্গা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। মাইক ছাড়াই তিনি প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

তখন হারুন বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার আমি আপনার প্রটেকশন চাই। স্পিকার রাঙ্গাকে আশ্বাস দেন- হারুনের এই কথাটি এক্সপাঞ্জ করা হবে।’ এরপর সংসদ শান্ত হলে আবার বক্তব্য শুরু করেন হারুন।