কোটা পুনর্বহালের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে পাহাড়ের ৮ ছাত্র সংগঠন

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২১

|খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক|খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।

সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা পুনর্বহালের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তিন পাহাড়ের ৮ টি ছাত্র সংগঠন। ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে সংগঠনটির নেতারা সরকারি চাকরিতে পাঁচ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবি জানান।

সোমবার (২১জুন২০২১খ্রি:) ‘বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস্ এসোসিয়েশন; বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন; বাংলাদেশ খুমী স্টুডেন্টস্ কাউন্সিল; বাংলাদেশ তঞ্চজ্ঞ্যা স্টুডেন্টস্ ওয়েলফেয়ার ফোরাম; বম স্টুডেন্টস্ এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ; ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (টিএসএফ); বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিল (বিএমএসসি) ও ‘উন্মেষ-রাঙ্গামাটি’ এ আট ছাত্র সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেন তারা।

এসময় ছাত্র প্রতিনিধিরা জানান, আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত পাঁচ শতাংশ কোটা গত ৪অক্টোবর ২০১৮ সালে বাতিল করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে জানতে চাই, আলাদা কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে বিষয়ে আমরা অন্ধকারে রয়েছি।

এছাড়াও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, কোটা প্রথার বিলুপ্তির ফলে দেশের স্বল্প জনসংখ্যার জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যগণকে সরকারের একাধিক নীতিমালা ও অন্যান্য সরকারি নথিতে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০-এ অন্তর্ভূক্ত জাতিসত্তাসমূহকে সংবিধানে উল্লিখিত “অনগ্রসর অংশ” এর আওতাভূক্ত মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও (২০২০-২০২৫, পৃ.৭৬৭) উল্লেখ আছে যে, বাংলাদেশের স্বল্প জনসংখ্যার জনমানুষেরা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্য, শিক্ষার অভাব, ভূমিতে স্বল্প অভিগম্যতা ও কর্মসংস্থানের অভাব তাদের দারিদ্রের মাত্রাকে বৃদ্ধি করেছে।
এমতাবস্থায়, স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কার্যকরভাবে পূরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা” পূর্ণবহাল করা অতি আবশ্যক বলে আমরা মনে করি। সরকারি কোটা পদ্ধতি বহাল রাখার স্বপক্ষে, সাংবিধানিক ও অন্যান্য আইনি বিধানের যথোপযুক্ত এবং প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে।
যেমন, জাতীয় সংবিধানের ২৯ (৩) (ক) অনুচ্ছেদে (যেখানে নাগরিকদের যেকোন অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা আছে) এবং এর সাথে সঙ্গতিপূর্ন আইন, সরকারি চাকরি ২০১৮ এর ৭ (২)নং ধারাতে উল্লেখ আছে যে, “সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, পদ সংরক্ষণ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিবে’’।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপালেও দেশের বিশেষ প্রেক্ষিত অনুসারে, ট্রাইবাল, তফসিলি জাতি, সংখ্যালঘু প্রভৃতি শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন: ভারতে সরকারি চাকরির ৪০.৫০% সাধারণ, এবং ৫৯.৫০% বিভিন্ন গোষ্ঠী ও শ্রেণীর মানুষের জন্য সংরক্ষিত, যার মধ্যে তফসিলি জনজাতির জন্য রয়েছে ৭.৫০%, তফসিলি জাতির জন্য রয়েছে ১৫% এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য রয়েছে ১০%। নেপালে আদিবাসী-জনজাতি সহ ৪৫% সরকারি চাকরি বিশেষ শ্রেণীর প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত, যার মধ্যে ২৭% আদিবাসী-জনজাতির জন্য রয়েছে।

সমাজের ‘‘অনগ্রসর অংশ’’ এর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণার্থে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২০২৫) ও Sustainable Development Goals (SDG) অর্জনের লক্ষ্যে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আইন ২০২০ এ স্বীকৃত জাতিসত্তাসহ দেশের সকল স্বল্প জনসংখ্যার জাতিসত্তার সদস্যদের সরকারি চাকরিতে ন্যায্য ও বৈষম্যহীনভাবে অন্তর্ভূক্তি ও সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণণের জন্য আবেদন জানান ৮ ছাত্রসংগঠনের নেতারা।