খাল খনন প্রকল্প জালিয়াতি জায়েজ করাতে মরিয়া প্রকৌশলী

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২৩


মোঃ আহসান হাবিব শিমুল (আদমদীঘি, বগুড়া)

আদমদীঘিতে একটি খাল পুনঃখনন কাজে জালিয়াতির মাধ্যমে আট লাখ টাকা উত্তোলন ও আরো প্রায় তিনগুন টাকা উত্তোলন করার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ মিলেছে। “আদমদীঘিতে খাল খননে অনিয়ম” শিরোনামে ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাৎক্ষণিক তদন্তে প্রকাশিত খবরের সত্যতা পাওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় এলজিইডি বগুড়া’র নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ। দুই বছর পূর্বে বন্ধ করে দেওয়া সেই প্রকল্পের সরকারি টাকা ফের প্রদান করার মাধ্যমে এক চক্রের জালিয়াতি জায়েজ করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এলজিইডি। এর পূর্বে প্রদত্ত আট লাখ টাকা মোসলেম উদ্দিন নামক এক ব্যক্তি ১২ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন। প্রায় ৬০ লাখ টাকার খাল খনন প্রকল্পের কাজ অর্ধেক হয়েছে দেখিয়ে এলজিইডি থেকে আরো প্রায় ২২ লাখ টাকা প্রদান করার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে আদমদীঘির পাশের উপজেলা দুপচাচিয়ার অগ্রণী ব্যাংক শাখায় মোসলেম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ১২ এ্যাকাউন্ট খোলেন। মোসলেম উদ্দিন আমইল-ইন্দইল খালের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির (পাবসস)’র সাবেক সম্পাদক। জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা এবং টাকা তোলা বিষয়ে কিছুই জানে না বলে এ্যাকাউন্ট নামীয় ২৪ জনের মধ্যে ২১ জন পাবসস’র বর্তমান কমিটির সভাপতি বরাবরে লিখিত দেয়। এর প্রেক্ষিতে সভাপতি মোমেনুর রহমান তালুকদার জাল এ্যাকাউন্ট বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। কিন্তু তিন মাসেও কোন সাড়া পাননি তিনি। পরবর্তীতে তিন এপ্রিল ২০২৩ তারিখে এ্যাকাউন্ট নামীয় ব্যক্তিরা ব্যাংকে গিয়ে নিশ্চিত করেছেন যে তারা এ্যাকাউন্ট খোলেননি এবং টাকাও তোলেননি। টাকা তোলার চেকে সবার সাক্ষর থাকলেও তাদের অনেকে লিখতেই জানে না। পাবসস’র নির্বাচিত বর্তমান কমিটির সভাপতি বলেন, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাবসসের মোত্তাকিন-মোসলেম কমিটির মেয়াদ শেষ যায়। কিন্তু কমিটি বহাল দেখিয়ে মোসলেম উদ্দিন কাগজে-কলমে সভা করা ও সভায় খাল খনন প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেখায়। কথিত সভায় সভাপতি হিসাবে মোত্তাকিন তালুকদারকে উপস্থিত দেখানো হলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না, তার স্বাক্ষর জাল। জালিয়াতি করে দেখানো সভায় খাল খননের জন্য তিনশ’ শ্রমিক পরিচালনার জন্য ১২ এলসিএস (লেবার কন্ট্রাক্টিং সোসাইটি) গঠন করা এবং এলসিএস’র সভাপতি/সম্পাদক মিলে ২৪ জনকে পাবসস সদস্য দেখানো হয়। কিন্তু ২১ জন পাবসস সদস্যের এবিষয়ে কিছু জানাই ছিল না। তারা জানান, সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলে মোসলেম মেম্বার আমাদের এনআইডির ফটোকপি ও ছবি নেয় এবং নগদ পাঁচশ’ করে টাকা দেয়। পরে জানতে পারি যে, তিনি আমাদের এনআইডি ও ছবি দিয়ে এ্যাকাউন্ট খুলে দুই দফায় আট লাখ ১০ হাজার টাকা তুলেছেন। ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার সাঈদ সাব্বির আহম্মেদ গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ বলেন, মরিয়া হওয়ার কোন কারন নেই। কাজ করা হলে আমি টাকা দিতে বাধ্য। জাল-জালিয়াতির বিষয়ে অবগত হয়েছি। কিন্তু শেষ হওয়া প্রায় ৬০ ভাগ কাজের পাওনা মজুরি গ্রহণ এবং অবশিষ্ট খনন কাজ শেষ করার জন্য নতুন কমিটিকে আদমদীঘিতে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলতে তাগাদা দিয়েছি মাত্র। মোসলেম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।