যশোরে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমে আসক্ত শিশু-কিশোরেরা; চলছে কম্পিউটার দোকানীদের রমরমা ব্যবসা

প্রকাশিত: ১২:২৮ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২১

বর্তমানে সারাদেশের শিশু কিশোরদের কাছে জনপ্রিয় মোবাইল গেমের নাম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি। এর কারণে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে এসব শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ। যশোরে শিশু-কিশোরেরাও ভয়ংকর রুপে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর এই গেম খেলার জন্য প্রয়োজন হয় ইন্টারনেট সুবিধার। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু চক্র চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ব্যবসা। এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা এই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। বিনিময়ে শিশু কিশোরেরা কিছু সময়ের জন্য এসব মোবাইল গেম খেলার সুযোগ পাচ্ছে। নামে-বেনামের দোকানে নিজস্ব কম্পিউটার ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন গেমস খেলার সুযোগ করে দিচ্ছে। এরপর ঘন্টা চুক্তিতে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। শুধু তাই নয় ঘন্টা চুক্তিতে তারা দিচ্ছে আসক্ত শিশুদের ওয়াইফাই সুবিধা।

যাদের মোবাইল আছে কিন্তু মেগাবাইট কেনার সুযোগ নেই তারা ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়াইফাই ভাড়া নিয়ে খেলায় মগ্ন থাকছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কোমলমতি শিশুদের কাছ থেকে টাকা হাতানোর ব্যবসা। শিশুরা একদিকে দোকান মালিককে টাকা দিচ্ছে অন্যদিকে গেমের ভেতরে বিভিন্ন ইভেন্টে টাকা খোয়া দিচ্ছে।

গত দুই দিনে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। তাদের ধারণা কখনো নিজেদের টাকা আবার কখনো বিভিন্ন ধরণের অপরাধে জড়িয়ে টাকা উপার্জন করে এ খেলায় মেতে উঠছে তারা। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে যশোর শহরের লোন অফিসপাড়া আদর্শ বিদ্যালয় মোড়ে গিয়ে দেখা যায় দুই সার্টারের একটি দোকান। একটি সার্টার বন্ধ, অপরটিতে পর্দা দেয়া। নেই কোনো সাইনবোর্ড। পর্দা সরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় দুই কিশোর কম্পিউটারে ও আরো দুইজন মোবাইলে গেম খেলছে। একপাশে বসে আছেন দোকান পরিচালক। এসময় বহুবার কিশোরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কারো মুখে কথা শোনা যায়নি। তাদের ধ্যান জ্ঞান সব মোবাইল ও কম্পিউটারের মধ্যে।
সেখান থেকে জানা যায়, তারা প্রতি ঘন্টা ৪০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে খেলা করছে। কথা বলার সময় তাদের নেই। কথা হয় দোকানী তনুর সাথে। তিনি বলেন, শুধু তিনিই নন, যশোর শহরে এমন ব্যবসা অহরহ হচ্ছে। প্রতিমাসে তার ৮/১০ হাজার টাকা দোকান খরচ হয়। এরপর লাভ করে বাড়ি নিতে হয়। এছাড়া ব্যবসায় তিনি ৪টি কম্পিউটার ও চারটা অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনেছেন।

আদর্শ স্কুল মোড়ে তনুর দোকানে এক সাটার বন্ধ অপর সাটারে পর্দা।ভেতরে চলছে পাবজী প্রতিযোগিতা

এছাড়া খালধাররোড কদমতলা মোড়ের ইব্রাহিমের দোকান, তজবীর মহলের সামনের একটি মিষ্টির দোকানের গলি দিয়ে গিয়ে বাম পাশে সিফাত কমিপউটার, আদর্শ স্কুল মোড়ে তনুর দোকানসহ আরও অনেক কম্পিউটার দোকান আছে যারা এসব শিশু কিশোরদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ধরণের গেমস খেলার সুযোগ দেয়। এসব দোকানীরা ওয়াইফাই সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে ঘন্টা প্রতি ৩০/৪০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছ। এছাড়া এসব গেম খেলতে আরও অন্যান্য খরচও আছে। গেমস খেলার সময় কিছু জিনিস না কিনলে হয়না। সেখানে এক একটা জিনিস কিনতে খরচ হয় ৪০০/৫০০ টাকা।

শুধু শহরেই নয় গ্রামেও একই চিত্র। স্থানীয় কম্পিউটার দোকানেও এভাবে চলে রমরমা ব্যবসা। এসব বিষয়ে অভিভাকদেরও চিন্তার শেষ নেয়। তারা আশঙ্কা করছেন এভাবে চলতে থাকলে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

চলছে কম্পিউটারে গেমস খেলা

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, শিশু কিশোরদের পুঁজি করে এধরণের ব্যবসা বাণিজ্য করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সাথে নিয়ে ওই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশানে নামবেন বলে জানান।