বাঁগআচড়া কাঁচারী পট্টি উচ্ছেদ জন দূর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ১০:১১ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২২

জাহিদ হাসানঃ

দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি ও অশনির রেশে বর্ষায় চাষীদের ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শার্শার বাগআঁচড়ার কাচারীপট্টি, তরকারি হাট, মুরগি হাট ও বীজ হাটার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে তছনছ করা হয়েছে।

ফলে চরম ক্ষতি ও
জনদুর্ভোগে পড়েছে এখানকার ব্যবসায়ীসহ বাগআঁচড়ার আশপাশের মানুষের।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগআঁচড়া বাজারে শতাধিক দোকান ভেঙ্গে দিয়েছেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্টেট (ভূমি) রাসনা শারমিন মিথি।

এর মধ্যে ২০ টি তরকারি দোকান, ৩০ টি মুরগির দোকান ও ৫০ টির মত বীজের দোকানসহ অন্যান্য দোকান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে কাঁচারী পট্টি দিয়ে মুল বাজারের মধ্যে ঢুকবার সড়কটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে সড়কটি দিয়ে শংকরপুর ইউনিয়ন ও বাগআঁচড়া ইউনিয়ানের ৪/৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে।

কাঁচা দোকানদার মেহেদী হাসান বলেন, আমি গরীব মানুষ অল্প টাকা পুজি নিয়ে ব্যবসা করে আসছি ১০ বছর ধরে। আমার দোকানটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আমার বাচ্চাদের লেখাপড়া ও ৬ জন মানুষের সংসার চলে এই ছোট্ট দোকানে। আমি এখন কি করবো কোথায় যাবো, কিভাবে চালাবো এই সংসার?

মুরগি দোকানদার সুমন বলেন, আমার আব্বু দোকানদারি করতো ১৫ বছর ধরে। আমার বয়স ১২ বছর হলে আব্বু মারা যায়। আমার ২ বোন আর অসহায় মাকে নিয়ে আমার সংকটময় সংসারটি এই দোকানের উপর নির্ভর। কিস্তিতে টাকা তুলে মুরগি কিনে দোকান চালিয়ে কিস্তির দেনা পরিশোধ করি ও সংসার চালায়ি যাচ্ছি। আব্বু মারা গেলে আমি ১০ বছর ধরে এই দোকান চালাচ্ছি। এই দোকান টুকুই আমার সম্বল। সেটাও ভেঙ্গে ফেলেছে আমি অসহায় পরিবার নিয়ে কি করবো?

বীজ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক তিনি বলেন, আমি এখানে ৩০ বছর দোকানদারি করছি। করোনায় ২ বছরে শেষ করে দিয়েছে আমাদের ব্যবসা বানিজ্য। দ্রবমুল্য ঊর্ধ্ব গতিতে দোকান দারি করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। দোকান ভেঙ্গে দিল এখন চলবে কি করে। দোকানদারি করে বলে সরকারি কোন অনুদান কখনো পাই না। এখন আবার শেষ সম্বল দোকান টুকুও কেড়ে নিলো।

কাছারী প্রতিবেশী ইটালী প্রবাসী নাগরিক হুদা নুরের অভিযোগ, আমরা অনেক ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি এই জায়গায় গরিব দুখিরা দোকান দারী করতো। আমি এই ভাঙার প্রতিবাদ করতেই আমাকে বিকালে কিছু সন্ত্রাসী লাঠিয়াল বাহিনী শাসিয়ে গেছে।

বাগআঁচড়া ৩নং ওয়াডের মেম্বার আসাদুল ইসলাম বলেন, এই টুকু বাজারের মধ্যে ভূমি অফিসের জায়গা বেরিয়ে গেলে বাজারটা খুব ছোট হয়ে যায়। এই জায়গা বেরিয়ে গেলে এই সব গরীব ছোট ছোট দোকানদাররা কোথায় যাবে? আমার মতামত এটাই বাগআঁচড়ার জন্য জায়গা ক্রয় করে এই সব গরীব দুখি দোকানদার দের পুর্নবাসনের ব্যাবস্থা করুক সরকার পক্ষ। যেমন লাল্টু ডাক্তারের পিছনে ১০০ শতক জায়গা বিক্রয় হচ্ছে,ময়ূরী সিনেমা হলের পাশে যে চাতাল ছিল ঐ জায়গা অথবা যেকোন জায়গা ক্রয় করে বাজারে সব ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

সাবেক বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন,আমরা দ্বায়ীত্বে থাকতে প্রস্তাব পেয়েছিলাম জায়গাটা পরিস্কার করে দিতে হবে। শুধু গরীব-দুখি,ছোট-খাটো দোকানদার দের কথা চিন্তা করে সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ এদের কে এখান থেকে সরিয়ে দিলে এমন কোথাও জায়গা নায় যে সেখানে তারা বসবে। আমারা জনপ্রতিনিধি বা সংগঠনের দ্বায়ীত্বে আছি শুধু জনগনের খেদমতে।

এ বিষয়ে ৮ নং বাগআঁচড়া ইউনিয়ানের চেয়ারম্যান আঃ খালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাতে আমার কিছু করার নাই। ভুমি অফিসের জায়গা এসিল্যান্ড ভেঙ্গে চুরে ফাঁকা করেছে আমি কি করতে পারি। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের পূর্ণবাসন করবো।

শার্শার নির্বাহী মেজিস্টেট রাসনা শারমিন মিথি জানান, ভূমি অফিসের জায়গা ৬৪ শতক জায়গায় অবৈধ দোকান ভেঙ্গে সেটা দখল নেওয়া হয়েছে। যে গুলো বৈধ আছে সেই ঘর গুলো অক্ষত অবস্থায় আছে। বর্তমান রাস্তা বন্ধ করে প্রাচীর নির্মান করে রাখা হবে। পুর্বের রেকর্ডের রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত দোকাদারদের বিষয়ে তিনি বলেন বাজার কমিটির সভাপতিকে বলে এসেছি তাদের একটা ব্যবস্থা করতে দিতে।