বেনাপোলে দাদন ব্যবসায়ী হাসেমের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ী ও পরিবার

প্রকাশিত: ৩:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২১

||জাহিদ হাসান||
শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভার অভ্যন্তরে সমবায় সমিতি ও সুদ ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। বর্তমান করোনা কালীন সময়ে কাজ কর্ম হারিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়ে বিভিন্ন সমবায় সমিতি ও অনুমোদন বিহীন সুদের কারবারীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে নিঃস্ব এখন বেনাপোলের বিভিন্ন ছোট বড় ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার। অনেকে আবার আত্মহত্যার মত পথও বেচেঁ নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার ১৫ই জুলাই বেনাপোল বাজারে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে জানা যায়, বেনাপোল বাজারে ব্যবসার জন্য সুদে টাকা নিয়ে নিঃস্ব অনেকে। কেও দোকান ছেড়ে দিয়ে এখন পথের ভিখারী আবার কেও লোক লজ্জার ভয়ে বসত বাড়ী জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হচ্ছেন।

বেনাপোল ষ্টেশন রোডের সীমান্ত বেডিং হাউসের মালিক সাইদুর রহমান সালাম জানান, গত ৩ বছর আগে স্থানীয় জেনারেটর ব্যবসায়ী হাসেম আলীর নিকট থেকে ৭ লক্ষ টাকা সুদে নেই। সুদের টাকার লাভ প্রতি মাসে সুদ হিসাবে লাখে ৬ হাজার টাকা করে অথাৎ ৪২ হাজার টাকা মাসে সুদ দিতে হবে। এ পর্যন্ত সুদ ব্যবসায়ী হাসেম আলীকে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা দিয়েছি তবুও সে আমার কাছে এখনও ৭ লক্ষ টাকা পাবে বলে চাপ দিচ্ছেন। সালাম আরোও জানান, সাদা ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে এবং ব্যাংকের ব্লাংক চেক সই করে রাখেন। এখন প্রায়ই হাসেম আলী আমাকে চেক ও ষ্ট্যাম্পের ভয় দেখাচ্ছেন। পিতার কিছু জমি বিক্রি করেও সুদের টাকা দিয়েছি। বর্তমানে আমি সুদের টাকা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।

বেনাপোল ডাবলু মার্কেটের ব্যবসায়ী স¤্রাট সু ষ্টোরের মালিক নিয়ামুল জানান, দোকানে মাল তোলার জন্য জেনারেটর ব্যবসায়ী হাসেম আলীর নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলাম। সুদের টাকা ঠিক মত ফেরত দিতে না পেরে বর্তমান দোকান ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে ঢাকায় পাড়ি দিয়েছি।

বেনাপোলের একজন সচেতন নাগরিক ফিরোজ আলম জানান, দাদন বা সুদ ব্যবসা আইন সম্মত বা বৈধ না হওয়া সত্ত্বেও বিপদে পড়ে সাধারন ব্যবসায়ীর সহজে সুদে টাকা পেয়ে যাওয়ার কারনে চড়া সুদে টাকা নিয়ে রিতীমত ফাঁদে পা দেন। কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে অনেক ব্যবসায়ী পঙ্গু হয়ে পড়েছেন।

সুদের ফাঁদে পড়া ভুক্তভোগীরা জানান, সুদ ব্যবসায়ীরা টাকা দেওয়ার সময় জমির দলিল, ব্যাংকের ফাঁকা চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখেন। যখন কেউ টাকা ফেরত দিতে না পারে তখন ওই চেক স্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত টাকা বসিয়ে পাওনাদারের নিকট দাবি করে। বর্তমানে এমন অনেক সুদি ব্যবসায়ী অন্য ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। এমনি একজন ব্যাক্তি হাশেম আলী যে কিনা লোক দেখানো জেনারেটর এবং সমিতি ব্যবসা থেকে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বেনাপোল বাজারে গুরুত্বপূর্ন স্থান সহ কয়েকটি জায়গাই বাড়ী ও জমি রয়েছে সুদের টাকা ফেরত না দেতে পেরে অনেকের কাছে থেকে জোরপূর্বক এসব সম্পদ লিখে নিয়েছে বলে অনেকে মতপ্রদান করেছেন। বেনাপোলের সাধারন মানুষও তাকে সুদখোর হাশেম বলে এক নামে চেনে।

এ বিষয়ে ৪ নং বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বেনাপোল বাজার ব্যবসায়ীদের সাধারন সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, চড়া সুদ ব্যবসায়ীদের কারনে অনেক ছোট বড় ব্যবসায়ীরা আজ নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে। সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান চালিয়ে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

সুদ ব্যবসায়ীদের ব্যপারে শার্শা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এস এম আক্কাস আলী জানান, সমবায় সমিতি লাইসেন্স ব্যাতিত সমিতি করে কোন টাকা লেনদেন করা যাবে না। তাছাড়া সমবায় নিবন্ধন ছাড়া যদি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান সুদের টাকা লেনদেন করে তাহলে তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এছাড়াও সুদ কারবারীদের বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে ইউএনও বরাবর আবেদন করে প্রতিকার পেতে পারেন।