বেনাপোলে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মিন্টুর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১০:০১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২২

বেনাপোল প্রতিনিধিঃ

বন্দরনগরী বেনাপোলের ৮০% মানুষের জীবিকা এই বন্দর এবং কাস্টমস কেন্দ্রিক সিএন্ডএফ ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু গুটিকয়েক অসৎ ব্যাক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে এ ব্যবসার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এমন এক ব্যাক্তি মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী শেখ আসাদুজ্জামান মিন্টুর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। ইতিমধ্যে মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ(সিএন্ডএফ এজেন্সি) এর অবৈধ কার্যক্রমের কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমস তার লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে।

অতি মিষ্টভাষী শেখ আসাদুজ্জামান মিন্টুর পিতা শেখ মহিউদ্দিন, মাতা মোছা: সাইদুন নাহার ঠিকানা গ্রামঃ- কদমতলা, পোস্টঃ- বালুন্ডা, থানাঃ- বেনাপোল পোর্ট, জেলাঃ- যশোর।

যশোরের কৃতি সন্তান বিশ্বজিৎ দাশ বাংলাদেশ টেলিভিশনের “উচ্চ” শ্রেণীর নাট্যশিল্পী পিতাঃ-বিজয় কুমার দাশ (মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়ে নিখোঁজ) শহীদ, মাতা-স্বর্গীয় রানু দাশ (বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও সহ চলচ্চিত্রের “বিশেষ” অভিনেত্রী ছিলেন)। বিশ্বজিৎ দাশ যশোর জেলার বেজপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা কিন্তু বর্তমানে তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন। তিনি শেখ আসাদুজ্জামান মিন্টু সম্পর্কে বলেন, মিন্টুর পিতা শেখ মহিউদ্দিনকে আমি পিতার মত শ্রদ্ধা করতাম, তাই তার বিশেষ অনুরোধে বেনাপোলে মিন্টুর বাড়ি যাওয়া আসা করতাম। মিন্টুর বাবার অনুপ্রেরণায় ও আশা জাগানিয়া বক্তব্যে ভবিষ্যতের লক্ষ নির্ধারণ করতে জীবনের রক্তে ঘামানো সঞ্চিত টাকা দিয়ে শেষ বয়সে ব্যবসা করে যেন নিশ্চিন্তে জীবন অতিবাহিত করতে পারি, সেই লক্ষ্যে মিন্টুর সাথে সিএন্ডএফ বিজনেস করতে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে তার ব্যবসায় ৪৬ (ছেল্লিশ) লক্ষ্য টাকা বিনিয়োগ করি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের ফলে আজ সেই মিন্টু ও তার বাপের কাছে আমি জিম্মি হয়ে আছি। ব্যবসায়ের নামে টাকা নিয়ে মিন্টু আজ লাপাত্তা। এখন টাকা ফেরত চাইলে তারা আমাকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তার নাকি অনেক ক্ষমতা, প্রশাসন ও স্থানীয় নেতারা নাকি তার টাকায় চলে! সে বিভিন্ন মাধ্যমে এসব বলে আমাকে অনবরত হুমকি দিয়ে আসছে । আমার টাকার সুরাহা করবে বলে তারা আমাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাবারের সাথে Slow Poison মিশিয়ে খাওয়ায়ে তিলে তিলে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি এ যাত্রায় জীবন নিয়ে বেঁচে গেছি। মিন্টুর পরিবারের Slow Poison এর কারণে গত পাঁচ মাসে আমাকে যশোরের কুইন্স হাসপাতাল তিনবার ভর্তি থাকতে হয়েছে।

সর্বশেষ আমি বেনাপোল থানায় তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করি এরপর ঢাকা আদালতেও একটি চেক ডিজওনার এর একটি মামলা করি। এ মামলায় গত মাসে মিন্টুর নামে ওয়ারেন্টও জারি হয়েছে।

মিন্টু সম্পর্কে ঝিকরগাছা উপজেলার নন্দীরডুমরিয়া গ্রামের আশরাফুল বলেন, এই মিন্টুর সাথে আমার শালা বাবুর মাধ্যমে পরিচয় হয়। আমার শালার পরিচয় ধরে এই মিষ্টভাষী মিন্টু আমাকে একদিন কল দিয়ে তার নানা সমস্যা পেষ করে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ধার চান এবং ঐ টাকা ২ দিনের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ারও ওয়াদা করেন। পরে আমার শালা টাকা ধার দিতে সম্মতি জানালে আমি আমার বন্ধুর নিকট থেকে ১লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ধার করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গিয়ে মিন্টুর কাছে টাকা পৌছে দেয়। টাকা নিয়ে ২ দিন পরই ফেরত দেওয়ার কথা বললেও আজ ৯ মাস যাবৎ সে আমাকে ঘোরাচ্ছে। পরে আমি আমার স্ত্রীর ৫ ভরি গহণা বন্ধক রেখে আমার বন্ধুর টাকা পরিশোধ করেছি এবং এই ৯ মাস যাবৎ আমি সেই টাকার সুদ বহন করছি। শেষে কান্না জরিত কন্ঠে আশরাফুল বলেন, ঐ মিন্টু আমার সাথে যা করেছে এবং যে কষ্ট দিয়েছে আমি তা জীবনে ভুলবো না। আমি এই বিচার আমার আল্লাহর কাছে দিয়েছি, তিনিই বিচার করবেন।

বেনাপোল বন্দর থেকে ভারত হতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান OME INTERNATIONAL দিঘলিয়া,খুলনা এর আমদানিকৃত ১৫০ প্যাকেজ সাব মারসিবল পাম্পের একটি চালান বেনাপোল কাস্টমস থেকে খালাস করে উধাও করে নিয়েছে একটি সংঘ বদ্ধ চক্র। এ চক্রের মুল হোতাও এই শেখ আসাদুজ্জামান মিন্টু বলে জানা গেছে।

মিন্টু সম্পর্কে কেশবপুরের আনন্দ চৌধুরী বলেন, এই মিন্টু ১৫০ প্যাকেজ সাব মারসিবল পাম্প ২৪ লক্ষ টাকায় আমার কাছে বিক্রয় করে পরবর্তিতে ৩০ লক্ষ টাকা দাবী করলে, আমি আমার টাকা বুঝে নিয়ে তাদের পাম্প ফেরত দিয়ে দেয়। তবে আমার বন্ধু বরুণ রাজ তার দোকানে আগরবাতি ক্রয়ের জন্য আমার মাধ্যমে ৪ লক্ষ টাকা শেখ আসাদুজ্জামান মিন্টুকে দেয় কিন্তু সে এই টাকা নিয়ে এখন মালও দিচ্ছেনা আবার টাকাও দিচ্ছেনা।

একাধিক সূত্রে জানা গিয়েছে যে, এই পরিবারটি একটি চিটার বাটপার পরিবার। শুধুমাত্র যে এই কয়জন ব্যাক্তি তা নয় আরো বহুসংখ্যক ব্যক্তির সাথে এই মিন্টু বাটপারি করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে এবং এক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অন্য ব্যাংকে মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে জালিয়াতি করেছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযোগের মূল হোতা আসাদুজ্জামান মিন্টুকে তার মুঠোফোন ০১৭১২-৫৭৯৯– নাম্বারে একাধিক বার কল করেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারনে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা জানান, শেখ আসাদুজ্জামান মিন্টু সম্পর্কে আমরা একাধিক অভিযোগ পেয়েছি এবং সে পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা।