সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেন আমির উদ্দিন বসুনিয়া ,

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০

পবিত্র কুরআন শরীফের বাংলা অনুবাদের গৌরবের মহৎ কাজটি শুরু করেন ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিই বলে দিচ্ছে  বেশ কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তি ও গবেষকের নাম  ।  কোরআনের বহুবিধ অনুবাদ ও তাফসির সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণা করে জানা যায়   রংপুরের আমিরুদ্দীন বসুনিয়া নামটি । বেশিরভাগ মানুষই মনে করে গিরিশ চন্দ্র সেন সর্ব প্রথম পবিত্র কুরআন শরীফ বাংলা অনুবাদ করেন । ১৮৭১ সালে গিরিশ চন্দ্র সেন হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্ম্যধর্ম গ্রহণ করে। পবিত্র কুরআন শরীফের অংশ বিশেষ অনুবাদের প্রচেষ্টা গিরিশ এর পবিত্র কুরআন শরীফের অনুবাদের বহু পূর্বে গ্রহণ করা হয়েছিল।মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ পবিত্র কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদের গৌরবের দাবীদার মৌলভী আব্বাস আলী (১৮৪৬-১৯২২ ইংরেজি সাল )।তথ্যের ভিত্তিতেও বলা যায় সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেন রংপুরের আমির উদ্দিন বসুনিয়া ।

গিরিশচন্দ্র সেনের ৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে আরেকজন অমুসলিম রাজেন্দ্রলাল মিত্র কোরআনের প্রথম পারার অনুবাদ করেন। কলকাতার আয়ুর্বেদ প্রেস নামক একটি ছাপাখানা থেকে এক ফর্মার (১৬ পৃষ্ঠা) এ অনুবাদটি ৫০০ কপি ছাপা হয়েছিলো।

 

ঐতিহাসিক তথ্যের সমর্থন রয়েছে ঢাকা ও কলকাতার প্রায় সব ক’জন কোরআন গবেষকের লেখায়।   সেই সময়ের অখণ্ড পাকভারতের ,  উভয় বাংলার প্রায় সব ক’টি কোরআন গবেষণা সংস্থা, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানই এ ব্যাপারে একমত যে, মওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়াই সে সৌভাগ্যবান মানুষ যিনি বাংলা ভাষায়  পবিত্র গ্রন্থ  কোরআন অনুবাদের এ মহান কাজটির শুভ সূচনা করেন।

ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় , ইংরেজি    ১৮০৮ সালে  রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলা চিলাখাল মটুকপুর গ্রাম নিবাসী মৌলভী আমিরুদ্দীন বসুনিয়া পবিত্র কোরানের বিশেষ কিছু অংশ অনুবাদ করেছিলেন। বাংলা ভাষায় মহা গ্রন্থ আল কোরআন পবিত্র কুরআন শরীফ আংশিক অনুবাদের তিনিই পথিকৃৎ এবং গবেষণার ভিত্তিতে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে । এই আংশিক অনুবাদের ( অনেকে কথিত আমপারা বলেন ) কাব্যানুবাদ খানি সেকালের লিথো প্রেসে মুদ্রিত হয়েছিল। অনুমান করা হচ্ছে এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ১৬৮। মুদ্রণের তারিখ জানা না গেলেও মুদ্রণ রীতির বৈশিষ্ট্যে গ্রন্থখানি প্রাচীনত্বের দাবী করতে পারে এবং প্রাচীন লিপির অনুসরণে সেটাই প্রমান করে । এর একটি খন্ড বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগারে নথিভুক্ত অদ্যাবধি রক্ষিত আছে । বাংলাদেশের আমির উদ্দীন বসুনিয়ার অনুবাদত কৃত পবিত্র কোরানের    বিশেষ কিছু অংশ (আঞ্চলিক ভাবে বলা আমপারার ) কাব্যানুবাদের প্রকাশকাল আনুমানিক ১৮০৮/১৮০৯ ইংরেজি সাল। সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেন রংপুরের আমির উদ্দিন বসুনিয়া ।

পবিত্র কোরআনের প্রথম অনুবাদক গবেষক ও মওলানা মোহাম্মদ আমীর উদ্দিন বসুনিয়া কোরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করে যেতে পারেন নি। পরবর্তী সময়ে গিরিশচন্ত্র সেনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম যা তখন বাজারে প্রচারিত ছিলো তাও ছিলো নানা দিক দিয়ে আরবি ভাষার সাথে বাংলা ভাষার শাব্দিক অর্থের ব্যাকরণগত দোষে দুষ্ট, অপূর্ণাজ্ঞ অর্থ , তাই তার অনুবাদের মাত্র ২ বছরের মাথায়ই কোরআনের বিশ্বস্ত ও পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম নিয়ে আলোচনায় আসেন বিখ্যাত কোরআন গবেষক মাওলানা নায়ীমুদ্দীন। এর আগে কলকাতার একজন ইংরেজ পাদ্রীও পবিত্র কোরআনের অনুবাদ করেছিলেন।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রখ্যাত লেখক গবেষক ও প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ ( জন্ম ১৮৭১- মৃত্যু ১৯৫৩ ইংরেজি সাল ) তার সংকলিত “বাংলা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ” গ্রন্থের একস্থানে আমীর উদ্দিন বসুনিয়ার বাংলা পবিত্র কোরানের (আঞ্চলিক ভাবে আমপারা ) আমপারার কথা উল্লেখ আছে ।

প্রখ্যাত লেখক গবেষক ও প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ বলেছেন, আমার বিশ্বাস, এদেশে বাংলা টাইপ প্রচলনের পূর্বে এ গ্রন্থটি ছাপা হয়েছিল। আবার অনেকে মনে করেন, গবেষক মৌলভী আমির উদ্দীন বসুনিয়ার এই সরল বাংলা কাব্যানুবাদখানি মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ইংরেজি ১৮৬৬ সালে । সেই তথ্যের ভিত্তিতেও বলা যায় সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেন রংপুরের আমির উদ্দিন বসুনিয়া ।

রংপুরের তৎকালীন কুন্ডি পরগনার গোপালপুরের নিকট শ্যামপুর রেলস্টেশনের কাছে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করে পূর্ববঙ্গের সর্বপ্রথম পত্রিকা “সাপ্তাহিক রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ” প্রকাশ করেছিল ইংরেজি ১৮৪৭ সালে । খুব সম্ভব এই প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্র বা প্রেসেই পরবর্তীতে ছাপা হয়েছিল তার এই পবিত্র কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ গ্রন্থটি। আমির উদ্দীন বসুনিয়ার পবিত্র কুরআন শরীফের আংশিক বঙ্গানুবাদ ১৮৬৬ সালে ছাপার অক্ষরে প্রকাশের পর তৎকালীন সময়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

ঐতিহাসিক গবেষণায় দেখা যায় , পবিত্র ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের মধ্যে টাঙ্গাইলের করটিয়ার মৌলভী মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন ( ১৮৩২-১৯১৬ ইংরেজি সালে ), আখবার ইসলামীয়া পত্রিকার সম্পাদক পবিত্র কুরআন শরীফের অনুবাদে প্রবৃত্ত হন। মুসলমান অনুবাদকদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পবিত্র কুরআন শরীফের বাংলায় অনুবাদের কৃতিত্ব পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত চব্বিশ পরগনা জেলার চন্ডিপুর গ্রামের অধিবাসী মৌলভী আব্বাস আলীর (১৮৪৬-১৯২২ ইংরেজি সাল )। মৌলভী আব্বাস আলী পূর্ণাঙ্গ পবিত্র কুরআন শরীফের একখানি সুন্দর বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেন ১৯০৭ ইংরেজি সাল । তাই বলা চলে, মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ পবিত্র কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদের গৌরবের দাবীদার মৌলভী আব্বাস আলী (১৮৪৬-১৯২২ ইংরেজি সাল )।

গবেষণায় দেখা যায় , সালের গণনার সময়ের ব্যবধান প্রায় ৮০ বছর। গিরিশ চন্দ্র সেন পবিত্র কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ করেন ইংরেজি ১৮৮১ সাল থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, গিরিশ চন্দ্র সেনের বছর ৮০ পূর্বে বাংলাদেশের রংপুরের আমির উদ্দীন বসুনিয়া আংশিক হলেও পবিত্র কুরআন শরীফের সর্বপ্রথম বঙ্গানুবাদক হিসাবে ইতিহাসে প্রমাণিত।

‘অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাওলানা ও গবেষক আমীর উদ্দীন বসুনিয়া ইংরেজি সালে ১৮০৮ প্রথম আমপারার তরজমা প্রকাশ করেন। যার আকার ছিল ডিমাই ১২ পেইজ ১৬৮ পৃষ্ঠা। অথচ গিরিশচন্দ্র সেনের আগে রাজেন্দ্রনাথ মিত্র কোরআনের অনুবাদ করেন ১৮৭৯ সালের ১৯ মার্চ। গিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৮১ এবং সমাপ্ত হয় ইংরেজি ১৮৮৬ সালে ।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, গিরিশ চন্দ্র সেনের বছর ৮০ পূর্বে বাংলাদেশের রংপুরের আমির উদ্দীন বসুনিয়া আংশিক হলেও পবিত্র কুরআন শরীফের সর্বপ্রথম বঙ্গানুবাদক হিসাবে ইতিহাসে প্রমাণিত।

‘অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাওলানা ও গবেষক আমীর উদ্দীন বসুনিয়া ইংরেজি সালে ১৮০৮ প্রথম আমপারার তরজমা প্রকাশ করেন। যার আকার ছিল ডিমাই ১২ পেইজ ১৬৮ পৃষ্ঠা। অথচ গিরিশচন্দ্র সেনের আগে রাজেন্দ্রনাথ মিত্র কোরআনের অনুবাদ করেন ১৮৭৯ সালের ১৯ মার্চ। গিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৮১ এবং সমাপ্ত হয় ইংরেজি ১৮৮৬ সালে ।
কবি আবদুল কাদির ( ইংরেজি সাল ১৯০৬-১৯৮৪) তার সুশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন বাঙালি মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম মৌলভি নঈমুদ্দিন কোরআন মাজীদের বঙ্গানুবাদ করেন। তিনি পবিত্র কোরানের ১০ পারা পর্যন্ত অনুবাদ করেন এবং মুদ্রন শেষ হওয়ার আগেই ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন।

কবি আবদুল কাদির তার তার সুশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ে লিখেন ‘সমগ্র কোরআনের বঙ্গানুবাদ করেন মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম মাওলানা মোহাম্মদ আব্বাস আলী ( ইংরেজি সাল ১৮৫৯-১৯৩২ ) কলকাতা ৩৩ নম্বর বেনেপুকুর রোড, আলতাফি প্রেসে মুন্সি করিম বকসের দ্বারা মুদ্রিত ১৩১৬ বাংলা সন। আমপারা পর্যন্ত ৩০ পারার অনুবাদ। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৭৬। মূল আরবি পাঠের নিচে উর্দু তরজমা এবং তার নিচে বাংলা অনুবাদ।

কবি আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) তার সুশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন খান বাহাদুর মৌলভি তসলীমউদ্দিন আহমদের (১৮৫২-১৯২৭) অনূদিত তাফসিরের কথা। তার অনূদিত কোরআনের প্রথম খন্ড (প্রথম ১০ পারা) প্রকাশিত হয় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে (দ্বিতীয় ১০ পারা) এবং তৃতীয় খন্ড (শেষ খন্ড ) প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে । প্রথম খন্ড ছিল ৪৫৮ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় খন্ড ৪৫৮ পৃষ্ঠা এবং তৃতীয় খন্ড ৫২১ পৃষ্ঠা।এ অনুবাদে মূল আরবি দেয়া ছিল না, কিন্তু আয়াত ও রুকু নম্বর দেয়া ছিল।

কবি আবদুল কাদির তার তার সুশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে তিনি তাদের সবার নামোল্লেখ করেছেন যারা আল-কোরআনের পরবর্তী অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন। মৌলভি আবদুল হাকিম ও আলী হাছান ১৯৩৮ খিস্টাব্দে পূর্ণাঙ্গ কোরআনের অনুবাদ করেন। মৌলভি নকীবুদ্দিন খাঁর ( ইংরেজি সাল ১৮৯০-১৯৭৮) অনুবাদ ৩০ পারা ৩০ খন্ড ছিল। মাওলানা মোঃ রুহুল আমীন, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মৌলভি এয়ার আহমদ, মৌলভি মোঃ তৈমুর, ফজলুর রহিম চৌধুরী, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ডক্টর কুদরত-এ-খুদা, অধ্যাপক আবুল ফজল প্রমুখ কোরআনের অংশ বিশেষের অনুবাদ করেন। ইংরেজি সালে ১৯৩৩ কবি নজরুল কাব্যে আমপারা উল্লেখ আছে ।

গবেষণায় দেখা যায় ,১৮১৫ সালে বাংলা মুদ্রন যন্ত্রের ব্যবহারের পরপর কলকাতার মীর্জাপুরের পাঠোয়ার বাগানের অধিবাসী আকবর আলী এ কাজে এগিয়ে আসেন। তিনিও মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়ার মতো শুধু আমপারা ও সূরা ফাতেহার বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন তার অনূদিত অংশটি ছিলো পুথির মতো। তার এ অনুবাদটি কোরআনের কোনো মৌলিক অনুবাদও ছিলো না।

কোরআনের বহুবিধ অনুবাদ ও তাফসির সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণা করে জানা যায় , ইংরেজি সালে ১৮৮৩ বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের করটিয়া থেকে মৌলভি নঈমুদ্দিন ( ইংরেজি সাল ১৮৩২-১৯০৮) আকবারে ইসলামিয়া নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, আর এ পত্রিকার মাধ্যমে সমাজের কুসংস্কার দূর ও আল-কোরআনের অনুবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। তার অনূদিত কোরআন শরীফের ১০ পারা পর্যন্ত অনুবাদ সমাপ্ত করে তিনি ১৯০৮ সালের ২৩ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন । আকবারে ইসলামিয়া ইংরেজি সাল ১৮৮৩ সাল ১৮৯৩ পর্যন্ত চলছিল। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সম্পাদক শেখ আবদুর রহীম ( ইংরেজি সাল ১৮৫৯-১৮৩১) তৎকালে টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত আকবারে ইসলামিয়া ও মৌলভি নঈমুদ্দিনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।প্রাচীন তথ্যে বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক ডিন ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান। তার অভিসন্দভের্র বিষয় ছিল ‘বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চা’ এ গ্রন্থে তার গবেষণালব্ধ তথ্যে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলা ভাষায় কোরআন অনুবাদের পথিকৃৎ বসুনিয়া’ বাক্যটি থেকেই অনুমিত হয় যে তিনিও তার প্রাপ্ত তথ্যে মাওলানা আমীরউদ্দিন বসুনিয়ার প্রথম বঙ্গানুবাদের তথ্য পেয়েছেন।’

শোনা যায় মাওলানা আমিরুদ্দীন বসুনিয়া থেকে গিরিশচন্দ্র সেন পর্যন্ত অর্থাৎ ইংরেজি সাল ১৮০৮ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে আরো ৯ /১০ জন ব্যক্তি পবিত্র গ্রন্থ কোরআন অনুবাদ করেছেন। কিন্তু প্রাচীন তথ্যে তাদের নাম তেমন খুঁজে পায় যায়নি। টাঙ্গাইল জেলার মৌলভী আবুল ফজল আবদুল করিমও সম্পূর্ণ কোরআনের অনুবাদ করেছিলেন। আবদুল করিমের অনুবাদে মূল আরবীও আছে। ইনি প্রথমে হাইস্কুলের হেড মৌলভী ছিলেন, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ফারসী ছাপার প্রুফ রিডার হন।

পবিত্র কোরান বাংলায় অনুবাদ নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্য থেকে আরো যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে , ডা. সূফী ময়েজ উদ্দীন আহম্মদ (মধুমিয়া), ১৮৫৫-১৯৩০। বাংলায় অনুবাদ তাফসীরে হক্কানী। ১ম খণ্ড অনুবাদক, ১৯০১ ইংরেজি সন । ৬০ পৃ।

এশিয়া মহাদেশী পবিত্র কোরানের অঞ্চলে বাংলায় অনুবাদ বিষয় করাচি , লাখনৌ , দিল্লির সংস্কৃতি ও ভাষা তত্ব গবেষণাগারে রাখা দলিলে দেখা যায় , যিনি পূর্ণাঙ্গ কোরআন শরীফ অনুবাদ করেন তিনি হলেন রংপুরের খান বাহাদুর তসলিম উদ্দীন আহাম্মদ ( ইংরেজি সাল ১৮৫২-১৯২৭ )। তিনি বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ী প্রাইমারি স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য রংপুরে এসে উপনীত হন। রংপুর ছিল তখন হিংস্র শ্বাপদসংকুল বিজন বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ জনপদ। তিনি ছিলেন রংপুর জেলা স্কুলের কৃতী ছাত্র ও রংপুরের প্রথম মুসলিম গ্রাজুয়েট (১৮৭৭ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন)। খান বাহাদুর তসলিম উদ্দীনকৃত এই মহাগ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ তরজমা ১৮৯১ ইংরেজি সাল থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২২ বছর ব্যাপী তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। তসলীম উদ্দীনের পূর্ণাঙ্গ কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদের প্রকাশ কাল হলো ইংরেজি ১৯২৩ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত। অবশ্য আব্বাস আলীর পরে হলেও খান বাহাদূর তসলিম উদ্দীন (১৮৫২-১৯২৭ ইংরেজি সাল ) তাঁর সমসাময়িক অনুবাদদের এবং সম্ভবত এ যাবৎ প্রকাশিত কোরআনের উল্লেখযোগ্য অনুবাদকের অন্যতম।

(লেখাটি পূনরায় সংযুক্তি সহ প্রকাশিত )
প্রথম প্রকাশ ২০০৮ সালে , লেখক – এমজেড ফয়সল , সম্পাদক , দ্য ঢাকা পেইজ।
লেখক – এমজেড ফয়সল , সম্পাদক ইউএসবি নিউজ , যুক্তরাষ্ট্র