আ.লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের দিনব্যাপি কর্মসূচি

প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২২

মোঃ সাহিদুল ইসলাম শাহীন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

সংগ্রাম, উন্নয়ন ও অর্জনের গৌরবদীপ্ত পথ চলায় দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের আজ ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ উপলক্ষে দেশ ব্যাপি দলটির পক্ষ থেকে নানামূখি কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

তারই ধারাবাহিতায় যশোর জেলার শার্শা উপজেলা শাখা আ.লীগ এর আয়োজনে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলণ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ,র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সকল কর্মসূচির উদ্বোধনী মহড়ায় নেতৃত্ব দেন ৮৫,যশোর শার্শা-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার(২৩ জুন) সকাল ১০টায় এমপি শেখ আফিল উদ্দিন শার্শা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু’র ম্যুরালে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। সেখান থেকে তিনি বেলা ১১টার দিকে বেনাপোল স্থল বন্দরে যান। সেখানে কর্মরত হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ৯২৫ ও ৮৯১ এর সকল শ্রমিকদের বুস্টার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন টিকা প্রদান কর্মসূচি’র উদ্বোধণ ঘোষণা করেন।

বন্দর অভ্যান্তরে এই টিকা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু আহম্মেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশন তার মধ্যে অন্যতম। প্রতিটি শ্রমিককে আগেও যেমন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি ভাবে বুষ্টার ডোজ সম্পন্ন করা হবে।
দিনব্যাপী সকল আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান- বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার,শার্শা উপজেলা শাখা,আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, প্রচার সম্পাদক- সৈয়দ ওহিদুল হক পুটু, বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. কামাল হোসেন ভূঁইয়া, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি- এনামুল হক মুকুল, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, নাসির উদ্দিন, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন উজ্জল, শার্শা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি- অহিদুজ্জামান অহিদ, সাধারণ সম্পাদক- সোহরাব হোসেন, বেনাপোল পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক আহাদুজ্জামান বকুল, যুগ্ন-আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, যশোর জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সালমা আলম, ১নং ইউনিয়ান পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, ৩নং ইউনিয়ান পরিষদের নিউজ মফিজুর রহমান, ১০নং শার্শা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান- কবির উদ্দিন আহম্মেদ তোতা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, ইলিয়াচ কবির বকুল, আয়নাল হক, আবুল কালাম আজাদ, হাসান ফিরোজ টিংকু, মাস্টার হাদিউজ্জামান, বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, সাবেক শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন রাসেল, সাবেক বেনাপোল পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, এমপি’র পার্সোনাল এসিসটেন্ট-আসাদুজ্জামান আসাদ সহ আ.লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেতৃবৃন্দ।

এরপর বিকাল ৩ টায় বেনাপোল ঐতিহ্যবাহী বলফিল্ড মাঠে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় যোগ দেন সংসদ শেখ আফিল উদ্দিন।
৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী’র শুভক্ষণে বলেন, “আওয়ামীলীগকে আবার ক্ষমতায় রাখতে না পারলে দেশ পিছিয়ে পড়বে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী নির্বাচনে আবার নির্বাচিত করা দরকার। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু নির্মাণ সহ দেশে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই সম্ভব হয়েছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে এমপি বলেন, কেউ কেউ বলে, বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, উন্নয়ন হয়নি। আসলে তাদের চোখে দেশের কোনো উন্নয়ন ধরা পড়ে না। অথচ তাদের আমলে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছিল। দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে জেএমবি’র বোমা বিস্ফোরণ সহ সন্ত্রাসী তৎপরতা তাদের আমলেই সংঘটিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের দমন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছে। দলকে সুসংঘঠিত এবং শক্তিশালী করতে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।

অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ পতাকা সম্বলিত ৭৩ পাউন্ডের একটি দৃষ্টিনন্দন বিশাল কেক কাটা হয়। প্রধান অতিথি শেখ আফিল উদ্দিন উপস্থিত নেতা-কর্মিদের মাঝে কেক বিতরণ করেন। সিলেটে বণ্যার্তদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী দলটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তৎসময়ে বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ হুমায়ুন আহম্মেদ এর রোজ গার্ডেনের বাড়িতে আওয়ামী রাজনীতিবীদগণের প্রথম সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা সেদিন রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন।

ঠিক ঐ সন্মেলনেই উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ’ এর পরিবর্তে “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ নাম করণ করা হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর পরের বছর দলের পক্ষ থেকে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।

১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে আওয়ামী মুসলীম লীগ।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দলটির নাম পুণরায় পরিবর্তন করে নাম দেওয়া হয় ” বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ”।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পরাজিত হয়।

পরবর্তীতে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে। এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে সরকারের মসনদে বসে দেশ পরিচালনা করে আসছে।