কবির সাহেবের করোনা ও ঈদকথন

প্রকাশিত: ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২৪, ২০২০

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরও কবির সাহেব করোনাকে সমাজমুক্ত না করাইতে পেরে যারপরনাই বিরক্ত। অাগে কখনো রোজা তেমন না রাখলেও এবার সে রোজা ত সবগুলো রেখেছেই, এমনকি মসজিদে যেয়ে যেয়ে তারাবি পড়েছে, এলাকায় এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছে, গরীবদের সাহায্যের জন্য ফঁাকা ফঁাকা লাইনে দাড় করিয়ে অসংখ্য মানুষকে দিয়েছেন যাকাতের কাপড়! নিজে শপিং করেছেন কবির সাহেব! এত দুর্নীতিপরায়ন এই সমাজে তিনি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেননি, নিজেই সব কাজে সংশ্লিষ্ট থেকেছেন। কালো টাকাগুলো সব সাদা বানিয়ে ফেললেও ছেঁচড়া করোনা কিনা শেষমেশ তাকেই ধরলো! এটা কেমন কথা ভাই! সমাজ বিচ্ছিন্ন একটা মানুষ থেকে মানবসেবা করতে করতে পুরোপুরি সামাজিক হয়ে যাওয়া কবির সাহেব বিশ্বাসই করতে পারছেন কেন তার করোনা হলো!

যাইহোক, সরকারী চাকরি করে কোটিপতি হলেও কবির সাহেবের সরকারী সেবা নিতে বেশ অনীহা। কখনো এই সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় পা না দেয়া কবির সাহেব এখন বারান্দায় একটা সিট পাওয়ার জন্য মন্ত্রী পর্যন্ত লাইন লাগাচ্ছে।

কি অাজব বিচার প্রকৃতির! সারাজীবন যখন তার সামাজিক থাকা উচিত ছিল, তখন সে ছিল অসামাজিক! অার এখন যখন সময় হলো অসামাজিক হয়ে থাকার তখন তার কালো টাকার অাত্মকথন তাকে সামাজিকতার বড়ি খাওয়াইয়ে রাস্তায় নামাইয়া দিল! অথচ সামাজিক দূরত্বই ছিল তারজন্য উত্তম। ধর্মকে সারাজীবন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো কবির সাহেব অাগেও ধর্মকে বুঝেনি, এখনও বুঝেনি। কবির সাহেবের দোষ দিয়ে লাভ কি! মৌলভীদেরও বড় একটা অংশ বুঝে না

প্রকৃতি সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ টা কিন্তু এখনো নেইনি! অাপনি ভাবছেন, করোনা হয়ে গেছে কবির সাহেবের! অার কি বাকী অাছে!

হাসপাতালের বারান্দা কিন্তু কবির সাহেব পেয়ে গেছেন। অাত্মীয় স্বজন কাউকে অাসতে দেয়নি। একটু ভয়ে ভয়ে কবির সাহেব এদিক ওদিক চায়। হঠাৎ করেই পাশের বেডের এক বৃদ্ধ লোক সালাম দিয়ে বসলো কবির সাহেবকে! বললেন স্যার চিনতে পারছেন অামাকে! কবির সাহেব সুন্দরভাবে সালামের উত্তর নিয়ে অবাক হয়ে বললেন না তো! লোকটি বললেন স্যার বস্তা দেওয়ার সময় যে অামার সাথে ছবি তুললেন! স্যার মনে নেই!

অাকাশ থেকে পড়লেন কবির সাহেব! বুঝতে পারলেন প্রকৃতি প্রতিশোধ টা কোন জায়গায় নিয়ে নিয়েছে। ক্যামেরায় যাতে মুখটা অাসে তাই মাস্ক থাকা সত্তেও কবির সাহেব বৃদ্ধ লোকটিকে ত্রাণ দেওয়ার সময় মাস্ক থুতনির নিচে গুজিয়ে দিয়েছেন অার ওদিকে বস্তার ভার বিবেচনা করে গরীবের তেনা মাস্ক পড়া চাচা দিলেন অট্টহাসি! বাস পারস্পারিক ত্রাণ বিনিময় ওখানেই শেষ! দুজনকে একই কাতারে নিয়ে করোনা এখন অারও গভীর পরিকল্পনা নিয়ে অাগাচ্ছে। সামনে ঈদ। সামাজিকভাবে কিভাবে ঈদ পালন করে করোনামুক্ত থাকা যায় তার সুন্দর সুন্দর সব পরামর্শ নিয়ে শয়তান মশাই জেলখানা থেকে বের হচ্ছে চানরাতে!

তো ভাই বোনেরা সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন, অসামাজিকতার এই সময়ে সামাজিক হয়ে নিজে যে একটা পাডা তা প্রমাণ করার জন্য গলায় গলায় লেগে থাকুন। অাল্লাহ হাফেজ।

-ডাঃ অাখতার হোসেন চঞ্চল