তালায় সরকারি খাদ্য সহায়তা কার্ড কেড়ে নেওয়া সরদার জাকির এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২১

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:-
তালায় সদরের বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনের নির্দেশে হতদরিদ্রের খাদ্য সহায়তা নয়টা ওয়ার্ড এর ১৫০০ কার্ড জোর পূর্বক কেড়ে নেওয়া তার নিজ কর্মীগন এবং গ্রামপুলিশে বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা প্রকল্পের প্রায় এক হাজার পাঁচ শত বেশি পরিবারের চাউল সুকৌশলে আত্মসাৎ করার চেষ্টায় চাউলের কার্ড হাতিয়ে নিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছেন সরদার জাকির হোসেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর জেলা- উপজেলা , জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা,ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তালা সদর ইউনিয়নের জনগণের ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম।

সরকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর তালা উপজেলা সূত্রে জানা গেছে তালা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনের নেতৃত্বে তালা সদর ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ড থেকে ১৫০০ শত এর মতো “শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ক্ষুদা হবে নিরুদ্দেশ” এর আওতার কার্ড জোরপূর্বক কেড়ে নিয়েছেন বলে তাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। উক্ত অভিযোগে ভিত্তিতে তালা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত ইউএনও (এ্যাসিল্যান্ড) জনাব তারেক সুলতান বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। এবং ঘটনায় সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন ও তালা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওবায়দুল হক এবং তালা উপজেলা সমবায় অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম। তদন্ত কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

সরকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে,”শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ”এই প্রতিশ্রুতি কে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশ ব্যাপী এই খাদ্য সহয়তা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পটি চালু করেন।এই প্রকল্পের আওয়াতায় অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরনের জন্য উপজেলার ইউএনও খাদ্য অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং বলা আছে স্থানীয় সরকার যেন সহায়তা প্রদান করেন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য। সুতরাং চাউল কে পাবে আর না পাবে এটি নিশ্চিত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান কেউ না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ভোট চুরি ও ভোটারদের জিম্মি করে চেয়ারম্যান হয়েছেন সরদার জাকির। চেয়ারম্যান হয়ে এই নির্বাচনে যে বা যাহার তার সর্মাথক ছিলেন না তাদের কাছ হতে সরকারী খাদ্য সহয়তার কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, তালা সদরের বিতর্কিত নির্বাচনের চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন এর আপন ভাই হলো এই চাউল প্রদানের ডিলার। কার্ড গুলো ব্যবহার করে নিজেরা টিপ স্বাক্ষর দিয়ে অবৈধ ভাবে চাউল উত্তালন করে আত্মসাৎ করে নেওয়া সহ অসহায় সাধারণ মানুষের হক হতে বঞ্চিত করার চিন্তাভাবনা করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে তালা সদরের ৭ নং ওয়ার্ডের সরকারি খাদ্য সহায়তা প্রদান প্রকল্পে ২১৪ টি পরিবারের দশ টাকার মূল্যের চাউলের কার্ড ছিলো কিন্তু বর্তমানে তার মধ্যে ১৮২ টি কার্ড নিয়ে নিয়েছে সরদার জাকির হোসেনের লোকজন ও গ্রামপুলিশ। ইউনিয়ন জুড়ে প্রায় ১৫০০ মত পরিবারের খাদ্য সহায়তা পাওয়ার কার্ড কেড়ে নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
জনস্বার্থে অভিযোগকারী তালা সদর ইউনিয়নের জনগণের চেয়ারম্যান ও তালা সদরের সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম জানান, তালা সদর ইউনিয়নের বিতর্কিত নির্বাচনের চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন তার পক্ষে কাজ না করলে তাদের কোন সরকারী সহায়তা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পাবে না বলে সকলের কাজ থেকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে কেড়ে নিয়েছেন। আর এখানে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলেন, প্রকৃত হতদরিদ্ররা সহয়তা পাওয়ার হকদার এবং তারা পাবে সরকারী সকল সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া তিনি সকল অসহায় মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া কার্ড গুলো ফেরৎ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন ও তার আগ পর্যন্ত চাউল প্রদানের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে সরদার জাকির হোসেন এর সাথে কথা বলতে তালা সদর ইউনিয়েন পরিষদের গিয়ে তাকে পাওয়া যাইনি ।মোবাইল ফোন মারফত যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে তার দ্বারা সংঘটিত সাম্প্রতিক নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কারণে আইনের চোখ ফাকী দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোপাল চন্দ্র দাশ ঘটনায় সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন এছাড়া কয়েক জন মোবাইল ফোন মারফত জানিয়েছেন তালা সদরের চেয়ারম্যান এর পক্ষ থেকে ১০ টাকা চাউল এর কার্ড কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে। লিখিত অভিযোগে ভিত্তিতে তালা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত ইউএনও (এ্যাসিল্যান্ড) তারেক সুলতান ইতিমধ্যে তিনি সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।এখন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে বলে তিনি জানান। তদন্ত শেষে এই বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আরো জানান তাদের অফিসের তালা সদর ইউপি থেকে কিছু সংখ্যক কার্ড জমা দেওয়া হয়েছে এই কার্ড গুলোর সকল কলম/ ঘর খালি না থাকায় তাদের নামে অফিসের তালিকা অনুযায়ী কোন রুপ নাম পরিবর্তনে নতুন কার্ড নবায়ন করা হচ্ছে। আর কেড়ে নেওয়া যে কার্ড গুলো অভিযুক্ত ব্যক্তির নিকট আছে সে গুলো তারা ফেরৎ কি ভাবে দিবে জানিনা । তবে তাদের ফেরৎ দিতে হবে।

এলাকায় সাধারণ মানুষ তার কার্ড ফেরৎ পাওয়ার আহ্বান করে তাদের কার্ড ফেরৎ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই চাউল প্রদান বন্ধ করে রাখার জন্য ইউএনও তালা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর এবং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।