বেনাপোল পৌরসভার স্যানেটারী ইন্সপেক্টর রাশিদা’র বিরুদ্ধে, কোয়ারেন্টাইন সিট বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০২১
জাহিদ হাসান| স্টাফ রিপোর্টার|
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন পাসপোর্ট যাত্রী। আর এসব যাত্রীদের সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার (৪ই মে) বেনাপোলের লিষ্ট ভুক্ত ১৩টি আবাসিক হোটেল এখন কোয়ারান্টাইন সেন্টার করে রাখা হয়েছে ৩৫৫ জন পাসপোর্ট যাত্রী। আর এসব যাত্রীদের বেশিরভাগ চিকিৎসা ফেরত অসহায় যাত্রীরা পড়েছেন হোটেল কোয়ারেন্টাইন সিট বাণিজ্যে।
আর এই হোটেল সিট বাণিজ্যের মূল হোতা পৌর সেনেটারী ইন্সপেক্টর রাশিদা খাতুন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীর অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল চেকপোস্টস্থ ফ্রেস আবাসিক হোটেলে সামাজিক দুরাত্ব বজায় রেখে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্ট যাত্রীদের সাথে কথা হলে তারা সর্বপ্রথমে অভিযোগের তীর ছোড়েন ফ্রেস আবাসিক হোটেল মালিক আঃ কাদের এবং বেনাপোল পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টর রাশিদা খাতুনের উপর।
গত ৩০ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোয়ারান্টাইনে অবস্থান রত যাত্রীদের হোটেল ভাড়া ৫০% ভাড়া কম গ্রহনের জন্য আবাসিক হোটেল মালিকদের চিঠি প্রদান করেন। কিন্তু ৩ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন কার্যকর না করে সেখানে থাকা যাত্রীদের সিট বাণিজ্যে মেতেছেন পৌর সেনেটারী ইন্সপেক্টর রাসিদা খাতুন। এসময় কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীরা বলেন, এখানে আমরা কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা।
অথচ ছোট্ট একটা রুম নিয়ে প্রতিদিন হোটেল ভাড়া গুনতে হচ্ছে হাজার টাকা করে। এদিকে গত কোয়ারেন্টাইনে থাকা রাজশাহীর শামীম হোসেন জানান, আমরা এই হোটেলে যারা আছি তারা প্রত্যেকেই চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম।
বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরে এসে পোহাতে হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনের নামে মরার উপর খরার ঘাঁ। আবাসিক হোটেলে অধিক ভাড়া ও ব্যয় বহুল খরচের জীবনযাত্রা। তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রমের পর পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টর (রাশিদা খাতুন) অন্য হোটেলে অনেক বেশি ভাড়া এর চেয়ে ফ্রেশ আবাসিক হোটেলে কম ভাড়া বলে আমাদেরকে এখানে নিয়ে আসেন। এবং ভাড়ার বিষয়েও তিনিই হোটেল মালিকের সাথে ডিল করে নিজে সেখান থেকে সুবিধা ভোগ করেন বলে উপস্থিত কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২৩ জন যাত্রীরা অভিযোগ করেন। বরিশালের হেলাল উদ্দিন জানান, অমরা জানি প্রতিটি হোটেল থেকে খাবারের পানি দেওয়া হয় কিন্তু এই হোটেল থেকে আমাদেরকে খাবারের পানি দেওয়া হচ্ছে না।
আমাদের প্রত্যেকের দোকান থেকে পানি কিনে খেতে হয়। অথচ রুম হিসেবে ভাড়া নিচ্ছেন অনেক বেশি। এসময় অন্যান্য যাত্রীরা বলেন, গতকাল সোমবার দুপুর থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পানি দেয়নি। পানি ছাড়ার কথা বললে হোটেল মালিকের স্ত্রী উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমাদের হোটেল থেকে পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টরকে প্রতিদিন হাজার টাকা করে দিতে হয়। যাদের টাকা বাকি আছে তারা টাকা পরিশোধ না করলে পানি দেওয়া হবে না। অভিযোগের বিষয়ে জুয়েল হোটেলের মালিক জুয়েলের কাছে পৌর সেনেটারী ইন্সপেক্টর রাশিদার সিট বাণিজ্যের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান,আমার কাছে চা নাস্তার টাকা চেয়েছেন কিন্তু আমি দেইনি।
এবিষয়ে পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টর রাশেদা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার উপর আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এধরণের কাজে আমি সম্পৃক্ত নয়। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার আগে ফ্রেশ হোটেলে রুম প্রতি ভাড়া ছিল ৩ থেকে ৪শ টাকা। করোনার সময়ে ভারত থেকে নিজ দেশে ফিরে আসা কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাকে পুঁজি করে এধরনের হাজার টাকার বাণিজ্য করা ফ্রেশ হোটেলের মালিকের বিরুদ্ধে আইনুগত ব্যবস্থা গ্রহন করে, করোনা এই মহামারির মধ্যে বিপদে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) রাসনা শারমিন মিথি উক্ত হোটেলে এসে যাত্রীদের অভিযোগ শুনে ফ্রেশ হোটেলের মালিক আঃ কাদেরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সম্পর্কে অবগত করে, তিনি পূর্বের হোটেল ভাড়ার অর্ধেক ভাড়া নিতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে আগামীকাল বেলা ১১টার সময় ইমিগ্রেশনের দ্বিতীয় তলায় বেনাপোলের ১৩ টি আবাসিক হোটেল মালিকদের নিয়ে জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে।
উক্ত মিটিংয়ে সকল মালিকদের হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়।