ইতিহাস থেকে পল্লীবন্ধুর স্মৃতিচারণে এস এম নজরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১:৫৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২২


বি এম বাবলুর রহমান (তালা-সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:-

“‘ ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে”” এই প্রতিপাদ্য কে বুকে নিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লিবন্ধু হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এর ১৪ জুলাই তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রস্তুত সভায় স্মৃতিচারণে ইতিহাস তরুণ সমাজের কাছে তুলে ধরেন তালা উপজেলা জাপা সভাপতি সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম।

তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগামী ১৪ জুলাই সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রস্তুত সভায় তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম ১৯৮২-১৯৯০ নয় বছরে সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সরকারের সফলতার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন।

হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রবর্তিত ৪৬০টি উপজেলার ফলশ্রুতিতে প্রশাসনই শুধু গ্রামের মানুষের কাছে যায়নি- উন্নয়নের জিয়নকাঠি চলে গিয়েছিলো গ্রামে। জনগণের দোড় গোড়ায় বিচার ব্যবস্থা পৌঁছে গেছে।এরশাদ গ্রামে গ্রামে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, দালান-কোঠা নির্মানের ফলে ৬৮ হাজার গ্রাম লাভ করেছে শহরের আমেজ। এরশাদের পল্লী বিদ্যুতায়ন কর্মসূচী গ্রামকে করেছে বিদ্যুতায়িত। এরশাদ ২১টি জেলা ভেঙ্গে ৬৪টি জেলা করেছেন। বৃটিশ আমলের সেই মহকুমাগুলো এখন পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরিচিত হয়েছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করে প্রশাসনে জণপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।পল্লীবন্ধু এরশাদ ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদকাল ৩ বছর থেকে ৫ বছরে উন্নিত করেছেন।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় এরশাদ সরকারের অবদানঃ এরশাদ অসংখ্য রাস্তা, পুল, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করেছেন, যা এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকা করেছেন এবং ১,৫০০টি ছোট বড় সেতু নির্মাণ করেছেন।
এরশাদ মহানন্দা, ঘাঘট আর নাগর নদীতে সেতু নির্মাণ করেছেন। তিনি নির্মাণ করেছেন মেঘনা সেতু, কর্ণফুলী সেতু, বুড়িগঙ্গা সেতু, রামপুরা সেতু, টঙ্গী সেতু, টেকেরহাট সেতু, শম্ভুগঞ্জ সেতু, কামার খালী সেতু, বান্দরবনে সাংগু সেতু, পঞ্চগড় সেতু, সিলেটে শাহজালাল-লামা কাজী সেতুসহ অসংখ্য সেতু।
এরশাদ রাজধানীকে যানজট মুক্ত রাখার জন্য করেছেন রোকেয়া সরণী, প্রগতি সরণী, মুক্তি সরণী, বিজয় সরণী, পান্থপথ, জনপথ, নর্থ সাউথ রোড, সোনারগাঁ রোড, লিংক রোডসহ অসংখ্য রাস্তা। রাজধানিতে একমাত্র ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩টি বড় বাস স্ট্যান্ড তৈরী করেছেন। যেমন- সায়দাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী।এরশাদ ৬০০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯০ ফুট প্রশস্ত নগরবাড়ী-রংপুর এবং দিনাজপুর-পঞ্চগড় সড়ক নির্মাণ করেছেন।এরশাদ দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এর কাজ শুরুর পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।এরশাদ ৪টি ডিসি-১০ বিমান ক্রয় করে অত্যন্ত নাজুক অবস্থা থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিমানকে সম্প্রসারিত করেছেন। অভ্যন্তরীন বিমান ব্যবস্থায় ২টি এটিপি ক্রয় এরশাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
এরশাদ আন্তঃনগর ট্রেন ব্যবস্থা চালু করে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছন।এরশাদ ডিজিটাল সিষ্টেমসহ দেশে বিদেশে সরাসরি টেলিযোগাযোগে আধুনিকায়নের সূচনা করেছেন।

খাদ্য উৎপাদনে এরশাদ সরকারের অবদান :-
এরশাদের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার সময় খাদ্য উৎপাদনের পরিমান ছিলো ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টন। আর ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে খাদ্য উৎপাদন ছিলো ১ কোটি ৪২ লক্ষ টন। এরশাদ খাদ্য উৎপাদনে যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন এতে ১৯৯২ সনে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অর্জন করতো। এরশাদ আমলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত সারের পরিমান ছিলো ২২ লক্ষ ৬২ হাজার টন। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে এর পরিমান ছিলো মাত্র ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টন।

ধর্ম বিষয়ে এরশাদ সরকারের অবদান:-
এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষনা করে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরশাদ রেডিও-টিভিতে আজান প্রচারের পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এরশাদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের নব-রূপায়ন এবং সংষ্কার করেছেন। এরশাদ রাজধানীতে নতুন মসজিদ করেছেন ৬টি। গুলশানে হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) মসজিদ, গোলাপশাহ মসজিদ, নিউ মার্কেট মসজিদ, সাভার মসজিদ, পিডব্লিউডি মসজিদ এবং বেইলী রোড অফিসার্স কলোনী মসজিদ। এছাড়া কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংষ্কার করেছেন লালবাগ শাহী মসজিদ, বেগমবাজার মসজিদ, তারা মসজিদ, সাত গম্বুজ মসজিদ, ডিআইটি মসজিদ সহ সারা দেশের অসংখ্য মসজিদ।

* এরশাদ হাইকোর্টের সামনে পুকুর ভরাট করে তৈরী করেছেন প্রথম জাতীয় ঈদগাহ। এরশাদ হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে ঘাট তৈরী করেছেন। পানি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ বিশ্রাম কক্ষের জন্য সেড তৈরী করেছেন। এরশাদ সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা এবং বৌদ্ধ মঠের পানি ও বিদ্যুৎ বিল স্থায়ীভাবে মওকুফ করেছেন। এরশাদ জন্মাষ্টমীর দিন জাতীয় ছুটি ঘোষনা করেছেন।
এরশাদ গঠন করেছেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাষ্ট এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাষ্ট।

শিক্ষা ব্যবস্থায় এরশাদ সরকারের অবদান:- এরশাদ বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করেছেন। এরশাদ গ্রামের মেয়েদের জন্য অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। এরশাদ সারা দেশে শতাধিক কলেজ এবং দেড় শতাধিক স্কুল সরকারিকরণ করেছেন। এরশাদ খুলনা, সিলেট এবং কৃষ্টিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এরশাদ দিনাজপুরে হাজী দানেশের নামে একটি কৃষি কলেজ করেছেন তালা সাতক্ষীরায় তালা সরকারী কলেজ তালা হাইস্কুল,তালা গার্লস স্কুল কলারোয়া সরকারি কলেজ সহ সাতক্ষীরা জেলায় প্রতিটি উপজেলায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করেন। এরশাদ বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য সরকারি অনুদান ৩০ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে ৭০ ভাগ করেছেন।এরশাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন।এরশাদ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন। এরশাদ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং ছাত্র-শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য গাড়ি দান করেছেন।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এরশাদ সরকারের অবদানঃ
এরশাদ যুগান্তকারী ঔষধ নীতি প্রবর্তন করে শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা দেশের সচেতন মানুষের মোবারকবাদ পেয়েছেন। এরশাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধের কার্যকর পদক্ষেপ এবং অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পুরষ্কার “জাতিসংঘ জনসংখ্যা পুরষ্কার” লাভ করেন।
এরশাদ শেরেবাংলা নগরে হার্ট ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছেন।এরশাদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিলো ২৩,৮৭০টিতে উন্নিত করেন। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের সময় তা ছিলো ১৬,১৭১টি।
এরশাদ শ্রমিক শ্রেনীর মানুষের জন্য তৈরী করেছেন শ্রমজীবী হাসপাতাল।
এছাড়া সাতক্ষীরা-১ তালা- কলারোয়া আসনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনের উন্নয়ন এর রুপকার সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখ্ত কে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।